শিউলির পর জবা পেলেন আপন ঠিকানা

ঢাকার পল্টন মোড় ও এর আশপাশে উদভ্রান্তের মতো ঘুরতেন জবা। লোকে বলতেন পাগলি। রাস্তায় ফেলে দেওয়া বা লোকজনের দেওয়া যা কিছু পেতেন তা দিয়েই ক্ষুধা মেটাতেন। তাঁর নিজের যে একটি পরিবার আছে তা ভুলেই গিয়েছিলেন জবা।
মানসিক ভারসাম্যহীন সেই জবাকে রাস্তা থেকে এনে চিকিৎসা করিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ছয় বছর পর জবাকে পেয়ে আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
আর এই কাজের পেছনে আছেন একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তাঁর নাম
শামীম আহমেদ। যমুনা ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার শামীমের এই কাজে সহযোগিতা করেছেন ব্যাংকের আরো কয়েকজন সহকর্মী।
এর আগে শিউলি নামের আরেক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন শামীম আহমেদ ও তাঁর বন্ধুরা।
শামীম আহমেদ বলেন, ‘কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার পথে গত বছরের ১৭ আগস্ট ঢাকার পল্টন মোড়ে রাস্তার পাশে ছেঁড়া কাপড়ে জড়ানো মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় এক মেয়েকে দেখতে পেয়ে কিছু টাকা ও খাবার কিনে দেন। পরের দিন অফিসের সহকর্মী ব্যাংকার আলী সাব্বিরের সঙ্গে পরামর্শ করে মেয়েটিকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করার পরিবেশ তৈরি করতে পল্টন মডেল থানায় যোগাযোগ করি। এরপর ৭ নভেম্বর পল্টন থানা পুলিশের সহায়তায় মেয়েটিকে শেরে বাংলানগরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তিকালে মেয়েটির পরিচয় জানা না থাকায় তাঁর নাম রাখি আদুরী।’
এদিকে হাসপাতালে সার্বক্ষণিক দেখাশোনা ও সেবার জন্য জরিনা বেগম নামক এক নারীকে বেতনে নিয়োজিত করেন শামীম ও তাঁর বন্ধুরা। চিকিৎসকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সেবায় মেয়েটি অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠার পর তাঁকে জরিনা বেগমের ঢাকার আদাবরের বাড়িতে রাখা হয়। এক সময় তাঁর মুখ থেকে কিছু শব্দ বের হয়। সেই কথার সূত্র ধরে শামীম আহমেদ ফেসবুকে এবং আদুরীর ছবি সংবলিত পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে তাঁর পরিবারকে খুঁজে বের করেন। মেয়েটির বাড়ি নোয়াখালীর মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুরে। তাঁর বাবা আলাউদ্দিন একজন রিকশাচালক, মা গৃহিণী।
পরে শামীম আহমেদ ও তাঁর বন্ধুরা মেয়েটির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় আনন্দে কেঁদে ফেলেন তাঁরা। শামীম আহমেদ জানতে পারেন আদুরীর প্রকৃত নাম জবা। আজ থেকে প্রায় ছয় ছয় বছর আগে জবা বাড়ি থেকে অজানার উদ্দেশে বেরিয়ে যান। অনেক খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি।
গত ৯ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নোয়াখালীর বিআরডিবি মিলনায়তনে শামীম আহমেদ ও বন্ধুরা আনুষ্ঠানিকভাবে জবাকে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র মো. হারুনুর রশিদ আজাদ, নোয়াখালী পৌর বণিক সমিতির সভাপতি সাইফুদ্দিন সোহানসহ অনুষ্ঠানে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে এসে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র হারুনুর রশিদ আজাদ আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে এখনো ভালো মানুষ আছেন। বিশেষ করে ব্যাংকার শামীম আহমেদ, তাঁর সহকর্মীরা এভাবে এগিয়ে না এলে কখনো জবাকে তাঁর পরিবারের সদস্যরা খুঁজে পেতেন না।’ তিনি এখন থেকে জবার ভোরণ পোষণসহ যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নেন।
এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে শামীম আহমেদ অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে বান্দরবানের থানচিতে ঘুরতে গিয়ে গাছের নিচে বসে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে দেখতে পান। পরে তাঁর সহকর্মী বন্ধু আলী সাব্বির ও হাসান ফরহাদ আজাদের সহযোগিতায় ওই নারীকে ঢাকায় এনে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ‘অন্তর’ নাম রেখে ভর্তি করান। অনেকদিন পরে মেয়েটির মুখের কথা ফোটে। আর সেই কথার সূত্রে ধরে ফেসবুকে যোগাযোগের মাধ্যমে মেয়েটির ঠিকানা মিলে। মেয়েটির নাম শিউলি রানী সরকার। প্রায় পাঁচ বছর ধরে বাড়ি থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি।
শামীম আহমেদ ও তাঁর বন্ধুদের চেষ্টায় তিন সন্তানের জননী শিউলী রানী সরকারকে সুস্থ করে তাঁর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার দাউরিয়া গ্রামে স্বামী ও পরিজনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমার মানবিক বিবেক বোধ থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন দুজন নারীকে সুস্থ করার উদ্যোগ নিয়ে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি। এই কারণে যাতে আমাদের কাজ দেখে অন্যরা উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে রাস্তাঘাটে মানসিক ভারসাম্যহীন কোনো লোককে অনাদর-অবহেলা না করে তাঁদের প্রতি মানবিক আচরণ করেন।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

নোয়াখালীতে অস্ত্র ঠেকিয়ে কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগ
নোয়াখালীর সদর উপজেলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে সতের বছর বয়সী এক কিশোরীকেবিস্তারিত পড়ুন

ভিক্ষুকে সয়লাভ নোয়াখালীর শহর
নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী এখন ভিক্ষুকের শহরে পরিণত হয়েছে। যদিওবিস্তারিত পড়ুন

নোয়াখালীতে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ
পেট্রলবোমা হামলার মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাবিস্তারিত পড়ুন