সত্যম শিবম সুন্দরম: যৌনতা থেকে শিল্প
সমালোচকদের প্রশংসা ও নিন্দা দুই-ই যথেষ্ট পরিমাণে জুটেছিল ছবিটির কপালে। ছবির বক্তব্য, সংলাপ, অভিনয় ও সংগীত পেয়েছিল প্রশংসা অন্যদিকে যৌনতার অবাধ প্রদর্শনীর জন্য নিন্দাও হয়েছিল কম নয়।
পরে অবশ্য ছবিটির শিল্পবোধের প্রতি প্রশংসার পাল্লাই ভারি হয়। বলিউডের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব রাজ কাপুরের পরিচালনায় এ ছবিতে অভিনয় করে শরীরি আবেদনকে শিল্পের পর্যায়ে যিনি নিয়ে যান সেই অসামান্য অভিনেত্রীর নাম জিনাত আমান।
তার জীবনের অন্যতম সেরা ছবি ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’। বলিউডের ক্ল্যাসিক ছবির তালিকাতেও এটি রয়েছে।
ছবির কাহিনি শুরু হয় সত্য, শিব এবং সুন্দরের ধারণাগত বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে। সৌন্দর্য কি চোখের দেখা, না মনের জানা সেই প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়।তারপর শুরু হয় মূল কাহিনি।
গরীব ব্রাহ্মণের মেয়ে রূপা। জন্ম থেকেই ‘অপয়া’, ‘অভাগা’ কথাগুলো তার উদ্দেশ্যে বলে থাকে গ্রামের লোক।
রাধা-শ্যামের মন্দিরের গায়কের ঘরে জন্মাষ্টমীর রাতে জন্ম নেয় রূপা। তাকে জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু হয় বলে ছোটবেলা থেকেই ‘অপয়া’ ‘অভাগী’ বিশেষণ জোটে তার কপালে। ছোট্ট মেযে রূপা চঞ্চল ও বুদ্ধিমতী। তার গানের কণ্ঠ অসাধারণ। বাবার কাছ থেকে গান শেখে সে। ছোটবেলায় এক দুর্ঘটনায় গরম তেল পড়ে তার মুখের একদিক পুড়ে যায়। মুখে ভয়াবহ একটি ক্ষতচিহ্ন নিয়ে বড় হয়ে ওঠে রূপা। গরীবের এই কুশ্রী মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে চায় না।
ওই এলাকায় বাঁধ নির্মাণের কাজে আসে তরুণ ইঞ্জিনিয়ার রাজীব। ভোরবেলা মন্দিরের দিক থেকে ভেসে আসা সুমধুর গানে ঘুম ভাঙে তার। এই গান গায় রূপা। প্রতিদিনই দেবতার প্রতি গান গেয়ে পূজা করে সে। রূপার গানে আকৃষ্ট হয়ে এক ঝরনার তীরে তার সঙ্গে দেখা হয় রাজীবের। কিন্তু রূপা সবসময় তার মুখের পোড়া দিকটি শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখে। সে কারণে রাজীব তার পুরো চেহারা কখনও দেখতে পায় না। ছোটবেলা থেকেই রাজীব কুশ্রী বা অসুন্দর কোনো কিছু সহ্য করতে পারে না।
যাই হোক রূপার কণ্ঠ ও সুন্দর দেহের প্রেমে পড়ে রাজীব্। সে তার কাছ থেকে তার গ্রামের নাম জেনে নেয়। রূপার বাবার কাছে গিয়ে তার মেয়েকে বিয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করে সে। আকাশের চাঁদ হাতে পায় গরীব বাবা।
বাসর রাতে রূপার চেহারায় বীভৎস ক্ষতচিহ্ন দেখে চমকে ওঠে রাজীব। তার সমস্ত স্বপ্ন ভেঙে যায়। তার ধারণা হয় এ মেয়ে তার প্রেমিকা রূপা নয়। নিশ্চয়ই ঠক জোচ্চুরি করে তার সঙ্গে অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে স্ত্রী হিসেবে কিছুতেই এ মেয়েকে স্বীকার করে না সে।
এদিকে প্রতি রাতেই প্রেমিকা রূপার সঙ্গে দেখা হয় রাজীবের সেই ঝরনার তীরে। রূপা আঁচল দিয়ে মুখের এক অংশ ঢেকে রাখে। সে কখনও বলে না যে সেই তার স্ত্রী। কারণ অন্তত এভাবে হলেও তো সে তার প্রেমিককে কাছে পাচ্ছে।
এক সময় অন্তঃস্বত্তা হয় রূপা। প্রতিবেশী বৃদ্ধ দম্পতি এ সংবাদে খুশি হয়। কিন্তু রাজীব যখন তাদের কাছ থেকে একথা শোনে তখন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। কারণ যেহেতু স্ত্রীর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই তাই এ সন্তান কোনোভাবেই তার হতে পারে না। চরিত্রহীনতার অপবাদ দিয়ে স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে রাজীব। এই মানসিক আঘাতে রূপার বাবার মৃত্যু হয়।
রূপা আশ্রয় নেয় তার ছোটবেলার দরদী চাচার বাড়িতে।
এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘনিয়ে আসে এলাকায়। বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয় জলোচ্ছাসের কারণে। সব গ্রাম থেকে অধিবাসীদের সরিয়ে নেওয়া হতে থাকে।
একটি গরুর গাড়ির মধ্যে থাকে রূপা ও তার চাচা। একসময় রূপা সেই গানটি ধরে যেটি সে রোজ মন্দিরের পূজার সময় গাইতো। সেই গান শুনে ছুটে আসতে থাকে রাজীব।
একসময় রূপার গাড়ির কাছে পৌঁছে সে দেখে রূপাই তার প্রকৃত স্ত্রী। এদিকে বাঁধ ভেঙে যায়। স্রোতের তোড়ে সবকিছু ভেসে যেতে থাকে। তবে রাজীব ও রূপা মন্দিরের চূড়া আঁকড়ে কোনোমতে বেঁচে থাকে। দুর্যোগের রাত পোহায়। আশার বাণী নিয়ে উদিত হয় নতুন সূর্য। রূপা আর রাজীব বন্যা-বিধ্বস্ত গ্রামে নতুন জীবন শুরু করে। রাজীবের চোখে রূপা হয়ে ওঠে সেরা সুন্দরী। কারণ রাজীব বুঝতে পারে সৌন্দর্যের অবস্থান মানুষের দেহে নয় তার মনে। মানুষের অন্তরের সৌন্দর্যই প্রকৃত সৌন্দর্য। সত্যই ধর্ম বা সত্যই ঈশ্বর আর ঈশ্বরের মধ্যে রয়েছে সকল সৌন্দর্য।
রাজকাপুর পরিচালিত আর কে ফিল্মসের ছবিটিতে রূপা চরিত্রে জিনাত আমান এবং রাজীব চরিত্রে শশী কাপুর অভিনয় করেন। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন এ কে হেঙ্গেল, ডেভিড, লীলা চিতনিশ, কানহাইয়া লাল প্রমুখ।
ছোটবেলার রূপার চরিত্রে ছিলেন পদ্মিনী কোলাপুরী যিনি পরে রাজকাপুরের অন্য ছবিতে নায়িকা হয়েছিলেন।
ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারেলাল জুটি। ভক্তিমূলক গানগুলোর কথা লেখেন পণ্ডিত নরেন্দ্র শর্মা এবং অন্য কয়েকটি গানের কথা লেখেন আনন্দ বকশী।
‘যশোমতি মাইয়াসে’, ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’, ‘চঞ্চল শীতল নির্মল কোমল’ ইত্যাদি গান তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
বিশেষ করে ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ গানটি লতা মঙ্গেশকারের কণ্ঠে ছবির শেষ পর্যায়ে অনবদ্য আবেদন নিয়ে আসে।
১৯৭৮ সালে ছবিটি মুক্তির পর পরই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পরিচালনা, অভিনয়, সংলাপ ও সংগীতে আলোড়ন সৃষ্টি করে ছবিটি। এটি ছিল বলিউডে নির্মিত মুষ্ঠিমেয় রূপক ছবিগুলোর অন্যতম।
তবে জিনাত আমানের সংক্ষিপ্ত পোশাক, শরীরি আবেদনের খোলামেলা প্রদর্শনীর কারণে সিনেমাটিতে যৌনতা নির্ভর চলচ্চিত্রের তকমা এঁটে দেন সমালোচকরা।
শেষতক সব নিন্দাবাদকে জয় করে ছবিটি ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পায় এর শিল্প গুণে। জিনাত আমান তার অভিনয়গুণে যৌনতাকে শিল্পে উত্তীর্ণ করতে সক্ষম হন। এখানেই পরিচালক হিসেবে রাজকাপুর তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেন।
ফিল্মফেয়ারের আসরে এটি দুটি পুরস্কার আর চারটি নমিনেশন পায়। সেরা অভিনেত্রীর নমিনেশন পেয়ে জিনাত আমান প্রমাণ করেন যৌন আবেদনই চূড়ান্ত নয়, বরং তিনি বলিউডের অন্যতম সেরা শিল্পীও বটে।
সেরা সংগীত পরিচালক হিসেবে পুরস্কার জয় করেন লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারেলাল জুটি।
এই ছবিই আবেদনময়ী নায়িকা হিসেবে বলিউডে জিনাত আমানের আসন স্থায়ী করে দেয়।
দেহ ও মনের দ্বন্দ্ব এবং দৈহিক সৌন্দর্যের উপর মানসিক সৌন্দর্যের জয় ঘোষণা এই রূপক ছবিটিকে পৌঁছে দিয়েছে ক্ল্যাসিকের উচ্চতায়।
জিনাত আমানের জন্মদিনে (১৯ নভেম্বর) নতুন করে আবার ছবিটি দেখতে পারেন তার ভক্তরা।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সমুদ্র পাড়ে দুর্গারূপে নওশাবা
শুধু ঈদ কিংবা পূজা নয়, বিশেষ ধর্মীয় দিন উপলক্ষে ফটোশুটেবিস্তারিত পড়ুন
শুল্কমুক্ত গাড়ি খালাস করেছেন সাকিব-ফেরদৌস, পারেননি সুমনসহ অনেকে
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের জন্য আমদানি করাবিস্তারিত পড়ুন
আলোচিত নায়িকা পরীমনির পরিবার সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানতেন?
গভীর রাতে সাভারের বোট ক্লাবে গিয়ে যৌন হেনস্তা ও মারধরেরবিস্তারিত পড়ুন