শীতলক্ষ্যায় লাশের পরে লাশ
ব্রিটিশশাসনামলে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি ছিল স্বচ্ছ। এ কারণে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যার দুই তীরে সে সময় গড়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী মসলিন শিল্প, পাট শিল্প। সেই শীতলক্ষ্যার চেহারা বদলে গেছে।
শীতলক্ষ্যা আজ অপরাধীদের জন্য হয়ে উঠেছে লাশ ফেলার নিরাপদ জায়গা। এই নদীতে একের পর এক মিলছে লাশ। সর্বশেষ একটি কারখানার শ্রমিকের লাশ এ নদীতে ভেসে ওঠে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আজিবপুর এলাকায় ১০ ফেব্রুয়ারি একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরির এক শ্রমিকের লাশ নদীতে ভাসতে দেখে স্থানীয় জনতা। পুলিশের ধারণা, আঘাত করে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়া হয়েছে। লাশটি কয়েকদিন পানিতে থাকায় চেহারা চেনার উপায় ছিল না। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে নিয়ে যায়। বলতে গেলে এ নদীতে প্রায় সময়ই ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতার কোন না কোন লাশ ভেসে ওঠে। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল পৌর কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত জন অপহৃত হন। পরে তাদের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে। ২০১৩ সালের ৮ মার্চ মেধাবী স্কুলছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দি করে ফেলে দেয়া হয় শীতলক্ষ্যা নদীতে। এছাড়া ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহত ২২ জনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়া হয় বলে প্রচার আছে। এসব ঘটনা স্থানীয়দের ভাবিয়ে তোলে।
টানবাজার সংলগ্ন নদীর পাড়ে কথা হয় ৬০ ঊর্ধ্ব রহিম বক্সের সাথে। তার পাশে থাকা কেউ কেউ বলতে থাকেন, কালো পানিতে এখন রক্তের ছোঁয়া লেগেছে। একের পর এক লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হচ্ছে।
নদীতে লঞ্চ, নৌকা ও বোট চলাচল স্বাভাবিক। নৌকায় এক পাড়ের মানুষ আরেক পাড়ে যাচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জে ঢাকা বাস স্ট্যান্ডের দিকের ঘাট দিয়ে একটি নৌকায় করে বন্দরে যাওয়ার সময় অনেকের মুখেই শুনতে পাওয়া যায়, এই কি শীতলক্ষ্যা নদী! পানি এমন কালো রঙ ধারণ করেছে!
নৌকার মাঝি রহমান বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর এ নদীতে নৌকা চালাই। এখন নদীর পানি যা হয়েছে তা আর কি বলবো। যেমন কালো রঙ তেমনি এর দুর্গন্ধে নৌকা চালানো দুস্কর হয়ে পড়েছে। কিন্তু কি আর করা, পেটতো মানে না!
এক যাত্রী বলেন, ‘নদীতে যে পরিমাণ লাশ ভাসে তাতে এই পানির সঙ্গে রক্তও মিশে যায়।
জেলা আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ৮ মাসে নারায়ণগঞ্জে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে ২৩ শিক্ষার্থীকে। সবারই মৃতদেহ পাওয়া গেছে শীতলক্ষ্যায়। এদের মধ্যে মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী, ৯ বছরের শিশু মোস্তফা, ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী সাকিন ও জাহিদুল, মাসদাইর স্কুলের শিক্ষার্থী সিয়াম ও ফতুল্লার শিশু ইমনও রয়েছে। আর গত বছর উদ্ধার হয়েছে দুই শতাধিক লাশ। সবই পাওয়া গেছে শীতলক্ষ্যায়।
বন্দরের বাসিন্দা ঠেঙ্গা মিয়া বলেন, ‘আগে নদীতে গোসল করলেও এখন আর করি না। এখানে কেবল লাশ পওয়া যায়। বাপ-দাদার মুখে শুনেছি, এই এলাকায় ইংরেজ আমলে বাণিজ্য নগরী গড়ে ওঠে। সে সময় জাহাজ নিয়ে ব্রিটিশ ও বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা এখানে আসতেন বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে। তারা এখানে যতদিন থাকতেন সবাই এ নদীর পানি পান করতেন। পানি এতই স্বচ্ছ ছিল যে, গভীর পর্যন্ত দেখা যেত।’
স্থানীয়রা জানান, শীতলক্ষ্যা আজ তাদের কাছে আতঙ্কের নদী। প্রতিদিনই তাদের মনে হয়, এই বুঝি লাশ ভেসে উঠলো।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহিদউদ্দিনের। নিজ কার্যালয়ে তিনি বলেন, ‘জেলার বাইরে হত্যা করে লাশ এনে নারায়ণগঞ্জে হাইওয়ে এবং নদী এলাকায় ফেলে রাখা হচ্ছে। অপরাধীরা ওই স্থানগুলোকে লাশ ফেলার নিরাপদ জায়গা হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সতর্ক আছে। যেই অপরাধ করুক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
অবশ্য শীতলক্ষ্যা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আন্দোলন সংগ্রাম কর্মসূচি পালন করছে। ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, ‘এই নদীটি এখন লাশ ফেলার নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। একটি মহলের কারণে এখানে অপরাধীদের আনাগোনা সবসময়ই চলে। তাদের কারণেই একের পর এক লাশ এখানে পড়ছে। লাশ থাকলে রক্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। হত্যাকাণ্ড রোধে পুলিশ প্রশাসনকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন