শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

শিক্ষিত তরুণীরা যেভাবে জঙ্গি কার্যক্রমে ঝুঁকছে

নারী হওয়ায় কেউ সন্দেহ করবে না এমন বিশ্বাসে সিরাজগঞ্জের একটি টিন শেড বাসা ভাড়া নিয়ে সপরিবারে খুব গোপনে দলে নতুন সদস্য বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন চার নারী। কিন্তু সে চেষ্টা সফল হয়নি তাদের।

গত ২৩ জুলাই গভীর রাতে সেই বাসায় সাংগঠনিক গোপন বৈঠক করার সময় ওই চার নারীকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর ঘরে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া যায় ১৩টি জেহাদি বই, ৬টি তাজা ককটেল ও ৪টি গ্রেনেড তৈরির খোল ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। পুলিশের দাবি, এই চার নারী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)’র সদস্য।

পুলিশ জানিয়েছে, সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের মছিমপুর মহল্লার হুকুম আলীর ভাড়া দেয়া টিন শেড বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয়। পুলিশ আরও জানায়, গত মে মাস থেকে বাড়ি ভাড়া নিয়ে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে জেলা শহর ও আশেপাশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মধ্যে ধর্ম প্রচারের নামে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল তারা।

গত ১৬ আগস্ট রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জেএমবি’র চার নারী সদস্যকে আটক করে র‌্যাব। আটকৃতরা হলেন- আকলিমা রহমান, ঐশী, মৌ ও মেঘনা। এদের মধ্যে তিনজনই মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষার্থী। আরেকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন (শিক্ষানবিশ) চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, গত ২১ জুলাই গাজীপুর থেকে গ্রেফতার হওয়া জেএমবি’র দক্ষিণাঞ্চলের আমির মো. মাহমুদুল হাসানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই নারীদের গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, ঐশী ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এমবিবিএস সম্পন্ন করে জুন থেকে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাবা ডা. বিশ্বাস আক্তার হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক এবং মা ডা. নাসিমা সুলতানা সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। ঐশী গত তিন বছর ধরে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। নারী দলটির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ ঐশী অথবা আকলিমা রহমান নিতেন।

আকলিমা রহমান রাজধানীর উত্তরা হাইস্কুল থেকে এসএসসি ও হলি সাইন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৩ সালে তিনি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। বর্তমানে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত।

র‌্যাব জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি আকলিমা আরবি অধ্যয়নে বিভিন্ন স্থানে যেতেন এবং সেখানে দাওয়াতের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন ধারায় জঙ্গিবাদে উৎসাহ প্রদান করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ আগস্ট রাতে গাজীপুর সাইন বোর্ডে তার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পারে, আকলিমা গত দেড় বছর ধরে জিহাদি দলটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

মৌ ও মেঘনা সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, মৌ বিগত সাত মাস ধরে জিহাদি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা ঐশীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে মিলে যায়। মৌ ২০১৩ সালে মানারাত ইউনিভার্সিটিতে ফার্মেসি বিষয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়। বর্তমানে অনার্স শেষ বর্ষ ৭ম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত।

মেঘনা ঢাকা ক্যামব্রিয়ান কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করে। এরপর ওই বছরই রোকনুজ্জামান তাকে পারিবারিকভাবে বিবাহ করে। বর্তমানে সে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে (অনার্স) চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত। তাকে রাজধানীর মিরপুর-১, জনতা হাউজিং-এর সামনে তার ভাড়াকৃত সাবলেট বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার মোবাইলেও অন্যদের মতো একই ধরনের জিহাদী বই, জিহাদী বক্তৃতা, ভিডিও ও জিহাদী নির্দেশনার সফট কপি পাওয়া যায়।

ধর্মপ্রাণ সহজ-সরল মানুষের কাছে তারা ধর্মের বাণী প্রচার করতেন। কিন্তু এর আড়ালে চালাতেন জঙ্গি তৎপরতা। নারী হওয়ায় কেউ সন্দেহ করবে না-এমন বিশ্বাসে তারা সাধারণ নারীদের মধ্যে মিশে যেতেন। ধর্মের বাণী প্রচার করতে গিয়ে তারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সহজ-সরল নারীদের বিপথগামী করেছেন। শিক্ষিত, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীরা এই কাজে জড়িয়ে পড়ছেন।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক সন্দেহভাজন নারী জঙ্গি আটকের ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ করে দেশে নারীদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও শঙ্কিত।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা অনুসন্ধানে উদঘাটন হয়েছে যে, পাড়ায়-মহল্লায় ধর্মপ্রচারের এবং ছোট-ছোট সাপ্তাহিক ধর্মসভার আড়ালে কার্যক্রম চালাচ্ছে নারী জঙ্গিরা। বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে নারীদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বের করার বিষয়ে কিছুটা বেগও পেতে হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। পুলিশ বলছে, নিয়মিত নজরদারির পর সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এই নারীদের আটক করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবি ও হিজবুত তাহরির এখন অনেক বেশি নির্ভর করছে তাদের নারী সংগঠকদের ওপর। বেশ কিছুদিন থেকেই নতুন রিক্রুটমেন্ট বা গোপন সভার খবরাখবর দেওয়ার কাজ নারীদের দিয়েই করানো হচ্ছে। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে নেতা-কর্মীরা গা-ঢাকা দিয়ে নারীদের দিয়ে সাংগাঠনিক কাজগুলো সক্রিয় রাখছে।

জানা গেছে, বছর দুয়েক ধরে হিযবুত তাহরীরের নারী সংগঠন কাজ করছে। যদিও ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে রাজধানীসহ সারাদেশে সংগঠনটির কর্মীরা যেমন সক্রিয় আছে, ঠিক তেমনই বাড়ছে নারী কর্মী যাদের তারা মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।

সমাজ বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক সময় সঠিক ইসলামের জন্য নারীরা জীবন দিয়েছেন। সেসব নারীদের বীরত্বগাথা কাহিনীর অপব্যাখ্যা দিয়ে মেয়েদের ভুল পথে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বা এর থেকে দূরে রাখতে এবং যারা জড়িয়ে পড়েছে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।

বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, প্রতিটি মানুষের মধ্যেই সে ছেলে-মেয়ে যে-ই হোক না কেন, তার মধ্যে মরণী শক্তি বিদ্যমান থাকে। তাই ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরও জঙ্গি বা অপরাধ প্রবণতা অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রতিটি কাজেই ছেলে-মেয়ে অংশ নেয়। হোক তা সহজ বা কঠিন থেকে আরও কঠিন।

অধ্যাপক কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, সঠিক ইসলামের জন্য এক সময় নারীদের জীবন দেওয়ার ঘটনা আছে। এই ধরনের কাহিনী বলে মেয়েদের ভুল পথে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তবে সেই সময়ের প্রেক্ষাপট আর এখন এক নয়। এখন ভুল করা হচ্ছে। সেসময়ের নারীদের বীরত্বগাথা এখনকার মেয়েদের ভুলভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে শোনানো হচ্ছে। এতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে তরুণীরা। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জঙ্গিবাদে নারীদের জড়িয়ে পড়ার সংখ্যা খুবই নগণ্য।

অধ্যাপক কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বা এর থেকে দূরে রাখার জন্য এবং যারা জড়িয়ে পড়েছে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারে ইসলামী ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক ও পরিবার। এদের মধ্যে ইসলামী ব্যক্তিত্বরা মূল ভূমিকা রাখতে পারেন। যেহেতু ধর্মের অপব্যাখ্যা হচ্ছে, এ কারণে আলেম সমাজ ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে তাদের জঙ্গিবাদ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন। পাশাপাশি ধর্মীয় উগ্রবাদ, গোড়ামি সম্পর্কে তুলে ধরে শিক্ষকরা সমাজে ভূমিকা রাখতে পারেন। একই সাথে পরিবারও ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিটি পরিবারকেই তার সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। সন্তানের আচরণগত কোন পরিবর্তন হয়েছে কি-না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খবর বাসস।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ

দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে স্বাগতিক ওয়েস্টবিস্তারিত পড়ুন

রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ

যমুনা ফিউচার পার্কে মোবাইলের দোকানে চুরির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভবিস্তারিত পড়ুন

যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা

থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশি নাগরিকদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • ধর্ম উপদেষ্টা: মসজিদে নববীর আদলে গড়ে তোলা হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ
  • রাজশাহীতে মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য ভাঙারির দোকানে
  • ২ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-যশোর-বেনাপোল রুটে ট্রেন চলবে
  • ভরিতে এবার ১,৯৯৪ টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম
  • সংস্কার হলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত কমানো সম্ভব জানালো সিপিডি
  • রাজশাহীতে সমন্বয়ককে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ
  • ড. ইউনূস: খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত
  • দেশের নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দীন
  • ঢাবি ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে শাটল বাস সার্ভিস
  • পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে বন্দুকধারীর গুলি, নিহত ৩৮
  • সায়েন্সল্যাব এলাকা থেকে সিটি কলেজ সরিয়ে নেওয়ার দাবি ঢাকা কলেজের
  • ড. ইউনূস: আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে, এটি ত্রুটিপূর্ণ