শাকিবের সঙ্গে বিয়ে এবং সন্তান নিয়ে মুখ খুললেন অপু বিশ্বাস
মাঝ রাত। ঘড়ির কাটায় সময় ১২টা ৩৩ মিনিট। ঠিক তখনই মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। তাকাতেই দেখা গেলো দীর্ঘ সময় গায়েব থাকা জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের কল। চমকে ওঠার মতোই! তবে এতটুকুও চমকাইনি। বিশ্বাস ছিল, অপু ফোন দেবেনই। অবশেষে বিশ্বাসেই স্বস্তি। কয়েকদিন যাবৎ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে, আড়াল থেকে সামনে এসেছেন অপু বিশ্বাস। ভারত থেকে ঢাকায় ফিরেছেন তিনি। তবে সেগুলো ফেসবুক চ্যাটিংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই ফেসবুক আইডি কার, কিংবা কারা অপারেট করছে, এসব নিয়ে ছিল ব্যাপক কৌতুহল ও প্রশ্ন। কৌতুহল ও প্রশ্নের রেশ ধরে চলে অনুসদ্ধান। ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে একটি বিশ্বাসও মনে জন্মেছিল। অপু ঢাকায় ফিরলে ফোন দেবেনই। অবশেষে কথা হয়েছে অপুর সঙ্গে। ঢাকায় ফিরেছেন তিনি। সেই বিষয়টি করেছেন। জানিয়েছেন আড়ালে থাকার ইতিবৃত্ত। পাঠকদের জন্য সেটাই তুলে ধরা হল।
অবশেষে ফোন দিলেন?
না দিয়ে উপায় কী? আপনি অবাক হননি?
মোটেও না। আমি জানতাম অপু ঢাকায় ফিরলে ফোন দেবে। কেন গায়েব হয়েছিলেন?
এটা আমার জন্য দরকার ছিল। নিজেকে ভাঙতে চেয়েছি। বুঝতে চেয়েছি। আমার ক্যারিয়ারে চেঞ্জ করার দরকার ছিল। আমার কিন্তু হিরো একটাই। এই প্রথাটা আমি ভাঙতে চাই। কেন গায়েব হয়েছি, সেটা অবশ্যই সবাইকে জানাব। সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি। আমার বিশ্বাস আমার ফিরে আসাতে নিশ্চয়ই সবাই খুশি হয়েছেন।
বিশেষ কারও প্রতি কী কোনো ক্ষোভ ছিল?
কিছুই এখন বলতে চাই না। একটা বিষয় তো অবশ্যই আছে। সেটা না হয় পরে বলি।
কিন্তু শাকিবের সঙ্গে বিয়ে এবং সন্তানের যে গুজব রটেছে সেটার ব্যাপারে কী বলবেন?
আমি একদমই মিডিয়া থেকে দূরে ছিলাম। কী হচ্ছে না হচ্ছে, এর কিছুই জানতাম না। ২০১৬ সালের মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পরিবারের দু’একজন ছাড়া কারও সঙ্গেই যোগাযোগ ছিল না। পরিবারের অনেক সদস্যের সঙ্গেও কথা বলিনি। শুনে হয়তো বিশ্বাস করছেন না। কেন জানি আমার ভালো লাগেনি। গেল দুর্গাপূজার পর থেকেই পরিবারের সবার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। কিছু তো ছিল। সেটা সামনাসামনি বলবো। আর গুজব তো গুজবই। এগুলো রটবেই। এটা নিয়ে ভাবছি না। এই তো কিছুদিন আগেও তন্ময় বিশ্বাস নামে একজনের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে বলে নিউজ হয়েছে। বিষয়টি পড়ে আমি খুব হেসেছি। সত্য মিথ্যা না জেনে লিখে দিয়েছে, এতে আমার কোনো দুঃখ বা কষ্ট নেই। নিউজ নিউজের মতো হয়েছে। সত্য কিংবা মিথ্যা কোনটি সেটি আমিই জানি।
এই যে, তন্ময় নামে যে ছেলের সঙ্গে আপনার বিয়ের গুজবও রটানো হয়েছে, এর পেছনে কার হাত রয়েছে বলে আপনার মনে হয়?
কারও হাত নেই। আমার আড়ালে থাকা নিয়ে কিছু গণমাধ্যম মুখরোচক খবর তৈরি করেছে। এরমধ্যে আমার এক ভক্ত ফান করে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি এটা না বুঝে মজা করার জন্য করা হয়েছে। কিন্তু গণমাধ্যমগুলোর এভাবে হুট করে সংবাদ না ছাপিয়ে যাচাই করে প্রকাশ করা উচিৎ ছিল।
কিন্তু গণমাধ্যম তো আপনাকে খুঁজে পায়নি। যাচাই করবে কীভাবে?
তা ঠিক। তারপরও বিয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যা তা লিখে দেয়া উচিৎ নয়। আমাকে নিয়ে অনেকে অনেক কিছু লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে পারে। তাই বলে সেটা সত্যি হবে এর কোনো কারণও তো নেই।
শাকিব খানের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি কিন্তু নিশ্চিত করেননি?
কীভাবে করবো। মিডিয়ার অনেকেই তিন-চারটি করে বিয়ে করে ফেলেছেন। (হাসতে হাসতে) অথচ আমি এখনও শুরুই করতে পারিনি। বিয়ে করলেও আপনাদের সবাইকে জানাব। আমার বাবা নেই। আমি মনে করি আমার কাছের মানুষ সাংবাদিক বন্ধুরা। তারা সবাই আমার বিয়ের আয়োজন করবে।
তাহলে শাকিবের সঙ্গে বিয়ের কথা আপনি অস্বীকার করছেন?
আমি এ ব্যাপারে এখন কিছুই বলবো না। সময় হলে সবাইকে সবকিছু জানাব। একটু ধৈর্য ধরেন। সবাই জানতে পারবে সত্য মিথ্যা কোনটি। দশ মাস আড়ালে থাকার অবশ্যই কোনো কারণ ছিল। সেটা মিডিয়াকে অবশ্যই জানাব।
বিষয়টি বিন্তু রহস্যই থেকে গেল?
(হেসে উঠলেন) থাক না কিছু রহস্য। আর্টিস্টদের রহস্য না থাকলে কী হয়! আমি ব্যাক করছি এটা সত্যি। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। জাস্ট নিজেকে তৈরি করছি এখন।
ঢাকায় ফেরা নিয়ে ধোঁয়াশা কেন?
আমি তো কাউকে কিছু বলিনি। সাংবাদিকরা যে যার মতো করে লিখছে। এটা সত্যি যে আমি ঢাকায় ফিরেছি। সেটাও প্রায় এক মাস হয়ে গেল।
ঢাকায় ফিরেও কেন এতো গোপনীয়তা?
গোপনীয়তার কিছু নেই। আমি নিজের মতো করে কিছু সময় কাটাতে চেয়েছি। ফেসবুকে অনেকেই আমাকে নক করেছেন। আমি দেখেছি, দেশের মানুষ আমাকে কতটা ভালোবাসেন। কতটা উৎকণ্ঠিত আমার জন্য। গত তিনমাসে আমি সেসব পর্যবেক্ষণ করেছি। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি সামনে আসার।
তারপরও আপনি দেশের প্রতিষ্ঠিত এবং সুপরিচিত একজন চিত্রনায়িকা। আপনাকে নিয়ে সবার আগ্রহ থাকবেই…
বিশেষ কিছু কারণতো অবশ্যই আছে। সেটা আমি সময় হলে অবশ্যই সবাইকে জানাব। সবকিছুই বলবো, কেন আড়ালে ছিলাম। কিছু একটা তো অবশ্যই ছিল। সবাইকে সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করার অনুরোধ করছি।
আপনার কী মনে হয় কেউ আপনাকে ভুল পথে পরিচালিত করছে?
এটা আমি বিশ্বাস করি না। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিজের মতো করে চলতে চেয়েছি। তবে হ্যাঁ, কাছের দু’একজনের পরামর্শ নিয়েছি। কিন্তু তাই বলে অপুকে ভুল পথে চালিয়ে কেউ ধ্বংস করে দেবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। কিছু কষ্ট আছে, পাশাপাশি কিছু ভালোবাসাও আছে। সবকিছুই সময় হলে খোলাসা করব।
ঢাকায় ফিরে সময় কাটছে কীভাবে?
ভোরে ঘুম থেকে উঠে পার্কে হাঁটতে যাই। তারপর জিম করি। নিজেকে তৈরি করছি বলতে পারেন।
পার্কে হাঁটতে গেলে তো অনেকেই আপনাকে দেখার কথা?
কীভাবে দেখবে? আমি তো বোরকা পরে বের হই। দেখার সুযোগ কই? শুধু তাই নয়, বোরকা পরা অবস্থায় আমি বেশ কয়েকজন পরিচিত মানুষের সামনেও গিয়েছি। কেউ বুঝতে পারেনি। দিনকয়েক আগে কয়েকজন বিনোদন সাংবাদিকের সঙ্গেও আমার দেখা হয়েছে। বোরকা পরা ছিলাম বলে তারা কেউ আমাকে চিনতে পারেননি। আমি কিন্তু ঠিকই চিনেছি। তার মধ্যে আপনার পরিচিত দু’জন ছিল। আমার সঙ্গে কাজিন ছিল। তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বেশ মজা করেছি।
তাহলে আবারও সিনেমায় ফিরছেন?
অবশ্যই। সিনেমায় তো ফিরতেই হবে। নিজেকে তৈরি করছি। আড়ালে ছিলাম। কোনো কাজ করিনি। তাই ফিটনেসের একটা বিষয় আছে। স্লিম হচ্ছি। তবে সৌন্দর্যের ব্যাঘাত যাতে না হয় সে বিষয়টিও খেয়াল রাখছি।
আটকে যাওয়া সিনেমার কাজ করবেন নিশ্চয়ই…
আগে সেগুলো শেষ করবো। এরপর নতুন সিনেমা হাতে নেব। আমার তো এতদিন হিরো একটাই ছিল। এবার সেই ধারণাটা বদলে দেব। কারও একক নায়িকা হয়ে থাকতে চাই না।
এমন কথা ২০১২ সালেও বলেছিলেন। কিন্তু পারেননি…
বলেছিলাম। সেটা এখন অতীত। এবার প্রথা ভাঙার চেষ্টা করবো। আপনারা, দর্শকরা আমার সঙ্গে আছেন। এটা আমি বিশ্বাস করি। সবাই আমাকে কতটা ভালোবাসেন সেটা এ কয়েকমাসে আমি বুঝতে পেরেছি। তাই আমাকে ফিরতে হচ্ছে। সবাই পাশে থাকলে বিশেষ করে আপনারা সঙ্গে থাকলে অপু বিশ্বাসকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।
এরপর প্রসঙ্গ বদলালেন অপু। সিনেমার সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ করলেন। বর্তমান নায়িকাদের অবস্থা কী? ঢাকার সিনেমা কেমন চলছে? প্রসঙ্গক্রমেই উঠে আসলো অনন্ত জলিল ও বর্ষার কথা।
অপু জানতে চাইলেন, অনন্ত ভাইয়া-বর্ষা আপু ও তাদের বাবুটা কেমন আছে?
আমরা: ওরা সবাই ভালো আছেন। আপনার গায়েব হওয়া নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন।
অপু : ভাইয়া আর আপুকে দেখলাম হজে গিয়েছেন। জমজম কুপের পানি আর সৌদি আরবের খেজুর আমার ভীষণ প্রিয়। যদি নিয়ে আসে আমাকে দিতে বলবেন প্লিজ। তাদের মতো সুন্দর জুটি আমি খুব কম দেখেছি। উনারা যেন সারাজীবন সুখে থাকেন ভগবানের কাছে সেই প্রার্থনা করি।
আমরা : অবশ্যই বলবো। বর্ষাও আপনাকে খুব পছন্দ করেন।
অপু : আচ্ছা, মাহির খবর কী? ও কেমন আছে? মেয়েটা অনেক ভালো। মন দিয়ে কাজ করলে আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে।
আমরা : মাহিও তার স্বামীকে নিয়ে ভালো আছে। কাজ করছে নিয়মিত।
এরপর আরও কিছু ব্যক্তিগত কথা শেষে বিদায় নিলেন অপু বিশ্বাস। বিদায়ের আগে খুব জোর গলায় বললেন, ‘আমি আবারও সিনেমায় ফিরছি। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। আমার জন্য যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আশা করি আমার প্রবলেমটা উনারা বুঝবেন। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’ যুগান্তর
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সমুদ্র পাড়ে দুর্গারূপে নওশাবা
শুধু ঈদ কিংবা পূজা নয়, বিশেষ ধর্মীয় দিন উপলক্ষে ফটোশুটেবিস্তারিত পড়ুন
শুল্কমুক্ত গাড়ি খালাস করেছেন সাকিব-ফেরদৌস, পারেননি সুমনসহ অনেকে
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের জন্য আমদানি করাবিস্তারিত পড়ুন
আলোচিত নায়িকা পরীমনির পরিবার সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানতেন?
গভীর রাতে সাভারের বোট ক্লাবে গিয়ে যৌন হেনস্তা ও মারধরেরবিস্তারিত পড়ুন