শিক্ষাঙ্গনে অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশন জট দূর করে শিক্ষা কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখতে অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সকলের একথা মনে রাখতে হবে যে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে অব্যাহত রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। যাতে সেশন জট সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করি তাকে নিজের মনে করতে হবে। …যারা হলে থাকেন তাদের দায়িত্ব হলের সৌন্দর্য ঠিক রাখা।’
শেখ হাসিনা আজ গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন আহমদও এ সময় বক্তৃতা করেন।
পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এ সময় চট্টগ্রাম বিশ্বেবিদ্যালয়ের মূল অনুষ্ঠান স্থলের ডায়াজে উপস্থিত ছিলেন।
গণভবনে অন্যান্যের মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, রেলপথ বিষয়ক মন্ত্রী মুজিবুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর এমপি, ডা. দীপু মনি এমপি এবং এম এ লতিফ এমপি, অ্যাডভোকেট শামসুল হক এমপি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার ৭ হাজার ৫০৯টি স্থানে ভিডিও কনফারেন্সটি প্রদর্শন করা হয়।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে ‘গৌরবের ৫০ বছর’ পূর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনসহ প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে বেরিয়ে যাওয়া সবাইকে তার প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘অ্যালামনাইদের অনুষ্ঠানে খাওয়া-দাওয়া আর উৎসব হয়। এটা তাদের কাজ না। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করলাম তার জন্য কি করলাম। সেটিও দেখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হল ও ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য রক্ষায় ফলজ ও ফুলের গাছ লাগানোর কথা বলেন। তিনি সেশনজট ঠেকাতে শিক্ষকদেরও তৎপর হতে অনুরোধ জানান ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪৫ বছর হয়ে গেছে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের দুর্ভাগ্য বাংলাদেশ এখনো শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন করতে পারেনি। এটা আমাদের কাছে একটি লজ্জার বিষয়। আমরা পারতাম শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন করতে যদি ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের মতো কালো দিন আমাদের জীবনে না আসত। কারণ ’৭৫-এর জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে বাংলাদেশে হত্যা আর খুনের রাজনীতি, অবৈধ ক্ষমতা দখল শুরু হয়।
তিনি বলেন, ’৯৬ সালে আমরা একটা পদক্ষেপ নিয়েছিলাম প্রতিটি জেলাকে নিরক্ষর মুক্ত করার এবং আমরা অনেক দূর সফলও হয়েছিলাম। শিক্ষার হার আমরা ৪৫ ভাগ থেকে ৬৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এজন্য ইউনেস্কো সে সময় বাংলাদেশকে পুরস্কৃতও করেছিল।
’৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারলেও দেশ এতদিনে নিরক্ষর মুক্ত হয়ে যেত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তুু, দুর্ভাগ্য আমাদের ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। তাইতো আবার সেই হত্যা, খুন, ধর্ষণ, সেশন জট, শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের ঝনঝনানি শুরু হয়ে যায়। সাক্ষরতার হার আবার কমে ৪৪-৪৫ ভাগ হয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশে প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ চট্টগাম ও রাজশাহীতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পর্যায়ক্রমে সকল বিভাগীয় শহরে অন্তত, একটি করে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সরকারের রয়েছে।
এদিনের ভিডিও কনফরেন্সকে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগের একটি অংশ হিসেবে উল্লেখ করলেও সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারায় প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘এখানে আসলে যেমন সকলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হত তেমনি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের চট্টগ্রাম বিশ্বেবিদ্যালয়কে আবারো আমি দেখতে পেতাম।’
তিনি এ সময় অচিরেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত একটি জাতিই পারে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে। সুশিক্ষিত ছাড়া কোনো জাতি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে না। স্বাধীনতার পর যখন বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলছেন তখন জাতির জনক শিক্ষাকে প্রধান অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, একটি প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ’৭৫-পরবর্তী অবৈধ সামরিক সরকারগুলো ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার চেষ্টা করে। তারা ছাত্রদের কাছে স্বাধীনতার বিকৃত ইতিহাস তুলে ধরে, তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করে। ফলে একটি প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধী এবং বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুনর্বাসন ও পুরস্কৃত করার প্রক্রিয়াটির পেছনের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন- যেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে, ফাঁসি হয়েছে তাদের একসময় মন্ত্রী করা হয়েছিল, তাদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেয়া হয়েছিল, জেলে আটক যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করে তাদেরও রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান।
বক্তব্য শেষে বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন