রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে যেভাবে মিথ্যাচার করেন সুচি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচিকে এক কাতারে ফেলতে চাইবেন না অনেকেই।
কিন্তু রোহিঙ্গা নির্যাতনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বিবিসির সংবাদদাতা জোনাহ ফিশার যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন, তাতে তার মনে হয়েছে, দু’জনের মধ্যে আসলে অনেক মিল। সেই অভিজ্ঞতার কথাই লিখেছেন জোনা ফিশার।
ফিশার লিখেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প আর অং সান সুচি- দু’জনেরই বয়স ৭০-এর বেশি। দু’জনের মাথার চুল নিয়েই বেশ আলোচনা হয় এবং দু’জনেই সাংবাদিকদের প্রচণ্ড অপছন্দ করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অশান্ত সম্পর্ক খুবই আলোচিত। কিন্তু অং সান সুচির সঙ্গে গণমাধ্যমের সম্পর্ক যে অনেকটা একই রকম সেটা জানলে অবাক হবেন অনেকে।
অং সান সুচি কখনই মিয়ানমারের গণমাধ্যমে কোনো সাক্ষাৎকার দেন না। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কথা বলেন বেছে বেছে। ১৪ মাস আগে নির্বাচনের সময়ের সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনের পর আর কোনো সত্যিকারের সংবাদ সম্মেলনে তাকে দেখা যায়নি।
আর এর পাশাপাশি সরকারি প্রপাগান্ডা তো রয়েছেই। প্রায় প্রতিদিনই মিয়ানমারের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্রে ছাপা হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে আক্রমণ করে লেখা নিবন্ধ। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরার কারণেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই হামলার লক্ষ্যবস্তু।
সাক্ষাৎকারের বিফল চেষ্টা: ফিশার লিখেছেন, গত সপ্তাহে বিবিসিকে যখন রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা কবলিত এলাকায় যাওয়ার অনুমতি দেয়া হল, সেটা ছিল বেশ অবাক করা ব্যাপার। আমরা তাড়াতাড়ি বিমানে উঠে গেলাম রাখাইনের রাজধানী সিত্তুতে। সেখান থেকে আমরা একটা ফেরিতে চড়ে মায়ু নদী ধরে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রওনা হলাম। চার ঘণ্টা পর আমরা বুথিডংয়ে পৌঁছালাম।
সেখান থেকে সংঘাত কবলিত এলাকাগুলো আর মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ সেখানেও হাজির। আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়াল পুলিশ আর নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের একটি দল। আমাদেরকে স্থানীয় টাউনশিপের অফিসে নিয়ে যেতে চায় তারা। টাউনশিপ অফিসে নিয়ে আমাদের জানানো হল, রাখাইন রাজ্যে আমাদের সফর বাতিল করা হয়েছে।
আমরা যে রাখাইনে যাচ্ছি সেই খবর রাজধানীতে অং সান সুচির সরকারের কানে পৌঁছে গেছে। সেখান থেকে নির্দেশ এসেছে আমাদের থামানোর। ফিশার লিখেছেন, অং সান সুচি আর তার মুখপাত্র এ পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলতে ক্রমাগত আমাদের সব আবেদন খারিজ করেছে।
রোহিঙ্গা নিপীড়নের খবরে সুচি এবং তার কর্মকর্তারা যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন তা কিন্তু হুবহু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মিলে যায়। রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন-নিপীড়নের ব্যাপক তথ্য-প্রমাণ রয়েছে সেটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের লোকজনের কৌশলই বেছে নিয়েছে।
গণমাধ্যমে একবার-দু’বার হয়তো ভুল বা মিথ্যা তথ্য প্রচার হয়েছে, সেগুলোকেই তারা ফলাও করে দেখাচ্ছে। সিএনএন বা গার্ডিয়ানে যখন বাংলাদেশের পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে, তখন সেটিকে খুবই স্থূল কায়দায় নাকচ করা হচ্ছে।
এজন্য মিয়ানমার সরকারের একটা ধরাবাঁধা ফর্মুলা আছে। রোহিঙ্গাদের যেসব গ্রাম সম্পর্কে এই প্রতিবেদন বেরুচ্ছে সেখানে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের পাঠানো হচ্ছে। পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতিবেশী আর পরিবারের সদস্যদের ধরে বেঁধে এনে তাদের একটি বিবৃতিতে সই করতে বাধ্য করা হচ্ছে যেখানে তারা প্রচারিত প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
সুচি সেসব মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করেন, তার অধীনে কাজ করেন যেসব কর্মকর্তা, তারা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের খবরকে প্রতিদিন বানোয়াট বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন