শিশু সাঈদ হত্যা মামলার রায় আজ
সিলেটের আলোচিত ৯ বছরের শিশু আবু সাঈদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ সোমবার। সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রশিদ রোববার রায়ের দিন ধার্য করেন। হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ৮ মাসে রায় ঘোষিত হচ্ছে।
চলতি বছরের ১১ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট নগরীর রায়নগর থেকে স্কুলছাত্র আবু সাঈদকে অপহরণ করা হয়। এরপর ১৪ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় নগরীর বিমানবন্দর থানা পুলিশের কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুলের কুমারপাড়ার ঝর্ণারপাড়ের বাসার ছাদ থেকে সাঈদের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়।
সিলেট নগরীর দর্জিবন্ধ বসুন্ধরা এলাকার মতিন মিয়ার ছেলে ও রায়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র সাঈদকে স্কুল থেকে ফেরার পথে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর সাঈদের বাবা ও মামার কাছে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অপহরণকারীরা। অন্যথায় সাঈদকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেয় তারা। এরপর সাঈদের বাবা ও মামা কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
একইসঙ্গে অপহরণকারীদের সঙ্গেও চলতে থাকে কথাবার্তা। পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই জানিয়ে চলে দর কষাকষি। শেষ পর্যন্ত দুই লাখ টাকায় সম্মত হয় অপহরণকারীরা। টাকা নিয়ে সিলেট নগরীর বাইশটিলা এলাকায় যাওয়ার পর ফোন দিয়ে অপহরণকারীরা বলেন, ‘বিষয়টি পুলিশকে কেন জানানো হলো?’ তারা সাঈদকে হত্যার হুমকি দিয়ে ফোন রেখে দেয়। অপহরণের তিন দিন পর ১৪ মার্চ দিবাগত রাতে সাঈদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
অপহরণকারীদের মোবাইল ফোন ট্রাক করে কনস্টেবল এবাদুরের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ। পরে তাকে আটক করা হয়। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই র্যাবের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা, সিলেট জেলা ওলামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম রাকিবকে আটক করে পুলিশ। তবে পলাতক থাকে জেলা ওলামী লীগের প্রচার সম্পাদক মাহিব হোসেন মাসুম।
কনস্টেবল (বর্তমানে বরখাস্ত) এবাদুর রহমান এক সময় সাঈদদের পাশের বাসায় ভাড়া থাকতেন। সেই সুবাধে সাঈদের পরিবারের সবার সঙ্গে পরিচয় ছিল তার। আবু সাঈদ তাকে ‘মামা’ ডাকত। সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা মতিন মিয়া বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আটককৃত তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৬ মাস পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর সিলেট মহানগর হাকিম ১ম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) আবদুল আহাদ চৌধুরী। মামলাটি তদন্ত করেন কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসাইন। গত ৭ অক্টোবর অভিযোগপত্রের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
গত ২৯ অক্টোবর সাঈদ অপহরণ ও হত্যা মামলা সিলেট মহানগর হাকিম প্রথম আদালত থেকে সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন ট্র্যাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ওইদিন ৮ নভেম্বর চার্জ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত। কিন্তু ৮ নভেম্বর চার্জ গঠিত হয়নি। তবে ওইদিন পলাতক থাকা মাহিব হোসেন মাসুমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি এবং মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। পরে ১০ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে মাসুম জামিন আবেদন জানালেও আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
পরে ১৭ নভেম্বর সাঈদ অপহরণ ও হত্যা মামলায় চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন করেন। ওই চারজন হচ্ছেন নগরীর বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল (বরখাস্তকৃত) এবাদুর রহমান পুতুল, র্যাবের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা, সিলেট জেলা ওলামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম রাকিব ও প্রচার সম্পাদক মাহিব হোসেন মাসুম।
গত ১৯ নভেম্বর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। টানা ৬ কার্যদিবসে সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে গত ২৬ নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। গতকাল রোববার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ধার্য করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি আব্দুল মালেক জানান, সাক্ষী ও যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে চার আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তিই আশা করছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শেখ আশরাফুল আলম জানান, মামলায় দুর্বল সাক্ষীসহ বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। তিনি আশা করছেন আসামিরা খালাস পাবেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন
ময়মনসিংহে ওসি-এসপি’র বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর
সরকারি দায়-দায়িত্ব ও কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের যথাযথবিস্তারিত পড়ুন
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জনগণের সাথে রায়েছে বিচার বিভাগ
দেশের মানুষের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিচার বিভাগ জনগণের সঙ্গে আছেবিস্তারিত পড়ুন