শেরপুরের সোহাগপুর গণহত্যা দিবস আজ
শেরপুর : ২৫ জুলাই, ১৯৭১ সালের এদিনে কৃষকের ছদ্মবেশে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা লুকিয়ে আছে এই অজুহাতে পাক হানাদার বাহিনী চালায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। পাখির মতো নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে ১শ ৮৭ জন নিরীহ পুরুষ ও শিশুকে।
স্বাধীনাতার পর পুরুষশূন্য ওই গ্রামটির নাম হয় ‘বিধবা পল্লি’। ৪৫ বছর ধরে বুকে পাথরসমান কষ্ট চেপে স্বামী ও সন্তানহারা ওই বিধবা পল্লিতেই কালের সাক্ষী হয়ে আজো বেঁচে আছেন ৩২ বিধবা। সম্প্রতি এ বিধবা পল্লির হত্যাযজ্ঞের মূল নায়ক আলবদর কমান্ডার কামারুজ্জামানের বিচার সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে বিধবারা। এদের মধ্যে একজন সমেলা বেওয়া জানান, স্বামী হত্যার বিচার পাইছি, এহন শান্তিতে মরবার পারমু। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৫ বছর পরেও সেই বিধবা পল্লির ১৩ জন বীরাঙ্গনার মধ্যে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেলেও বাকি ৮ জনের এখনো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়ায় তাদের কণ্ঠে বেজে ওঠে আক্ষেপের সুর।
শেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে নালিতাবাড়ি উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রাম। ৭১ সালের ২৫ জুলাই সোহাগপুর গ্রামের মানুষের জন্য বীভৎস একটি দিন। ওই দিন সকাল ৭টায় সোহাগপুরবাসীর ওপর নেমে এসেছিল পাকবাহিনী ও রাজাকারদের আকস্মিক এবং নারকীয় নির্যাতন ও গণহত্যা।
সোহাগপুর গ্রামে কোনো মুক্তিযোদ্ধা ছিল না। তবে পার্শ্ববর্তী গ্রাম বারুয়াজানীর ঘরে ঘরে ছিল মুক্তিযোদ্ধা। তাই ওই গ্রামবাসী কখনো ভাবেনি পাকবাহিনীর হাতে তারা আক্রান্ত হবে। অনেকটা শান্তিতে দিন যাচ্ছিল তাদের। ২৫ জুলাই সকালে যখন গ্রামবাসীরা আমন ধান রোপনের কাজে ব্যস্ত ছিল ঠিক তখন ওই দিকে ব্যস্ত ছিল পাকবাহিনী আর রাজাকার বাহিনীরা।
স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনীরা গ্রামটির তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। কেউ কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই যাকে যেভাবে পেয়েছে সেখানেই নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছ। এখানেই শেষে নয়, বর্বর হানাদার বাহিনীর দলকে দেখে নিরীহ গ্রামবাসীরা যখন ঘরে এসে আত্মগোপন করছিল তাদের ঘর থেকে বের করে স্ত্রী-সন্তানদের সামনেই পাখির মতো গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মম নির্যাতনের মধ্য দিয়ে হত্যা করা হয় ১৮৭ জন নীরিহ মানুষকে। শিশু-পুরুষ কেউই রেহাই পায়নি এ হত্যাযজ্ঞ থেকে। এই ভয়াবহতায় এবং নিষ্ঠুরতায় নির্বাক হয়ে গিয়েছিল গায়ের মানুষ, পশু-পাখি সবাই। পাক বাহিনী গ্রাম ছেড়ে চলে গেলে গ্রামবাসীরা ধীরে ধীরে ফিরে আসে। এখানে সেখানে পরে থাকা লাশ মশারি, শাড়ি, কলাপাতা পেঁচিয়ে কোনোমতে মাটি চাপা দিয়ে রাখে।
এক সময় দেশ স্বাধীন হয়। স্বামীহারা ওইসব পরিবারের শুরু হয় কঠিন জীবন সংগাম। পুরুষশূন্য এই গ্রামটিকে নামকরণ করা হয় ‘বিধবা পল্লি’।
সর্বশেষ ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর ওই সোহাগপুর বিধবা পল্লিতে স্থানীয় এমপি ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সহযোগিতায় ৬১ জন বিধবা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভাতা প্রদান করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান। এ সময় ট্রাস্ট ব্যাংকের সহায়তায় ৩৭ জন বিধবাকে আজীবন ১ হাজার টাকা করে ভাতা এবং বাকি ২৪ জন শহীদ পরিবারকে ৫ বছর পর্যন্ত ১ হাজার টাকা করে ভাতা প্রদান করা হয়। সেইসঙ্গে ৬১ জন বিধবা ও শহীদ পরিবার সদস্যদের মধ্যে এককালীন আরো ৭ হাজার টাকা এবং প্রত্যেককে একটি করে শীতের চাদর ও সোলার চার্জার বাতি দেয়া হয়।
তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথবাহিনীর দেয়া প্রকল্পগুলো চালু থাকাবস্থায় বিধবারা একটু ভালো ছিল। তাই তারা ওই প্রকল্পটি পুনরাই চালু করে এর সঠিক তদারকির জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেন স্বামী সন্তানের শোক বুকে চেপে একটু ভালো-মন্দ খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারে এটাই চায় সোহাগপুরের বিধবা পল্লির বিধবারা। এ বিধবা পল্লির ১৩ জন বিধবার মধ্যে ৫ জন বীরঙ্গনা উপধি পেলেও বাকি ৮ জন স্বীকৃতির আশায় বুক বেঁধে আছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নকলা ইউএনও’র বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ
তথ্য প্রদানে সহযোগিতা না করে তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগকে বাঁধাগ্রস্তবিস্তারিত পড়ুন
পরকীয়ার সন্দেহে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে পাষন্ড স্বামী
শেরপুরে মাসুদা বেগম (২২) নামের এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যারবিস্তারিত পড়ুন
শিশু রনিকে যুবক বানিয়ে মামলা, অবশেষে জামিন
শেরপুর সদর উপজেলার বেতমারী-ঘুঘরাকান্দি ইউনিয়নে একটি মারপিটের মামলায় রনি নামেবিস্তারিত পড়ুন