লিটন হত্যার পর আওয়ামী লীগ সাংসদরা আতঙ্কে!
এমপি লিটন হত্যা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে বেশ নাড়া দিয়েছে৷ এ হত্যাকাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ এমপিদের নিহত হওয়ার ইতিহাস উল্লেখ করে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন৷ এমপিরাও ইতিমধ্যে নিরাপত্তার জন্য গানম্যান দাবি করেছেন৷ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যায় কারা জড়িত তা এখনো স্পষ্ট হয়নি৷ প্রাথমিকভাবে জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে দায়ী মনে করা হলেও এর বাইরেও আরো অনেককে সন্দেহের তালিকায় রাখছেন তদন্তকারীরা৷ এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বলেছেন, ‘‘এমপিকে হত্যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না৷ জড়িত কেউই ছাড়া পাবেনা৷’’ আর সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এটা কোনো কাঁচা কাজ নয়৷ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড৷’’
এর আগে সোমবার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সাল থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাত জন এমপিকে হত্যা করা হয়৷ এছাড়াও পরবর্তীতে সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় আহসান উল্লাহ মাস্টার ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াকেও হত্যা করা হয়৷ কাজেই ষড়যন্ত্রকারীদের এ ধরনের চক্রান্ত নতুন নয়৷’’ তিনি এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত এবং ‘টার্গেট কিলিং’ বলে উল্লেখ করেন৷ এমপি লিটন হত্যায় এ পর্যন্ত ৩৯ জনকে আটক করা হয়েছে৷ ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তরা লিটনের সুন্দরগঞ্জের বাড়িতে ঢুকে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে৷ এই ঘটনায় তার বোন তাহমিদা বুলবুল কাকলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত চার-পাঁচ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন৷
এদিকে লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘জামায়াত-শিবিরের লোকজনই আমার স্বামীকে খুন করেছে৷’’
তিনি জানান, ‘‘জামায়াতবিরোধিতার কারণে আমার স্বামীকে এর আগে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে৷ জামায়াত অধ্যুষিত এই এলাকায় আমার স্বামী জামায়াত বিরোধীতা করে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন৷ যা জামায়াত মানতে পারেনি৷’’
তিনি জানান, ‘‘১৯৯৮ সালের ২৬ জুন সুন্দরগঞ্জ ডিডাব্লিউ ডিগ্রী কলেজ মাঠে জামায়াত-শিবির আয়োজিত জনসভায় গোলাম আজমের বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল৷ সেই সময় স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের এই সভা পণ্ড করে দিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ লিটন তার বন্দুক হাতে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জনসভায় প্রবেশ করেন এবং গোলাম আজমকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়েন৷ এতে জনসভাটি পণ্ড হয়ে যায়৷ সেই থেকে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার বাহিনী লিটনকে যে কোনো মূল্যে হত্যার টার্গেট করে৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘সেই সময় তাঁর গুলিতে আহত ফতেখাঁ গ্রামের জামায়াত ক্যাডার হেফজসহ আরও দুর্ধর্ষ জামায়াত ক্যাডাররা লিটনকে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে এবং ফোন করে দীর্ঘদিন থেকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল৷’’
লিটনের স্ত্রী স্মৃতি এরই মধ্যে সুন্দরগঞ্জ থেকে সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছেন৷ বুধবার তাঁকে ফোন করা হলে তিনি ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি৷ তার এক আত্মীয় জানান, ‘‘স্মৃতি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ এখন তার পক্ষে কথা বলা সম্ভব নয়৷’’
তবে লিটনের বোন এবং মামলার বাদী ফাহমিদা বুলবুল কাকলী ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘হত্যাকাণ্ডে যারা সরাসরি জড়িত তাদের কাউকে আমরা চিনতে পারিনি৷ তাই অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে৷ তবে এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে জামায়াত- শিবির জড়িত আছে বলে আমরা সন্দেহ করছি৷’’
তিনি আরো জানান, ‘‘হত্যাকাণ্ডের সময় আমার ভাই, তাঁর স্ত্রী- সন্তানরা বাসায় ছিলেন৷ আমি ছিলাম ঢাকায়৷ আমি ঢাকা থেকে গিয়ে এজাহার করি৷ জানতে পেরেছি মোটর সাইকেলে করে দুর্বৃত্তরা আসে৷ এবং দু’জন ভিতরে গিয়ে গুলি করে আমার ভাইকে হত্যা করে৷’’
আর সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আতিয়ার রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা যাদের আটক করেছি তাদের মধ্যে ২৭ জনকে এ পর্যন্ত আদালতে পাঠিয়েছি৷ আমরা হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াতকে সন্দেহ করছি, তবে সন্দেহের সবগুলো দিকই তদন্ত করে দেখছি৷ আমরা মনে করি, অন্য কোনো কারণেও হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে৷ ঠিক কারা এবং কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা আমাদের কাছে এখনো পরিস্কার নয়৷’’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘হত্যাকাণ্ডের মোটিভ কী তা বুঝতে আরো সময় লাগবে, কারণ, এটা কোনো কাঁচা কাজ নয়৷ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড৷’’
পুলিশ জানিয়েছে, মামলার তদন্ত পর্যায়ে এরই মধ্যে তারা লিটনের স্ত্রী স্মৃতি এবং বাদী লিটনের বোন কাকলীর সঙ্গে কথা বলেছেন৷
কাকলী জানান, ‘‘পুলিশ এখনো আমাদের স্পষ্ট করে কিছু বলছে না৷ তদন্তের কোনো অগ্রগতি আছে কিনা তা-ও আমরা জানি না৷’’
এদিকে এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের পর শাসক দল আওয়ামী লীগের এমপিদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে৷ তারা তাদের নিরাপত্তায় গানম্যান দাবি করেছেন৷ শ্রম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইস্রারাফিল আলম এমপি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নানা কারণে, বিশেষ করে জঙ্গিবাদবিরোধী অবস্থানের কারণে সরকার দলীয় এমপিরা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন৷ তাঁরা টার্গেট হতে পারেন৷ তাই তাঁদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রয়োজন৷ এমপিদের গানম্যান দেয়া হয় না৷ আমার মনে হয়, দেয়া উচিত৷’’
প্রসঙ্গত, জামায়াতবিরোধিতা ছাড়াও ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর ভোরে শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভকে গুলি ছোঁড়ার ঘটনায় আলোচিত ছিলেন এমপি লিটন৷ ওই ঘটনায় তিনি আটকও হয়েছিলেন৷ তখন তাঁর লাইসেন্স করা রিভলবার ও শর্টগান জব্দ করা হয়৷ -ডয়েচেভেলে
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন