শিক্ষক রেজাউল করিম কেমন ছিলেন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী সেতার বাজাতেন। বাসায় তাঁর শোয়ার ঘরে গিয়ে দেখা যায়, বিছানার ওপরে প্রিয় সেতারটা রাখা। সেতারের ‘কেস’টা মেঝেতে। দেখে মনে হচ্ছে, হয়তো রাতেই বাজিয়েছেন। সকালে বিছানার ওপর রেখে বের হয়েছেন।
দেখা গেল, পরনের লুঙ্গিটা পড়ে আছে বিছানায়। মশারি ও কাঁথা ভাঁজ করে রাখা। মাথার কাছে টেলিফোন সেটটি ঢেকে রাখা হয়েছে। রেজাউল করিমের খাটের নিচে এক পাশে একটি একতারা, হারমোনিয়াম ও ডুগি-তবলা রয়েছে। ঘরে দুটি বইয়ের আলমারি রয়েছে। পশ্চিমের দেয়ালে একটি পাখির ছবি। বাঁধিয়ে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। উত্তরের দেয়ালে একটি বিমূর্ত ছবি টাঙানো।
রেজাউল করিম সিদ্দিকীর ‘কোমলগান্ধার’ নামে সাংস্কৃতিক একটি সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠনের সদস্য নাঈম ইমতিয়াজ। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি বলেন, শহীদুল্লাহ কলা ভবনে স্যারের ২২৭ নম্বর কক্ষটি সাংস্কৃতিক কাজের জন্য তাঁরা ব্যবহার করতেন। অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরাও এটি ব্যবহার করতেন। পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানের পর কক্ষটি এখনো পরিষ্কার করাই হয়নি। কক্ষের চাবিটি এখনো তাঁর (নাঈম) কাছেই রয়েছে।
নাঈম আরও বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘কোমলগান্ধার’ নামে স্যার একটি ছোটকাগজ বের করতেন। এবার সেটির ষষ্ঠ সংখ্যা বের হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরাই লিখতেন। স্যার সম্পাদকীয় লিখতেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার ও আবৃত্তি সংগঠন ‘সুন্দরম’-এর পরিচালক হাসান রাজা বলেন, স্যার সেতার বাজাতেন। ঋতুভিত্তিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। তিনি অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। কোনো ধর্ম বা ব্যক্তিকে কটাক্ষ করে কোনো লেখা তিনি লিখতেন না। এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতেন। তিনি একজন নিরপেক্ষ মানুষ ছিলেন।
শিক্ষক রেজাউলের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার দরগামাড়িয়া গ্রামে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। চারজনই সরকারি চাকরি করেন। বাবা আবুল কাশেম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ছিলেন। বর্তমানে অবসরে রয়েছেন।
রেজাউল করিমের চাচাতো বোন স্থানীয় দরগামাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম জানান, তাঁর ভাই প্রায়ই গ্রামে আসতেন। এসে গ্রামের ছোট-বড় সবাইকে আনন্দে মাতিয়ে রাখতেন। ছোটদের সঙ্গে খেলাধুলা করতেন এবং তাদের আনন্দ দিতেন। এলাকায় ঘুরে ঘুরে লোকসংস্কৃতি নিয়ে তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করতেন। ভিডিও ধারণ করতেন।
গ্রামবাসী জানান, শিক্ষক রেজাউল ছিলেন মুক্তমনা ও সংস্কৃতিমনা। এলাকার শিশু-কিশোরদের জন্য গানের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। ওই সংগীত বিদ্যালয়ের সভাপতি রাজু আহমেদ জানান, একজন সংগীতশিক্ষক শিশু-কিশোরদের গান শেখান। সব খরচ রেজাউল স্যারই বহন করতেন।
প্রতিবেশী মুনসুর রহমান জানান, গ্রামে এসে ঘুড়ি উৎসব, ঘোড়দৌড়সহ বিভিন্ন খেলার আয়োজন করতেন। বিজয়ীদের পুরস্কারও দিতেন নিজের টাকায়। পয়লা বৈশাখ তিনি গ্রামে এসেছিলেন। নিয়মিত মুঠোফোনে এলাকার লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
গ্রামবাসী জানান, এলাকার অনেক মসজিদ প্রতিষ্ঠায় রেজাউল করিমের অবদান রয়েছে। মসজিদ নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দিতেন। এ ছাড়া বাড়ির পাশের এক কওমি মাদ্রাসায় নিয়মিত আর্থিক সহায়তা দিতেন।
আওয়ামী লীগের রাজশাহী জেলা শাখার সদস্য ও নিহত রেজাউল করিমের চাচাতো বোন জেবুন্নেসা বলেন, তাঁর ভাই গ্রামের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
জাবি ছাত্রদলের পুনর্মিলনীতে দুই গ্রুপের বাগ্বিতণ্ডা, ককটেল উদ্ধার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রদলের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে দুই গ্রুপেরবিস্তারিত পড়ুন
ফখরুল: ফ্যাসিবাদের ফেরার সম্ভাবনা বাড়ছে
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফ্যাসিবাদ পরাজিত হলেওবিস্তারিত পড়ুন
বিচারপতিকে ডিম ছোড়ার ঘটনায় প্রধান বিচারপতির উদ্বেগ
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালকে আদালত কক্ষে ডিম ছোঁড়ারবিস্তারিত পড়ুন