লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের ৭১টি পদের ২৫টি শূন্য
লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। অথচ কলেজে ৭১টি শিক্ষকের অনুমোদিত পদের মধ্যে ৪৬ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। বাকি ২৫টি পদ দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য রয়েছে। কলেজে ১১টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও আটটি বিষয়ে স্নাতকোত্তরও পড়ানো হয়। এছাড়াও তিনটি বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক এবং তিনটি বিভাগে ডিগ্রি কোর্স পড়ানো হয়। কিন্তু শ্রেণিক্ষক, শিক্ষক, আবাসনের অভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
জানা যায়, জেলা সদর ছাড়াও প্রতিবেশী নোয়াখালী ও চাঁদপুর জেলা থেকে শিক্ষার্থীরা এসে এই কলেজে লেখাপড়া করছেন। ১০ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে এই কলেজে মাত্র একটি ছাত্রাবাস। তাও আবার ২০ ও ৩০ আসন বিশিষ্ট ছাত্রাবাস। তবে ছাত্রীদের জন্য ১০০ আসন বিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস থাকলেও তার অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় অনেক আসনই ফাঁকা।
এসব বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার জানালেও কোনো সুফল মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন কর্তৃপক্ষ। এমতবস্থায় নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে বেগ পেতে হচ্ছে বলেও জানা যায়।
কলেজসূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ জেলা শহরের সমসেরাবাদ এলাকায় অবস্থিত। ১৯৬৪ সালের জুলাই মাসে ১০.৬৩ একর জমির উপর জ্ঞান তাপস মরহুম অধ্যক্ষ আবদুল জব্বারের হাত ধরেই কলেজটির প্রতিষ্ঠা হয়। ১৫০ জন শিক্ষার্থী, ১৪জন শিক্ষক ও আটজন কর্মচারী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও দিনে দিনে কলেজটির পরিসর অনেক বেড়েছে। তবে শিক্ষক সংকট কিছুতেই পূরণ হচ্ছে না।
মানবিক ও বাণিজ্য শাখায় উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির মাধ্যমে কলেজে শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা। অধ্যক্ষ আবদুল জব্বার, শিক্ষক ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের সহযোগিতায় অল্প দিনেই কলেজটি ব্যাপক সফলতা অর্জন করে।
এতে উচ্চমাধ্যমিক বিজ্ঞান শাখা ও স্নাতক শ্রেণিতে বি.এ, বি.কম ও বি.এস.সি শাখার অনুমোদন হয়। ১৯৮০ সালের ১ মার্চ কলেজটি সরকারি হয়।
ফলে অগ্রযাত্রার সফলতা আরো গতিশীল হয়ে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে স্নাতক (অনার্স) ও স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) কোর্স চালু হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে ১৯৯৫ সালে প্রথম স্নাতক কোর্স চালু হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি, ইসলামি শিক্ষা, অর্থনীতি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিতসহ ১১টি বিষয়ে স্নাতক পড়ানো হয়।
২০০৫ সাল থেকে কলেজে (স্নাতকোত্তর) মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইসলামি শিক্ষা ও গণিতসহ মোট আটটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। পাশাপাশি তিনটি বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক এবং তিনটি বিভাগে ডিগ্রি কোর্স পড়ানো হয় কলেজটিতে।
কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলেজে তিনটি তিনতলা ও একটি চারতলা একাডেমিক ভবন রয়েছে। ভবনগুলোতে ছোট বড় প্রায় ৬০টি কক্ষ রয়েছে। তবে পাঁচতলা আরেকটি ভবন নির্মাণাধীন।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি গ্রন্থাগার। প্রত্যেকটি স্নাতক কোর্স বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য সেমিনার কক্ষ রয়েছে। কলেজের সৌন্দর্য বাড়াতে রয়েছে বড় মাঠ। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, গার্লস-ইন-রেঞ্জার ও ঐতিহ্যবাহী রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট।
জানতে চাইলে কলেজটিতে বিবিএস পড়া শিক্ষার্থী আলআমিন বলেন, শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটে নিয়মিত ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষক না থাকায় পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়া যাচ্ছে না। এসব সংকট থেকে আমরা মুক্তি চাই।
কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী মুক্তা আক্তার বলেন, আরো কয়েকটি বিষয়ে স্নাতক কোর্স চালু হলে ছাত্রছাত্রীরা পছন্দমতো শিক্ষাগ্রহণ করতে পারতো। তবে যেসব বিষয়ে স্নাতক কোর্স চালু রয়েছে। সেসব বিষয়ে শিক্ষক ও শ্রেণি কক্ষের সংকটের কারণে ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছে না।
অভিভাবক আবদুল মতিন ও ইসমাইল হোসেন জানান, কলেজে প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষকদের মধ্যে যারা আছেন, তারা প্রাইভেট নিয়ে ব্যস্ত। শিক্ষকরা যদি সব সময় বাণিজ্যিক চিন্তা মাথায় রাখেন, তাহলে সন্তানদের শিক্ষা-জীবন আরো বেশি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, শিক্ষার্থীদের পাঠদানে আমাদের শিক্ষকরা যথেষ্ট আন্তরিক। তবে বেশ কয়েকটি বিভাগে শিক্ষক সংকট থাকায় পাঠদান কিছুটা ব্যাহত হয়। পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষ সংকটও রয়েছে। এসব বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। তবে এসব সংকটগুলো সমাধান করা গেলে উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করা যেতো।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রায়পুরায় বিএনপির প্রায় ১০০ নেতা কর্মী আ’লীগে যোগদান
‘আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে, ঘরের ছেলে ঘরেবিস্তারিত পড়ুন
মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধ পাওয়ায় চার ফার্মেসিকে জরিমানা
লক্ষ্মীপুর জেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধ পাওয়ায় ৪টি ফার্মেসিকে ৫২ হাজার টাকাবিস্তারিত পড়ুন
অবৈধ কোরবানির হাটে আদায় লাখ-লাখ টাকা! মোল্লার হাট
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার একটি জনপ্রিয় হাট হচ্ছে মোল্লার হাট। কোরবানিবিস্তারিত পড়ুন