শিশুটির কী অপরাধ ছিল?
ছয় বছরের শিশু নূপুর আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তার চোখ-মুখসহ শরীরে ছয়-সাতটি ছররা গুলি লেগেছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, নূপুরের একটি চোখের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
শিশুটির চাচি নাসরিন আক্তার বলেন, তার স্বামী আবুল কালাম আজাদ এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বর পদে নির্বাচন করেছিলেন। তবে তিনি নৌকার মনোনয়ন পাওয়া আবু সাঈদ খানের প্রতিদ্বন্দ্বী সুলতান খাঁর পক্ষে কাজ করেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন ক্ষুব্ধ ছিল। এ ছাড়া গ্রামের সরদার বংশের সঙ্গে মোল্লা ও প্রামাণিক বংশধরদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এসবের জের ধরে শনিবার সরদার পক্ষের লোকজন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে নূপুরের নানি আলেকা বেগম (৪৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান, আহত হয় নূপুর।
ছয় বছরের শিশুটি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। চোখে, মুখে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট সাত-আটটি ছররা গুলির চিহ্ন। এপাশ-ওপাশ করতে গেলেই ব্যথা। কিন্তু প্রশ্ন করতেই সব বলে যাচ্ছে। বড়দের সহিংসতার বলি এই মেয়েটি জানে না, কী অপরাধে তাকে হাসপাতালে আসতে হলো।
গতকাল বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০৬ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় নূপুর আক্তারের সঙ্গে। গত ৪ জুন অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং স্থানীয় দ্বন্দ্বের জের ধরে গত শনিবার পাবনার একটি গ্রামে গুলিবিদ্ধ হয় শিশুটি। ওই সময় তার সঙ্গে থাকা নানি গুলিতে নিহত হন। শিশুটিকে প্রথমে পাবনা সদর হাসপাতাল, এরপর রাজশাহী মেডিকেল, চক্ষু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয় গত রোববার। নূপুর আক্তার পাবনা সদর উপজেলার শহীদ আব্দুস সাত্তার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা শাহাবুদ্দিন প্রামাণিক মালয়েশিয়া প্রবাসী।
ঢাকা মেডিকেলে নূপুরের সঙ্গে আসা চাচা-চাচির কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নূপুর নিজেই কথা বলতে শুরু করে। মেয়েটি বলে, ‘আমি কিছুই বুঝিনি। রাস্তায় ছিলাম। হঠাৎ গুলি। আমার নানি মরে গেল। আমারও চোখেমুখে গুলি লাগল। কিন্তু ওরা আমারে কেন মারল? আমি তো কোনো দোষ করিনি।’ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মেয়েটির শরীরে অনেকগুলো ছররা গুলি। বেশি সমস্যা চোখে। তাকে আবার চক্ষু হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নূপুরের মা আফরোজা খাতুনও গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ফোনে বলেন, ঘটনার পর তার মেয়ে ডান চোখে আর দেখতে পাচ্ছে না। ঘটনার প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেপ্তার দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে এলাকার লোকজন বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে। তারপরও আসামিরা কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
পাবনা সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় সোমবার রাতে কামাল হোসেন, ওসমান সরদার, ইউনুস আলী, সোহেল সরদার, তারেক সরদার, কুরবান আলী, সাইফুল, সাকিলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে নূপুরের পরিবারের অভিযোগ, এরা সবাই ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদের সমর্থক সন্ত্রাসী।
জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ বলেন, ‘এরা আমার লোক হবে কেন? এরা আওয়ামী লীগের লোক। আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান হয়েছি। তাই লোকজন বলছে আমার লোক। আমি পুলিশকে বলেছি, এদের গ্রেপ্তার করেন।’ আসামিরা কেন গ্রেপ্তার হচ্ছে না—জানতে চাইলে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হাসান গতকাল রাতে বলেন, আসামিদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চলছে। খুব শিগগির ধরা পড়বে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন