লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবসের উদ্বোধনকালে হানিফ
লালনের আদর্শে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশকে গড়ে তুলতে হবে
মিলন হবে কত দিনে/ আমি অপার হয়ে বসে আছি/ সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে/ পার কর হে দয়াল আমারে’- লালন ফকিরের এ রকম অংসখ্য গানের বানী কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার মরা কালি নদীর পাড়কে এক অন্য রকম আবহ এনে দিয়েছে। তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া হাজারো লালন ভক্ত বাউলদের অবিরাম গেয়ে চলেছে লালনের বানী। শুক্রবার রাত্র ১০ টা থেকে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র ১২৫তম তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হয়। মাজারে আসা অসংখ্য বাউল সাঁইজিকে স্মরণ করছেন তার বানী পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে। স্মরণোৎসবে যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার দর্শনার্থীও। মাজার ঘুরে দেখা গেছে পুরো এলাকায় সাদা সফেদ পোশাক পরা শতশত মানুষের মিলন মেলা। নানা বসয়ী মানুষের উপচে পড়া ভীড়। গতকাল সকাল থেকে শুরু হয়েছে বাউল সম্রাট লালন ফকির লালন স্মরণে ৫দিনের স্মরোণৎসব। প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানবতাবাদীর পথে ডাক দিয়ে ছিলেন। তিনি অহিংস মানবতার ব্রত নিয়ে মানুষের কল্যাণে অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গেছেন। তাঁর এই অমর সৃষ্টি সঙ্গীত কোন ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর লোক ধর্মকে হাতিয়ার বানাতে চাই। তারা ধর্ম ব্যবহার করে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে জাতিকে বিভক্তি করার অপচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এখন সরকারের পতন ঘটাতে বিদেশীদের হত্যা করছে। যা কোন সভ্য দেশ, জাতি ও সমাজের কাম্য নয়। ধর্মের দোহায় দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে জাতিকে বিভক্ত করা যাবে না। মানুষ তাদের ধর্মের আড়ালের লেবাস ও স্বরূপ দেখেছে। সকল ধর্মের উর্ধে থেকে সম্প্রীতির বাধনে আবদ্ধ করতে মরমী এই সাধক মানব মুক্তির জন্য সৃষ্টি করেছিলেন ফকিরী মতবাদ। লালনের আর্দশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। শুক্রবার রাতে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে লালন একাডেমির আয়োজনে বাউল সম্রাটের ১২৫ তম তিরোধান দিবসের ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশের মানুষকে হত্যা করে সরকার পতন ঘটাতে না পারায় কৌশল পাল্টিয়ে বিদেশীদের হত্যা করে সরকার পতন ঘটাতে চাই। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কারা এদেশে জঙ্গীবাদের বীজ বপন করেছে তা সবাই দেখেছে। হানিফ বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে হাওয়া ভবনে বসে জঙ্গীদের নিয়ে বৈঠক করেছে খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান এবং তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বেগম খালেদা জিয়ার আমলে পুলিশি পাহারায় রাজশাহীতে জেএমবিরা মহরা দিয়েছে, সারা বাংলাদেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা করে জঙ্গীবাদের উত্থান হয়েছে। এগুলো জনগণ দেখেছে। তিনি মুখে ভোটের অধিকারের কথা বলে মানুষের বাঁচার অধিকার কেটে নিচ্ছেন। এ কেমন আন্দোলন। এসব বন্ধ করুন নইলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, লালন ফকির জাতহীন মানব দর্শন ও মানবতার ভাবধারাকে প্রতিষ্ঠিত করতে একটি অসাম্প্রদায়ীক সাম্যের সমাজ চেয়ে ছিলেন তিনি। লালন মানুষকে শিখিয়েছিলেন কোন ধর্মের মধ্যে আবদ্ধ থেকে সম্প্রীতি বজায় রাখা যায় না। সকল ধর্মের উপর মানব ধর্ম। ধর্ম একটি উৎসব। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। ফকির লালন এর চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে সমাজের সকল প্রকার হানাহানি কাটাকাটি দুর করা সম্ভব। সবার আগে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে একজন খাঁটি মানুষ হিসেবে। মানুষ হতে পারলেই এদেশের সমাজ ব্যবস্থা এক ও অভিন্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে বাউল সম্ম্রাট লালন সাঁই মাজার প্রাঙ্গনে আগত সাধু-গুরু দর্শনার্ধীদের খাওয়া পানি সমস্যা দুর করতে বিশুদ্ধ পানীয়-জলের প্রবাহ স্থাপনার উদ্বোধন করেন। এছাড়াও লালন একাডেমিতে একটি আধুনিক মানের রেষ্ট হাউস নির্মাণ কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে বলে আসস্থ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আগত অতিথিদের কুষ্টিয়া লালন একাডেমীর পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া, ক্রেষ্ট ও আত্মসুদ্ধির প্রতীক একতারা উপহার দিয়ে বরণ করে নেন। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম,জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারন সম্পাদক আজগর আলী, সহ-সভাপতি রবিউল ইসলাম, কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান, কুমারখালী পৌরসভার মেয়র শামসুজ্জামান অরুন, লালন একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খান। মুখ্য আলোচক ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড.সরোয়ার মুর্শেদ রতন। আলোচক ছিলেন লালন মাজারের প্রধান খাদেম মহম্মদ আলী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেলা আক্তার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সেলিম হক। আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে পরিবেশিত হয় লালন সংগীত। এতে উদ্বোধনী প্রার্থনা সংগীত পরিবেশন করেন লালন একাডেমির নির্বাহী সদস্য বাউল আব্দুল কুদ্দুস। সমীর বাউলসহ স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ লালন সঙ্গীত পরিবেশন করেন। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই সংগীত পরিবেশন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সৈকত ও কনক চৌধুরী এবং অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা করেন লালন একাডেমির নির্বাহী সদস্য মাহমুদুর রহমান আল কাদেরী। হাজার হাজার বাউল, সাধু আর লালন ভক্তের পদচারনায় মুখর পুরো ছেঁউড়িয়া। তবে মাঝে মধ্যে বৃষ্টির কারনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বাউলদের। বৃষ্টিতে ভিজতে হচ্ছে মাজারে আসা বাউল ও সাধারন মানুষকে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঢাকা-খুলনা রেল আংশিক চালু হয়েছে সুদীর্ঘ্য ১২ ঘণ্টা পর !
অবশেষে প্রায় ১২ ঘন্টা পর কুষ্টিয়ার পোড়াদহে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ারবিস্তারিত পড়ুন
১৫ হাজার কলাগাছ কেটে ফেলল দুর্বৃত্তরা
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় হিজলাবট এলাকায় গড়াই নদের চরে কলাগাছ লাগিয়েছিলবিস্তারিত পড়ুন
কুষ্টিয়ায় বজ্রপাতে শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু
বজ্রপাতে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার খোলা মাঠে শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন