সংস্কার হয়নি দেশের ১৪৪ মৃত্যুফাঁদের
মহাসড়কে যে সব স্থানে দুর্ঘটনা বেশি হয়, তেমন ২৭৭টি মৃত্যুফাঁদ (ব্ল্যাক স্পট) চিহ্নিত করেছিল সরকার। এর মধ্যে খুব বিপজ্জনক হিসেবে ১৪৪টি স্থানকে চিহ্নিত করেছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। এসব স্থানে রাস্তার বাঁক সোজা করার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পে বিরাজ করছে চরম ধীরগতি।
দেশের জাতীয় মহাসড়কের (ন্যাশনাল হাইওয়ে) ১৪৪টি ব্ল্যাক স্পট সংস্কার ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘ইম্প্রুভমেন্ট অব রোড সেফটি অ্যাট ব্ল্যাক স্পটস অন ন্যাশনাল হাইওয়ে’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রকল্পটি একনেকের (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) বৈঠকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ১৬৫ কোটি টাকা। পুরোপুরি সরকারি খাত থেকে এ ব্যয় মেটানো হচ্ছে।
জানা গেছে, বুয়েট ১২৬টি দুর্ঘটনাপ্রবণ বাঁক চিহ্নিত করে। তথ্য অনুসারে, এর মধ্যে সর্বোচ্চ রয়েছে রংপুরে ৩৫টি। ঢাকা ও রাজশাহীতে ৩৪টি করে ব্ল্যাক স্পট। তবে সব থেকে কম ব্ল্যাক স্পট রয়েছে বরিশালে, মাত্র ২টি। এছাড়া কুমিল্লায় ৮টি, সিলেটে ১৪টি, গোপালগঞ্জে ৬টি এবং খুলনায় ১১টি ব্ল্যাক স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে।
বুয়েটের চিহ্নিত ১১৪টি স্পটের সঙ্গে আরো ১৮টি স্পট যোগ করে মোট ১৪৪টি বাঁক সংস্কারের লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় পথচারীদের ক্রসিংয়ের উন্নয়ন, মহাসড়কগুলোকে নিরাপদ করতে ইন্টারসেকশন উন্নয়ন, সড়কের বাঁক সরলীকরণ, ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন স্থান সংস্কার, সিগন্যালিং, রোড মার্কিং স্থাপন, সাইন সিগন্যাল, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা অপসারণেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ২০১৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পে ৮টি সড়ক জোন অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে চরম ধীরগতি বিরাজ করছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি মাত্র ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ। অথচ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের জুনে।
জানা গেছে, প্রকল্পের অধীনে এখনো অধিকাংশ স্থানে কাজের দরপত্র আহ্বানই শুরু হয়নি। আবার কাজ শেষ হওয়া স্পটের কাজের মান নিয়েও এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
বলা হচ্ছে, জোড়াতালি দিয়ে এসব কাজ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সওজের প্রকৌশলীদের তদারকির অভাব ছিল। ফলে দুর্ঘটনা রোধে নেওয়া উদ্যোগটির মূল উদ্দেশ্য এখন ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম।
এর মধ্যে আবারো ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর পথে হাঁটছে প্রকল্পটি। এতে করে যথাসময়ে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ আবদুল হামিদ বলেন, ‘প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা রয়েছে আমাদের।’ তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে প্রকল্পের সংশোধন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা জমা পড়েছে। আমরা আশা করছি, দ্রুততম সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।’
এদিকে সড়ক যোগাযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থার তথ্য পর্যালোচনা করে জানা গেছে, দেশে মোট ব্ল্যাক স্পটের সংখ্যা ২২৭টি। এর মধ্যে ২৭টি স্থানে সওজের রক্ষণাবেক্ষণ খাত থেকে মেরামত করা হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম ৪ লেন প্রকল্পের আওতায় ৩১টি, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ ৪ লেন প্রকল্পের আওতায় ১০টি এবং জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা ৪ লেনের আওতায় ১৫টি স্থানে সংস্কার কাজ করা হবে।
কিন্তু প্রকল্পভুক্ত স্পটগুলোর অধিকাংশই এখনো অরক্ষিত রয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা জোনের আওতায় ঢাকায় ২টি ও মানিকগঞ্জে ১৯টি ব্ল্যাক স্পট রয়েছে। ঢাকার হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর ইন্টারসেকশন এবং সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাজ শুরুই হয়নি। আর মানিকগঞ্জের বাথুলি বাসস্ট্যান্ডের এক পাশে কাজ হয়েছে, অন্য পাশে ইউটিলিটি রিলোকেশনের কাজ শুরু হয়নি এখনো।
নয়াডিঙ্গি বাসস্ট্যান্ডেও কাজ শুরু হয়নি। শুরু হয়নি কামতা বাসস্ট্যান্ডে ইউটিলিটি রিলোকেশনের কাজও। পুকুরিয়া বাসস্ট্যান্ডে এক পাশে ডিবিএস বেস কোর্স কাজ শেষ হলেও অন্য পাশে চলমান।
নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট ইন্টারসেকশনের কাজ এবং নরসিংদীর পাঁচরুখি বাজার, শেখেরচর বাজার, নরসিংদী ইন্টারসেকশন, কাড়ারচর, শাশপুর, হাজিরবাগান, বাড়ইচা বাসস্ট্যান্ড ও রায়পুর বাসস্ট্যান্ড এবং মুন্সীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর বাজারের কাজ শুরু হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৮টি স্পটের কাজ প্রায় শেষ, কয়েকটি স্পটে সাইন- সিগন্যালের কাজ চলমান।
হবিগঞ্জের হাফিজপুর বাসস্ট্যান্ড, বেড়তলা, ইসলামপুর বাজার, নয়াবাজার বাসস্ট্যান্ড, বাহুবল ইন্টারসেকশনের কাজের অর্ধেকের বেশি বাকি।
মৌলভীবাজারে ৯টি স্পটের কথা বলা হলেও ৪টি স্পট মাঠপর্যায় থেকে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে ৩টি স্পটে বেস টাইপ-১ এর কাজ শেষ হয়। অন্যটির কাজ শুরু হয়নি।
খুলনা জোনের মাগুরায় ৪টি, ঝিনাইদহে ৩টি, যশোরে ৪টি স্পট রয়েছে। এগুলোর অগ্রগতি মাত্র ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বরিশাল ও গোপালগঞ্জ জোনের মধ্যে বরিশালে ২টি, ফরিদপুরে ১টি, রাজবাড়ীতে ৪টি, মাদারীপুরে ১টি স্পট রয়েছে। এগুলোর অগ্রগতি ৬০ শতাংশ।
রংপুর জোনের বগুড়ায় ৭টি, গাইবান্ধায় ৯টি, রংপুরে ১১টি, নীলফামারীতে ২টি, ঠাকুরগাঁওয়ে ৫টি এবং পঞ্চগড়ে ৫টি স্পট রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে ওই জোনের স্পটে।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রাজশাহী জোনে। ওই জোনের রাজশাহীতে ৫টি, পাবনায় ৬টি, সিরাজগঞ্জে ১৬টি, নাটোরে ৭টি স্পট রয়েছে। বর্তমানে এসব স্পটের অধিকাংশ সংস্কারের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়াধীন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন