শিশু আলামিন বর্জ্য বহনে
পরীক্ষা শেষ হল, শেষ হল হ্যালোর বই উৎসবও। হাতে তেমন কোন কাজ নাই তাই দেরি না করেই বেরিয়ে পড়লাম খাতা-কলম নিয়ে ঢাকার লালবাগে। উদ্দেশ্য ওখানকার শিশুদের সাথে কথা বলা।
পথে বেশ কজন শিশুর সাথে দেখা হল, কথা হল, গল্প হল কিন্তু একজন শিশুর দিকে আমার দৃষ্টি আটকে গেল। ময়লা আবর্জনা ভর্তি ডাস্টবিনের মধ্যে দাঁড়িয়েও তার নির্মল হাসি আমাকে আকৃষ্ট করল। কাছে গিয়ে কথা শুরু করলাম। খুব লাজুক ও। প্রথমে আমার সাথে কথা বলছিল না কিন্তু যখন তাকে ছোট ভাইয়ের মত কাছে টেনে নিলাম ধীরে ধীরে সে জড়তা কাটিয়ে উঠল।
নাম তার আলামিন, বয়স হবে ১১/১২ বছর। তার বাড়ি চর এলাকায়। ও খুব শান্ত আর কথাও খুব বেশি বলে না। তার মা চায়ের দোকান চালান আর বাবাকে সে কখনও দেখেনি। শুধু জানে তার বাবার নাম তোফাজ্জল মিয়া। মায়ের মুখে শুনেছে যে বাবা ওর জন্মের আগেই তার মাকে ছেড়ে চলে যায়। তার বাবা কোথায় আছে সে জানে না। বাবার কথা মনে হলে তার একটুও মন খারাপ হয় না। কারণ বাবাকে নিয়ে তার কোনো স্মৃতি নাই।
আর লেখাপড়ার কথা জানতে চাইলে আলামিন বলল, “ পড়বার চাই, কিন্তু ইশ্কুলে যাইতে ভালো লাগে না।”মা ছাড়াও আলামিনের বড় এক ভাই আছে। আগে কারখানায় কাজ করত, এখন পটকা বানানোর কাজ করে। তার ভাইয়ের বয়স ১৫/১৬ হবে। আলামিন আট বছর বয়স থেকেই বাড়ি বাড়ি ময়লা নেয়ার কাজ করে। প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত সে বিভিন্ন বাসা থেকে ময়লা সংগ্রহ করে এনে ডাস্টবিনে ফেলে।
দুপুর দুটা বাজে। কিন্তু ও তখনও সকালের খাবার খায়নি। সকালে তার নাকি খেতে ইচ্ছেই করে না। তাই প্রায়ই মায়ের কথা না শুনে না খেয়েই ঘর থেকে কাজে চলে আসে। এই কাজ করেসে মাসে তিন হাজার টাকা পায়। আমি এর আগে যত শিশুশ্রমজীবীর সাক্ষাৎকার নিয়েছি তাদের কারোরই এত রোজগারের কথা শুনিনি। যদি কোনদিন সে সকালে খায় তবে ভাতের সাথে ডাল, আলু ভর্তা, মরিচ ভর্তা ও পেঁয়াজ খেতে সে ভালবাসে।
গরমের দিনে তার অনেক কষ্ট হয় কারণ বাসায় ফ্যান নাই। রাতে ঘুমানোর সময় জানালা-দরজা খুলে দিলে মশা কামড়ায়। সে তার মায়ের সাথে খাটে ঘুমায় এবং তার বড় ভাই মেঝেতে। শীত ওর প্রিয় ঋতু। শীতের কম্বলের কথা জিজ্ঞেস করতেই সে হেসে বলল, “আমাগো বাড়িতে কম্বলের অভাব নাই। তবে বেশি শীত পড়লে আমরা লাকড়ি জ্বেলে আগুন তাপাই।” আলামিন খেলতে পছন্দ করে না। বিকালে তার ময়লা ফেলার কাজ শেষ হলে সন্ধ্যেয় কাঠের দোকানে কাজ করতে যায়। রাতে বাসায় ফিরতে কোন কোন দিন এগারোটাও বাজে।
বেতনের সব টাকা সে তার মায়ের হাতে তুলে দেয়। মায়ের হাতে টাকা না দিয়ে অন্যকিছু করবে সেটা ভাবতেও পারে না আলামিন। বড় হয়ে কি করতে চায় এটা নিয়ে সে ভাবেনি। শুধু জানে কাজ করতে হবে, দিনশেষে মায়ের সাথে খেয়ে ঘুমাবে আর মাস শেষে মায়ের হাতে টাকা দিতে হবে। এর থেকে বেশি সে কিছু জানেও না আর বোঝেও না। আলামিন সবচেয়ে বেশি উপভোগ করে ঈদের সময়টা। প্রতি বছর সে তার মায়ের সাথে ঈদের কেনাকাটা করে। তার বড় ভাইও তাদের সাথে থাকে। সবশেষে একটা কথা শুনে অবাক হলাম যখন বলল যে বড় হয়ে সে কারখানার মালিক হতে চায়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
কল-কারখানায় কোনো শিশুশ্রম নেই: প্রতিমন্ত্রী
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, প্রতিষ্ঠানিকবিস্তারিত পড়ুন
বেনাপোলের কিশোরী জোনাকির মরদেহ যশোরে উদ্ধার
যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়া মডেল মসজিদের পাশে একটি পুকুর থেকেবিস্তারিত পড়ুন
শিশুর স্কুল থেকে শেখা বদভ্যাস থামাবেন যেভাবে
স্কুল থেকে শিশুরা জীবনের দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকে। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নিয়মকানুনবিস্তারিত পড়ুন