লক্কড়ঝক্কড় বাস চলছে দাপটে
পল্টন মোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন রবিউল ইসলাম। পর পর তিনটি বাস দাঁড়ালেও তাতে ওঠেননি তিনি। কাছে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে তার গন্তব্য জানতে চাই। তিনি যাবেন ফার্মগেট। আগের গাড়িগুলোতে ওঠেননি, কারণ রং-ওঠা থেবড়ানো গাড়িগুলোতে তার চলার অভিজ্ঞতা ভালো নয়। ভেতরে দুর্গন্ধ, তেলতেলে আসন, ভাঙাচোরা কাঠামোর ঝনঝন শব্দ হয় সারাক্ষণ।
বাসে চড়ে এমন বিড়ম্বনায় পড়ার অভিজ্ঞতা রাজধানীর বাসযাত্রীদের প্রায় সবার। তবু চড়তে হয়। রাজধানীতে চলাচল করা অনেক গাড়িই যে বেহাল। ট্রাফিক পুলিশের ভাষায় এগুলোকে বলে ‘ফিটনেসহীন গাড়ি’।
অথচ রাজধানীতে কোনো ভাঙাচোরা গাড়ি চলবে না, বাসের আসন হতে হবে যাত্রীবান্ধব ও আরামদায়ক- এমন ঘোষণা দিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। মাঝে মাঝে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন, কিন্তু বহু পরিবহনে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি চোখে পড়ে না। অতিরিক্ত আসন, নোংরা, দুর্গন্ধময় পরিবেশের কারণে যাত্রার পুরো সময়টাই যাত্রীদের কাটে দুঃসহ।
রাজধানীতে ফিটনেসবিহীন কিংবা লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি নিষিদ্ধ হলেও এগুলো গণপরিবহনের অংশ হয়ে দাপটে চলাচল করছে। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্টদের সামনে দিয়ে চলছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা তো বললেনই, গণপরিবহন সেবামূলক, তাই তারা কিছু ছাড় দেন।
তাই যাত্রীরাও এই সেবামূলক ‘গণপরিবহনে’ যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। আসলাম উদ্দিন নামের একজন যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রশাসনের এক ধরনের নির্বিকার অবস্থানের কারণে আমাদের এ অন্যায় (ফিটনেসবিহীন) মেনে নিতে হচ্ছে।’
প্রশাসনের নির্বিকারের পাশাপাশি চালক-মালিকদের বেপরোয়া মনোভাবও রাস্তায় ফিটনেসহীন ও লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি চলার বড় কারণ। চালকদের সঙ্গে কথা এমনটাই জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিডওয়ে পরিবহনের একজন চালক বলেন, ‘যেসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছে তার বেশির ভাগই ট্রাফিক প্রশাসনের সঙ্গে ‘লাইন’ (রফা) করা। তবে ধরা পড়ারও ঝুঁকি থাকে। ঝুঁকি নিয়েই মালিক গাড়ি চালাতে বলে। ‘লাইনের’ বাইরে কোনো সার্জেন্ট ধরলে মামলা দেয়, অনেক সময় ডাম্পিং-এ নেয়। কিন্তু মালিক বিআরটিএ থেকে কাগজ নিয়ে বের করে আনেন।’
মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ি থেকে গাবতলীগামী আট নম্বর বাসের দশটি গাড়ি পর্যবেক্ষণ করে ছয়টির অবস্থাই দেখা গেছে সঙ্গীন। দীপন পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব-১১-২০৯৯, সিটি বাসের ঢাকা মেট্রো-ব-১১-১৫৩৮, ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-০৫৩৫, মিডওয়ে পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-২১৪২ গাড়িগুলোর কোনোটির কাঠামো থেবড়ানো, চলটা চলটা রং ওঠা, জানালার কাঁচ ভাঙা, সামনে-পেছনে নির্দেশক বাতি নেই এমন আরো নানা সমস্যা।
শুধু এ গাড়িগুলোই নয়, রাজধানীতে চলা তুরাগ, বলাকা, নিউ ভিশন, সিটি বাস, তানজিল, সুপ্রভাতসহ প্রায় সব পরিবহনের বেশির ভাগ গাড়িই লক্কড়ঝক্কড়। কোনটির জানালা ভাঙা, কোনোটির পেছনের অংশের কাঁচ ভাঙা আবার কোনোটির সামনের কাঁচ চৌচিড় হয়ে আছে।
এমনকি অনেক নম্বরপ্লেটহীন গাড়িও চলছে গণপরিবহনের এই হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্যে।
ফিটনেসহীন গাড়ি রাজধানীতে কীভাবে চলছে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের একজন সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ফিটনেসহীন গাড়ির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান। অনেক সময় গাড়িগুলো আমরা ধরি। কিন্তু পরে বিআরটিএ সাময়িক ছাড়পত্র দিয়ে গাড়িগুলো ছাড়িয়ে নেয়। তার ওপর রাজধানীর গণপরিবহন হচ্ছে একটি সেবামূলক খাত, এ কারণে মানবিক কারণেও তাদের সাময়িক অনুমতি দেয়া হয়ে।’
বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনার পরও পুরনো ফিটনেসহীন বাসগুলো চলা বন্ধ হয়নি রাজধানীতে। বাসের চালকরা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে চালাচ্ছে এসব গাড়ি। গত বুধবার দুপুর থেকে মালিবাগ কমিউনিটি সেন্টারের কাছেই বিশ্বরোডে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম চলে। এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চালকদের মধ্যে। যাত্রাবাড়ী থেকে আসা গাড়িগুলো টিটিপাড়ার মোড়ে রুট পরিবর্তন করে অন্য পথে চলে যায়। তুরাগ পরিবহণের চালক সাইফুল ইসলামের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘গাড়িতে দোষ-ত্রুটির কোনো অভাব নেই। মোবাইল কোর্টের সামনে গেলেই দোষ আর দোষ। তাই ভিন্ন পথে চলতে হয়।’ অন্য রুটে চললে সার্জেন্টে ধরতে পারে- এই ঝুঁকি ভ্রাম্যমাণ আদালতের চেয়ে বড় মনে করে না তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মো. মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ‘ফিটনেসহীন গাড়ির বিরুদ্ধে আমাদের মোবাইল কোর্টের প্রভাব তো পুরো ঢাকা শহরেই পড়বে না। ৫০০ জনের মধ্যে দুজনের শাস্তি হচ্ছে, এতে তো আর সেরকম কোনো প্রভাব পড়বে না। এর জন্য মেইনলি দায়িত্ব পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের। তাদের তো বিশাল বাহিনী আছে।’
‘সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আইন যখন তৈরি করা হয়, সবাই মানবে অল্প লোক মানবে না এটা ধরেই তৈরি করা হয়’ উল্লেখ করে বিআরটিএর পরিচালক বলেন, ‘এর জন্য আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।’
ফিটনেসবিহীন কিংবা লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির বিরুদ্ধে তারা সব সময় সক্রিয় বলে জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ফিটনেসহীন গাড়ির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আর নম্বরপ্লেটহীন গাড়ি দেখামাত্রই ধরি এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করি।’ কর্মাশিয়াল গাড়ির ফিটনেস কাগজ না থাকলে সেগুলো ডাম্পিং করা হয় বলে জানান তিনি।
সূত্র:ঢাকাটাইমসক
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর পদ হারালেন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলেরবিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল গ্রেপ্তার
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে রাজধানীরবিস্তারিত পড়ুন