সব প্রস্তুতি শেষ, এবার ঈদযাত্রা
ঈদুল ফিতর দরজায় কড়া নাড়ছে। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়বে বহু মানুষ। বাস, ট্রেন, নৌযান কিংবা বিমান যে বাহনই হোক নাড়ির টানে বাড়ির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বে ঘরমুখো মানুষগুলো।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ আরামে যাত্রার জন্য লঞ্চযোগে রাজধানী ত্যাগ করে। বাস, ট্রেনের মতোই নদীপথের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বরাবরের মতো এবারও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
ঈদযাত্রাকে আরো আনন্দময় করতে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ বিশেষ নৌ-সার্ভিস, বিশেষ টিকিট কাউন্টার ও নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণে স্পেশাল মনিটরিং টিমসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ৩০ জুন থেকে ঈদের বিশেষ নৌ-সার্ভিসসহ ১৮৫ থেকে ১৯০টি নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা করেছে সংস্থাটি। প্রস্তুত রয়েছে ৩৫টি বিশেষ টিকিট কাউন্টার।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিটিএর যুগ্ম পরিচালক (ট্রাফিক) জয়নাল আবেদিন বলেন, সাধারণত নিয়মিতভাবে ৪১ রুটে ৭৫টি লঞ্চ চলাচল করে। ঈদে যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ থাকে। আর এজন্য ১৮৫টি লঞ্চ যাত্রী সেবার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এর বাইরে সরকারি স্টিমারগুলো নির্ধারিত স্থান থেকে ছেড়ে যাবে। ৩০ জুন থেকে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু করা হবে। বিশেষ সার্ভিসের পাশাপাশি নিয়মিত লঞ্চগুলো চলাচল করবে।
তিনি বলেন, ঈদের সময় লঞ্চগুলো প্রতিদিন ১৩০ থেকে ১৩৫টি ট্রিপ দেয়। এবারে ঈদের লম্বা ছুটি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যাত্রীদের প্রয়োজনে বিশেষ সার্ভিস আরো বৃদ্ধি করার ব্যবস্থাও থাকবে।
ঈদ উপলক্ষে বিশেষ কাউন্টার চালু করা হয়েছে এমন তথ্য তুলে ধরে ওই কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীদের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে ঈদ উপলক্ষে সদরঘাট থেকে বিশেষ টিকিট কাউন্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘাটে মোট ৩৫টি কাউন্টার খোলা হয়েছে। যাত্রীরা চাইলেই ওই কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।
দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচলের বিষয়ে জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন কোনো লঞ্চ চলাচল করে না। সদরঘাট থেকে এরূপ কোনো লঞ্চ যেতে পারে না। এর বাইরেও যদি কোনো লঞ্চ চলাচল করে তার জন্য আমাদের বিশেষ মনিটরিং টিম রয়েছে। তাই ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচলের প্রশ্নই আসে না। এ ছাড়া লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বিষয়ে আমরা সচেতন রয়েছি। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর কয়েকটি টিম তদারকি করবে।’
এত উদ্যোগ নেওয়ার পরই যাত্রীদের ভোগান্তি কম হয় না। টিকিটের সহজ প্রাপ্তি, সময়মতো লঞ্চে ওঠা ও লঞ্চঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ইত্যাদি নিয়ে রয়েছে যাত্রীদের অনেক অভিযোগ।
বরিশালে ঈদ করবেন বেসরকারি চাকরিজীবী সোহেল রানা। তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় পরিবার নিয়ে বাড়ি যাব চিন্তা করলে একদিকে ভালো লাগে, অন্যদিকে আতঙ্কে থাকি। কেননা লঞ্চে কেবিন পাওয়া আর সোনার হরিণ পাওয়া এক কথা। এত তদবির ও কষ্ট করতে হয় যে এর চেয়ে নতুন একটি চাকরি পাওয়াও বেশ সহজ মনে হয়।’
দক্ষিণবঙ্গের সকল জেলা ও উপজেলায় রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ৪৫টি রুটে লঞ্চ চলাচল করে। ঢাকা থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, চাঁদপুর, খুলনা, মংলা বন্দর, কাউখালী, চরখালী, হাতিয়া, মোরেলগঞ্জ, লালমোহন, হুলারহাট, ভান্ডারিয়া, ইচলী, দৌলতখান, বোরহান উদ্দিন এবং সুরেশ্বরসহ বেশ কিছু অঞ্চলে ওই লঞ্চগুলো যাতায়াত করে। লঞ্চগুলো সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। ঈদ উপলক্ষে দেশের উপকূল এবং দক্ষিণের মানুষের লঞ্চযাত্রা মূলত শুরু হবে ৩০ জুন রাত থেকে। তবে ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস ৪ জুলাই হওয়ায় ওই দিনই সবচেয়ে বেশি ভিড় হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চগুলো সাধারণত সকাল ৬টা থেকে শুরু করে রাত ১২টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সদরঘাটে ১৩টি পন্টুন দিয়ে যাত্রী লঞ্চে ওঠানামা করে। সদরঘাট থেকে বিভাগীয় শহর বরিশালের যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো আকার-আকৃতিতে বেশ বড় ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত হয়। এর বাইরে পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভোলা ও বরগুনার লঞ্চগুলো বরিশালের লঞ্চগুলোর তুলনায় ছোট। এসব দূরযাত্রার লঞ্চগুলোর অধিকাংশই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশে যেমন- চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, দোহারে তুলনামূলক ছোট লঞ্চ চলাচল করে।
বরিশালগামী বড় লঞ্চগুলো প্রায় দেড় হাজার যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন। এগুলো তিন থেকে চার তলা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ লঞ্চগুলোতে অত্যাধুনিক আর আরামদায়ক সব ব্যবস্থা থাকে। ১৮০০ বর্গফুট থেকে ৩০০০ বর্গফুট আয়তনের লঞ্চগুলো ২৫০ থেকে ১৫০০ যাত্রী বহন করতে পারে। লঞ্চগুলোতে ভিআইপি কেবিন, ডাবল কেবিন, সিঙ্গেল কেবিন, সাইড বেঞ্চ, ফ্লোর এবং ডেকে যাত্রীদের বহনের ব্যবস্থা থাকে।
অন্যদিকে মাঝারি লঞ্চগুলো দুই থেকে আড়াই তলা হয়ে থাকে। ৫০০ থেকে ৮৫০ যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই লঞ্চগুলোতে আধুনিক বড় আকৃতির লঞ্চগুলোর তুলনায় সুযোগ-সুবিধা কিছুটা কম। পটুয়াখালী, ভোলা, লালপুর, বরগুনা, ভান্ডারিয়া, ও দক্ষিণাঞ্চলের সকল জায়গায় এই লঞ্চগুলো যাতায়াত করে।
এ ছাড়া রয়েছে দেড় থেকে দুই তলাবিশিষ্ট লঞ্চ। এ লঞ্চগুলোর সুযোগ-সুবিধা অত্যন্ত সীমিত। ১৫০ থেকে ৪০০ যাত্রী বহন করতে সক্ষম এসব লঞ্চ চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, দোহার, পাটুরিয়াসহ ঢাকার কাছাকাছি দূরত্বে যাতায়াত করে।
লঞ্চে ভাড়ার বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, আসন ব্যবস্থাপনা অনুসারে ছোট-বড় লঞ্চসমূহে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। বড় আকারের লঞ্চগুলোতে ডুপ্লেক্স ও ভিআইপি কেবিনের ভাড়া ২৭০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা হয়ে থাকে। যেখানে দুটো বেড, এসি, রেফ্রিজারেটর, টিভি, ডাইনিং সুবিধা রয়েছে।
দুই বেড সুবিধায় ডাবল কেবিনের ভাড়া ১৭০০ থেকে ২২০০ টাকা, এক বেডের সুবিধায় সিঙ্গেল কেবিন ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, সোফা-কাম-বেডের ক্ষেত্রে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়ে থাকে। এখানেও এসি কিংবা ফ্যান ও টিভির সুবিধা রয়েছে।
এ ছাড়া লঞ্চের ডেকেও যাত্রা করা যায়। বড় অনেক লঞ্চে কার্পেট দেওয়া রয়েছে। তবে চাদর, বালিশ যাত্রীকে সঙ্গে বহন করতে হয়। এখানে ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন