সন্তানদের ‘জড়িয়ে ধরে’ লাশ হলেন পপি
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসের বিকালে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বইমেলায় গিয়েছিলেন পপি রাণী রায় (৩০)। ফেরার পথে গিয়েছিলেন বেইলি রোডে ‘কাচ্চি ভাই’ নামের দোকানে বিরিয়ানি খেতে।
কিন্তু আদরের সন্তানদের নিয়ে তিনি যে শেষবারের মতো খাবারের টেবিলে বসেছিলেন, তা কী ঘুণাক্ষরেও বুঝেছিলেন?
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে ‘কাচ্চি ভাই’ দোকানে খেতে গিয়ে লাশ হয়েছেন পপ রাণী রায়, তার মেয়ে আদ্রিজা (১২) আর ছেলে তূর্য (৬)।
বৃহস্পতিবার রাতে ওই ভবন থেকে অনেকের সঙ্গে তাদেরকেও উদ্ধার করে পাঠানো হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সেখান থেকেই শুক্রবার সকালে বোন, ভাগ্নে-ভাগ্নির লাশ বুঝে নেন পপির ভাই রিংকু রায়।
এক সময়ের নাটকপাড়া, আর এখন ‘খাবারের পাড়া’ হিসেবে পরিচিত বেইলি রোডের খাবারের দোকানগুলোয় প্রায় সবসময়ই থাকে জনাকীর্ণ। আর বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজন নিয়ে গিয়েছিলেন সেখানে।
মধ্যরাতে ঘটনাস্থলে সোহেল আকবর নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছিলেন, সাততলা গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের দ্বিতীয় ‘কাচ্চি ভাই’ দোকানে ৫০ শতাংশ ছাড় থাকায় অসম্ভব ভিড় ছিল। সোহেল নিজেও পৌনে দশটার দিকে খাবার কিনতে যাচ্ছিলেন সেখানে। এরপরই আগুন লাগার খবরে ছোটাছুটি শুরু হয়।
ওই দোকানে ভিড়ের মধ্যেই খেতে গিয়ে ছেলে-মেয়েসহ লাশ হয়ে ফিরেছেন পপি রাণী রায়।
পপির ভাই রিংকু আমাদের কন্ঠস্বরকে বলেন, “কালকে তারা বইমেলায় গিয়েছিল ঘুরতে। এরপর কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে কাচ্চি খেতে যায়। তারা তিন তলায় ছিল।”
ভবনটির দ্বিতীয় দোতলায় ছিল বিরিয়ানির পরিচিত খাবার দোকান ‘কাচ্চি ভাই’ এর শাখা, পোশাকের ব্র্যান্ড ইলিয়েন, নিচের তলায় স্যামসাং এর শোরুমসহ আরও বেশ কিছু দোকান। স্যামসাংয়ের শোরুমের পাশে রয়েছে একটি কফি শপ। এরকম কফির দোকানসহ ফাস্টফুডের অনেকগুলো দোকান ও রেস্তোরাঁ রয়েছে ভবনটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকব্রিগেডিয়া জেনারেল মঈন উদ্দিন প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে চুলা বা গ্যাস লিকেজ থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে ধারণার কথা বলেছেন। ভবনটির প্রতিটি ফ্লোরেই গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আর রাত আড়াইটার পর সেখানে দায়িত্বপালনরত র্যাব-৩ এর এএসপি কামরুল হাসান প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছিলেন, স্যামসাং শোরুমের পাশের কফি হাউস থেকে প্রথম আগুনের সূত্রপাত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা নিচ থেকে আগুন উপরের দিকে উঠতে দেখেছেন। প্রথমে দোতলায় তারপর তা পুরো ভবনে ছড়িয়ে যায়।
নিচ থেকে আগুন উপরের দিকে ছড়াতে শুরু করলে ভবনের বিভিন্ন তলায় থাকা মানুষের বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এলোমেলো ছু্টোছুটি শেষে সবাই গিয়ে জড়ো হন উপরের দিকে। এক পর্যায়ে নিচ থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুন আর ধোঁয়া থেকে বাঁচতে সবাই ভিড় করেন ছাদে।
সে সময় পপিও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ওপরের দিকে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন।
রিংকু বলেন, “(বোন, ভাগ্নেভাগ্নি) সারভাইভ করে পঞ্চম তলা পর্যন্ত গিয়েছিল। কিন্তু অক্সিজেন লেভেল জিরো হয়ে যাওয়ার কারণে তারা আর সারভাইভ করতে পারেনি। শুনেছি পপি তার ছেলে-মেয়েকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল। কিন্তু জীবত অবস্থায় বের হয়ে আসতে পারেনি।
“আমরা টেলিভিশন দেখে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেলে ছুটে এসে দেখি তারা মারা গেছে। এখন আমরা তাদের লাশ নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের আদিনিবাস দয়াগঞ্জ জেলেপাড়ায় নিয়ে যাব, সেখান থেকে আমরা পোস্তগোলা তাদের লাশগুলো দাহ করব।”
রিংকু রায় জানান, পপির স্বামী ব্যবসায়ী। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার ছিল। এখন আর তার কেউ রইল না।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সাময়িক বরখাস্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেবিস্তারিত পড়ুন
কমলা হ্যারিসের ভোটের প্রচারণায় বাজবে এ আর রহমানের গান
আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসেরবিস্তারিত পড়ুন
উপদেষ্টা আদিলুর: পূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না
দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেবিস্তারিত পড়ুন