চাঁদাবাজি করতে গিয়ে র্যাবের ফাঁদে ধরা পড়েছেন ১০ জন
ঢাকার ওয়ারীর রাজধানী সুপার মার্কেটে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে র্যাবের ফাঁদে ধরা পড়েছেন ১০ জন। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়ার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। দণ্ডপ্রাপ্তদের সবাই যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন_ সানাউল করিম, আবদুল হক, এনায়েত হোসেন বাবু, কামাল উদ্দিন, মো. আরিফ, আহসানুল্লাহ, জহিরুল ইসলাম জহির, আলী হোসেন মন্টু, সাদাফ শাহরিয়ার হাসান ও ফারুক হোসেন বাবু।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে জহিরুল সরকারি কবি নজরুল ইসলাম কলেজের ছাত্রলীগের সহসভাপতি। সানাউল করিম ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও কবি নজরুল কলেজের ছাত্র। আলী হোসেন মন্টু, সাদাফ শাহরিয়ার ও ফারুক হোসেন যুবলীগ কর্মী। কামাল উদ্দিন, আবদুল হক স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী। আরিফ হোসেন ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুর দূরসম্পর্কের শ্যালক। ওই মার্কেটে তার চশমার দোকান রয়েছে। র্যাব জানায়_ দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে চাঁদাবাজদের সহায়তাকারী কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ীও রয়েছেন। তাদের অনেকে রাজধানী সুপার মার্কেটের কমিটিতে আছেন।
বুধবার রাতে ওই মার্কেটে র্যাবের অভিযান চলাকালে যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুর লোকজন বাধা দেন। এক পর্যায়ে তারা র্যাবের টিমের ওপর হামলা চালায়। ঘটনাস্থল থেকে যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম রেজাকে বুধবার রাতে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রায় ২০ ঘণ্টা আটক রাখার পর গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে রাজনৈতিক চাপে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ঈদ ঘিরে প্রায় প্রতিবছর রাজধানীতে ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে চাঁদাবাজি চলে। এবারের চিত্রও প্রায় অভিন্ন। দীর্ঘদিন ধরেই সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রের কাছে জিম্মি রাজধানী সুপার মার্কেটের দশ হাজার দোকান মালিক ও কর্মচারী। ঈদ উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা তোলার হার বাড়তে থাকে। মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, রাজধানী সুপার মার্কেটকেন্দ্রিক চাঁদাবাজিতে সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা সম্পৃক্ত। প্রতি মাসে ওই মার্কেট থেকে ৪০ লাখ টাকার বেশি চাঁদা তোলা হয়। অতিষ্ঠ হয়ে ব্যবসায়ীরা র্যাব-১০-এর অভিযোগ বাক্সে প্রতিকার চেয়ে সপ্তাহখানেক আগে চিঠি দেন।
প্রথমে সাড়া না পেয়ে ব্যবসায়ীরা র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোনে জানান, ‘স্যার হয় চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন, নইলে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হব।’ এমন ঘটনার পর র্যাবের গোয়েন্দা দল ছদ্মবেশে চাঁ?দাবাজদের ধরতে ছক তৈরি করে। ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সেজে গত বুধবার রাতে র্যাব সদস্যরা সাদা পোশাকে রাজধানী সুপার মার্কেটে অবস্থান নেন। রাত ১১টার দিকে চাঁদাবাজ চক্র ওই মার্কেটে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করে। সাদা পোশাকে র্যাব সদস্যরা মার্কেটে অবস্থান করছেন_ এমন তথ্য আগে থেকে ব্যবসায়ীদের জানা থাকায় তারা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান।
এরপরই চাঁদাবাজরা রাজধানী সুপার মার্কেটে ভাংচুর ও কয়েকজন ব্যবসায়ীকে মারধর করে। এমন সময় ছদ্মবেশে থাকা র্যাব সদস্যরা চার চাঁদাবাজকে হাতেনাতে আটক করেন। পরে আরও কয়েকজন চাঁদাবাজকে আটক করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ১০ চাঁদাবাজকে বিভিন্ন মেয়াদে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাজধানী সুপার মার্কেটের স্বঘোষিত সভাপতি ময়নুল হক মঞ্জুর লোকজন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলে আসছিলেন। বুধবার রাতে ছদ্মবেশে থাকা র্যাব সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে চাঁদাবাজরা অভিযানকারীদের ওপর হামলা চালায়।
র্যাব-১০-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, ওই মার্কেট ঘিরে চাঁদাবাজির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পরে কৌশলে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালত পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার আলম জানান, এই চক্রটি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও তাদের অনুসারী পরিচয়ে প্রতিদিন রাজধানী সুপার মার্কেট থেকে চাঁদা আদায় করে। কয়েকদিন আগে তারা ঈদ উপলক্ষে বাড়তি চাঁদা দাবি করে। ব্যবসার ধরন অনুযায়ী তারা কারও কাছে ১০ হাজার, কারও কাছে ২০ হাজার বা তার বেশি চাঁদা চায়। এতে আপত্তি করেন ব্যবসায়ীরা।
চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা তিনটি দোকানে ভাংচুরও করে। খবর পেয়ে র্যাব-১০-এর ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে অভিযান চালান। চাঁদাবাজদের আটকের পর আটজনকে তিন মাস ও দু’জনকে দেড় মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাদের কাছ থেকে চাঁদার এক লাখ ৬০ হাজার ৬৯৫ টাকা উদ্ধার করা হয়। ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু তার বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাবে রাতে বলেন, ‘বিএনপির আমলে যে হারে দুই হাজার দোকান থেকে চাঁদা তোলা হতো আমার লোকজন এক টাকাও বাড়ায়নি। এ টাকা নিরাপত্তারক্ষী ও জেনারেটরে জ্বালানি বাবদ খরচ করা হয়। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা র্যাবের কাছে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন; তারা সাবেক মার্কেট কমিটির সভাপতি বাবুলের লোকজন।
বাবুল ও তার আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে মার্কেটে পাঁচশ’ দোকান রয়েছে। আমি মাত্র দুটি দোকানের মালিক। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট এই মার্কেটের দোকান ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছে। মার্কেট ঘিরে বহুতল ভবন নির্মাণে কোটি কোটি টাকা আমাকে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে সেটাতে রাজি হইনি। দেশে টাকা দিলে বাঘের দুধ মিলে। চাঁদাবাজির তথ্য নিতে র্যাব আমাকে একবারও ডাকেনি। তারা অন্যদের কথা শুনেছে।’ এ ব্যাপারে যুবলীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘ওই মার্কেটে আমার একটি দোকান আছে। তবে মার্কেটকেন্দ্রিক চাঁদাবাজির সঙ্গে আমি জড়িত নই। র্যাব চাঁদাবাজির ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। চাঁদাবাজির রাজনীতি বিশ্বাস করি না। কোনো ধরনের ঝামেলায় থাকতে চাই না_ এটা তাদের বলেছি।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন