রোহিঙ্গা নির্যাতন গণহত্যার শামিল, বললেন ২ হাইকমিশনার
রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের মুখ থেকে মিয়ানমারের নির্যাতনের কাহিনী শুনেছেন তিনটি দেশের হাইকমিশনাররা। মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে এসব রোহিঙ্গা জীবন নিয়ে পালিয়ে এ দেশে চলে আসে। এদের সংখ্যা জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ৬০ হাজারের ওপরে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় কুতুবপালংয়ে সফরে যান ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জুলিয়া নিব্লেট ও কানাডার রাষ্ট্রদূত বিনো পিয়েরে লারামি। তারা সেখানে দুটি ক্যাম্পে প্রায় ৩০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের বক্তব্য শোনেন।
পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বলেন, ‘আমরা তাদের কাছ থেকে মর্মান্তিক সব ঘটনার বর্ণনা শুনেছি। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতন, হত্যা আর ধর্ষণের বর্ণনা দিয়েছে। এটা একেবারেই গণহত্যার শামিল।’
অ্যালিসন ব্লেক বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরাও তাদের সাহায্য করছি।’
অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জুলিয়া নিব্লেট বলেন, ‘শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে যে বর্ণনা আমরা পেয়েছি, তা ভয়াবহ। তারা খুবই করুণ জীবন-যাপন করছে। অস্ট্রেলীয় সরকার তাদের সহযোগিতা করতে বদ্ধপরিকর।’
কানাডার হাইকমিশনার বিনো পিয়েরে লারামি বলেন, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে ভালো কাজ করেছে। মানবাধিকার রক্ষায় এ সরকারের উদ্যোগ প্রশংসিত। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার রক্ষায় এখন সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
এ সময় তিন রাষ্ট্রদূত ক্যাম্প ঘুরে দেখেন। এর আগে তারা গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী আবদুর রহমান এ তিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপ করেন।
এদিকে বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, সকাল ১০টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছে তিন দেশের হাইকমিশনার প্রথমে একটি স্কুল পরিদর্শন করেন।
সেখানে শিশুদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলাপ করেন। এরপর তাঁরা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন আসা ৩০ জন নারী-পুরুষের সঙ্গে আলাপ করেন এবং তাদের ওপর নির্যাতনের তথ্য নেন। এরপর নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
ক্যাম্প ইনচার্জ শামশুদ্দোজা জানান, প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন বিষয়ে তারা জানতে চান। পরে তিন দেশের রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখেন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন।
ক্যাম্প ইনচার্জ আরো জানান, বিদেশি তিন হাইকমিশনারের কাছে রোহিঙ্গারা সে দেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা অত্যন্ত নির্মম ও মর্মস্পর্শী।
কুতুপালং ক্যাম্প পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বলেন, হাইকমিশনাররা নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্যানিটেশন, সুপেয় পানি সরবরাহ, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ ক্যাম্পে উন্নয়নমূলক কাজে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততা প্রত্যক্ষ করেছেন।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) চাইলা প্রু মারমা, ক্যাম্প ইনচার্জ মো. শামশুদ্দোজা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশনের তিন সদস্য কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা খতিয়ে দেখতে এবং সমাধানের জন্য জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে এই কমিশন হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নয় সদস্যের এই কমিশন গঠিত হয়।
কক্সবাজারে আনান কমিশনের সদস্যরা উখিয়ার বালুখালী পাহাড়ে গড়ে তোলা এবং টেকনাফের লেদা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৪০ জন নারী, ১৮ জন শিশু ও ১২ জন পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন।
গত বছরের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা হয়। এতে মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশের ১২ সদস্য নিহত হন।
এই হামলার পর পরই রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চালায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। নির্যাতনে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
আনান কমিশনের একদিন পরই টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন