শনিবার, অক্টোবর ১৯, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

শূন্য হাতে ঢাকায় এসেছিলেন আজকের পূর্ণ নায়করাজ

নতুন জীবন গড়তে একজন সাধারণ মানুষ আবদুর রাজ্জাক স্ত্রী ও শিশু সন্তান বাপ্পাকে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন শূন্য হাতে। সেখান থেকে কঠিন জীবন সংগ্রামের পর সফল হয়ে তিনি আজকের নায়করাজ। তাকে বলা হয় চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী। অসীম মনোবল, অমানষিক পরিশ্রম আর সাধনার মাধ্যমে তিনি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। এই নায়করাজের ৭৫তম জন্মদিন আজ।

১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজ্জাকের জন্ম কলকাতার সিনেমাপাড়া টালিগঞ্জে। জন্মের পর থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে সখ্যতা। মঞ্চের সঙ্গে জড়িত থাকলেও স্বপ্ন ছিল সিনেমাকে ঘিরে। টালিগঞ্জের সিনেমাশিল্পে তখন ছবি বিশ্বাস, উত্তম কুমার, সৌমিত্র, বিশ্বজিতদের যুগ। সেখানে তার অভিনয়ে সুযোগ পাবার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না।

এর মধ্যে শুরু হলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এই দাঙ্গাই তার জীবনের সঠিক পথ বাতলে দেয়। দাঙ্গার কারণে কলকাতায় থাকাটাই মুশকিল হয়ে পড়ে। তখন এক শুভাকাঙ্খী রাজ্জাককে পরামর্শ দিলেন ঢাকায় চলে আসতে। বললেন, ঢাকার চলচ্চিত্র নতুন করে যাত্রা শুরু করেছে। সেখানে গেলে হয়তো কিছু একটা হবে। ভদ্রলোক ঢাকার প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা আবদুল জব্বার খানের পরিচিত। তিনি রাজ্জাককে পাঠালেন তার কাছে একটা চিঠি দিয়ে। এরপর রাজ্জাক ঢাকা এলেন এবং জয় করলেন।

কমলাপুরে থাকতেন আবদুল জব্বার খান। রাজ্জাক স্ত্রী-পুত্র নিয়ে ঢাকায় এসে কমলাপুরেই প্রথমে বাসা নেন। জব্বার খান ইকবাল ফিল্মস লিমিটেড-এ কাজ করার সুযোগ করে দেন রাজ্জাককে। সহকারী পরিচালকে কাজ। কামাল আহমেদের সহকারী পরিচালক হিসেবে তিনি প্রথম কাজ করেন ‘উজালা’ ছবিতে। শুরু হলো ঢাকায় রাজ্জাকের চলচ্চিত্র জীবন। সহকারী পরিচালক হলেও অভিনয়ের নেশা মাথায়। এর মধ্যে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেন বেশকিছু ছবিতে। এসব ছবির মধ্যে ‘ডাক বাবু’, ‘১৩নং ফেকু ওস্তাগার লেন’, ‘আখেরী স্টেশন’ উল্লেখযোগ্য।

এক সময় জহির রায়হানের সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ভাগ্য খুলে যায় এখান থেকেই। বেশ কয়েকটি ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পর ভাগ্যচক্রে হঠাৎ একদিন নায়ক হবার সুযোগ পেয়ে যান রাজ্জাক। লোককাহিনী নিয়ে জহির রায়হান তখন ‘বেহুলা’ নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ‘বেহুলা’ হবেন সুচন্দা। কিন্তু লক্ষ্মীন্দরের চরিত্রে কাউকেই তার পছন্দ হচ্ছে না। ওই সময়ে যারা একটু নামি দামি শিল্পী তারা প্রায় পুরো ছবিতেই কংকাল হয়ে শুয়ে থাকতে চাইলেন না।

এমন সময় হঠাৎ একদিন জহির রায়হান বললেন, রাজ্জাক আপনিই আমার ছবির নায়ক। রাজ্জাকের চেহারার মধ্যে তখন কলকাতার রোমান্টিক ছবির নায়ক বিশ্বজিৎ-এর ছায়া খুঁজে পেতেন অনেকে। যেই বলা সেই কাজ। রাজ্জাক হয়ে গেলেন ‘বেহুলা’ ছবির নায়ক। সুযোগ পেয়ে রীতিমতো জ্বলে উঠলেন। জহির রায়হানের সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় অসাধারণ লক্ষ্মীন্দর হয়ে দর্শকদের সামনে উপস্থিত হলেন। সঙ্গে অপূর্ব সুন্দরী বেহুলারূপী সুচন্দা। ১৯৬৬ সালে মুক্তি পেল ‘বেহুলা’। ছবি সুপারহিট। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পেল একজন নায়ক, যিনি পরবর্তী সময়ে এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের অপরিহার্য নায়কে পরিণত হলেন।

ঢাকার সিনেমা হলগুলোতে তখন পাক-ভারতীয় ছবির দাপট। ভারতের রাজকাপুর, দিলীপ কুমার, নার্গিস, পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী, জেবা, সুধির, শামীম আরা, ওয়াহিদ মুরাদ এবং কলকাতার ছবি বিশ্বাস, উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, বিশ্বজিৎ, সৌমিত্রদের ছবির সঙ্গে পালা দিয়ে চলতে শুরু করল ঢাকার নির্মাতাদের নির্মিত ছবি। আব্দুল জব্বার খান, রহমান, শবনম, খলিল, ফতেহ লোহানী, খান আতা, সুমিতা দেবী, আনোয়ার হোসেন, সুচন্দাদের সঙ্গে যোগ হলো আরো একটি নাম ‘রাজ্জাক’।

দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এখানে নির্মিত বেশিরভাগ ছবির নায়ক রাজ্জাক। দুই ভাই, আবির্ভাব, বাঁশরী, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, যে আগুনে পুড়ি, পায়েল, দর্পচূর্ণ, যোগ বিয়োগ, ছদ্মবেশী, জীবন থেকে নেয়া, মধুর মিলন ইত্যাদি ছবির সাফল্যে রাজ্জাক হয়ে ওঠেন চলচ্চিত্রের অপরিহার্য নায়ক।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে পাক-ভারতীয় ছবির প্রদর্শন বন্ধ হলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব যাদের উপর বর্তায় রাজ্জাক তাদের একজন। রহমান, আজীম, আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে হাতে হাত রেখে, রাজ্জাক পথ চলতে শুরু করেন। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় রহমান একটি পা হারালে চলচ্চিত্রের রোমান্টিক নায়কের শূন্যতা রাজ্জাক একাই সামাল দেন। রাজ্জাক অসীম সাহস নিয়ে একের পর এক ছবিতে অভিনয় করতে থাকেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম মুক্তি পায় রাজ্জাক অভিনীত ছবি ‘মানুষের মন’। মোস্তফা মেহমুদ পরিচালিত এই ছবির ব্যবসায়িক সাফল্যে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নতুনভাবে জেগে উঠে। সেই সঙ্গে শুরু হয় নায়ক রাজ্জাকের যুগ। এই সময় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রথম ছবি চাষী নজরুল ইসলামের ‘ওরা ১১ জন’, এসএম শফির ছন্দ হারিয়ে গেল’, বাবুল চৌধুরীর ‘প্রতিশোধ’ এবং কাজী জহিরের ‘অবুঝ মন’ ছবিতে অভিনয় করে রাজ্জাক হয়ে যান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আইকন।

১৯৭৩ সালে জহিরুল হকের ‘রংবাজ’ ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করে রাজ্জাক বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন ধারা প্রবর্তন করেন। তিনি সূচনা করেন চলচ্চিত্রের আধুনিক অ্যাকশন যুগেরও। ‘রংবাজ’ দিয়েই রাজ্জাক তার অভিনয় জীবনে বৈচিত্র নিয়ে আসেন। দর্শকদের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দিতে নিজে প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার আগেই বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেন।

এসব ছবির মধ্যে বেঈমান, ঝড়ের পাখি, অনির্বান, স্লোগান, এখানে আকাশ নীল, অতিথি, আলোর মিছিল, অবাক পৃথিবী, ত্রিরত্ন উল্লেখযোগ্য। শুধু অ্যাকশান রোমান্টিক নয়, অভিনয় করেছেন ত্রিরত্নের মতো কমেডি ছবিতেও। এমন কী নতুনদের সুযোগ করে দিতে সেক্রিফাইসিং চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যেমন আজিজুর রহমানের ‘অতিথি’ ছবিতে তখনকার নতুন অভিনেতা আলমগীরকে সুযোগ করে দেন। একইভাবে নারায়ন ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ ছবিতেও ফারুককে সুযোগ করে দেন। এর কারণ একটাই, নতুন নায়ক উঠে এলে তার উপর চাপটা একটু কমবে এবং আলমগীর, ফারুক দুজনেই কিন্তু উঠে এসেছে, জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

এক সাক্ষাৎকারে রাজ্জাক বলেন, ‘১৯৭৪ সালে নতুন পরিচালক মাসুদ পারভেজ পরিচালিত প্রথম ছবি ‘মাসুদ রানা’য় আমি অতিথি শিল্পী হিসেবে একটি গানের দৃশ্যে অভিনয় করেছি। ছবির নায়ক সোহেল রানারও প্রথম ছবি এটি। ছবিতে ‘মনেরই রঙে রাঙাব বনের ঘুম ভাঙাব’ গানের সঙ্গে নেচে-গেয়ে আমি আরেকজন নতুন শিল্পীর উত্তরণে কিছুটা হলেও ভূমিকা রেখেছি। ওই সময় আমার যে অবস্থান তাতে করে কোনো নতুন নায়কের ছবিতে অতিথি শিল্পী হিসেবে কাজ করার কথা নয়। এই প্রজন্মের কোনো জনপ্রিয় নায়ক করবে না, কিন্তু আমি করেছি। এসব করার পেছনে একটাই কারণ ছিল আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পে নায়ক-নায়িকার সংখ্যা বাড়িয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’

১৯৭৭ সালে রাজ্জাক যপরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ‘অনন্ত প্রেম’ দিয়ে। পরবর্তীতে ‘বদনাম’, ‘সৎ ভাই’, ‘চাপাডাঙ্গার বউ’ এবং ‘বাবা কেন চাকর’ নির্মাণ করেন। রাজ্জাক আপদমস্তক চলচ্চিত্রের মানুষ তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ছোট ছেলে সম্রাটকে সিনেমায় নিয়ে আসা। প্রথম ছবিতেই সফল সম্রাট এখন চলচ্চিত্রের ব্যস্ত নায়ক। রাজ্জাক তার দুই পুত্র বাপ্পারাজ এবং সম্রাটকে নিয়ে এক সঙ্গে অভিনয় করেছেন ‘কোটি টাকার ফকির’ ছবিতে। দুই ছেলেকে নিয়ে অভিনয় করাটাকেই রাজ্জাক তাঁর জীবনের সেরা প্রাপ্তি হিসেবে মনে করেন। তিনি বলেন, আমার কোনো অপ্রাপ্তি নেই। তার একটা কষ্ট আছে, সেটা হলো বড়মেয়ে শম্পার অকাল মৃত্যু।

২০১৫ অর্থাৎ গত বছরের ২৮ জুন বাংলা চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তি অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি হন। শারীরিক অবস্থার সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখতে হয়। এখন তিনি সুস্থ। হয়তোবা মানুষের ভালবাসার জন্যই স্রষ্টা তাকে আমাদের মাঝে রেখে দিয়েছেন। তিনি দীর্ঘজীবী হোন- এটাই প্রত্যাশিত।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

সমুদ্র পাড়ে দুর্গারূপে নওশাবা

শুধু ঈদ কিংবা পূজা নয়, বিশেষ ধর্মীয় দিন উপলক্ষে ফটোশুটেবিস্তারিত পড়ুন

শুল্কমুক্ত গাড়ি খালাস করেছেন সাকিব-ফেরদৌস, পারেননি সুমনসহ অনেকে

আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের জন্য আমদানি করাবিস্তারিত পড়ুন

আলোচিত নায়িকা পরীমনির পরিবার সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানতেন?

গভীর রাতে সাভারের বোট ক্লাবে গিয়ে যৌন হেনস্তা ও মারধরেরবিস্তারিত পড়ুন

  • বাবা দিবসে কাজলের মেয়ে শৈশবের ছবি পোস্ট করলেন
  • চলে গেলেন অভিনেত্রী সীমানা
  • শাকিবের সঙ্গে আমার বিয়ের সম্ভাবনা থাকতেই পারে: মিষ্টি জান্নাত
  • এবার পরিবারের পছন্দে বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন শাকিব খান
  • বুবলী আগে থেকেই বিবাহিত, সেখানে একটি মেয়েও আছে: সুরুজ বাঙালি
  • এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা
  • অভিনেতা ওয়ালিউল হক রুমি মারা গেছেন
  • এক রোমাঞ্চকর অসমাপ্ত ভ্রমণ গল্প
  • পরীমণিকে আদালতে হাজির হতে সমন
  • শাকিব ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পুরুষের জায়গা নেই: বুবলী
  • সিনেমা মুক্তি দিতে হল না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন নায়ক
  • বিশাখাপত্তনমে কয়েকদিন