সম্পাদনা ছাড়াই বই, যেন এর গুরুত্ব নেই!
কেবল বইমেলা নয়, সারাবছরই বই প্রকাশের ক্ষেত্রে হাতেগোনা কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা বই সম্পাদনার কাজ করে থাকে। বাকি প্রকাশনা সংস্থাগুলোতে বই সম্পাদনার কাজ হয় না। লেখক যা জমা দেন, কেবল বানান ঠিক করে তা প্রকাশ করা হয়। প্রকাশকরা বলছেন, সম্পাদনা পরিষদ দূরে থাক, কাউকে দিয়ে সম্পাদনার কাজটি করানোর মতো আর্থিক সঙ্গতি তাদের নেই। এমনকি বইমেলার মৌসুমে বানান দেখার কাজটিও কখনও কখনও প্রকাশকরা লেখককে দিয়েই করিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বই প্রকাশের সিদ্ধান্ত থেকেও সবক্ষেত্রেই বই সম্পাদনার গুরুত্ব অপরিসীম।
জানা গেছে, প্রকাশনা সংস্থার মধ্যে প্রথমা, পাঠসূত্র, দিব্যপ্রকাশ, ইউপিএল, পাঠক সমাবেশ, আগামী, সংহতি, ঐতিহ্য সম্পাদনার কাজটি নিয়মিত করে থাকে। এসব প্রকাশনা সংস্থাও আবার সব লেখকের বই সম্পাদনা করে না। এছাড়া জনপ্রিয় ও বড় বড় প্রকাশনা সংস্থাগুলোর প্রায় কেউই বই সম্পাদনা করে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লেখকের সঙ্গে প্রকাশকের সম্পর্কে ভিত্তিতে বই প্রকাশিত হয়। লেখক কখনও কখনও নিজ দায়িত্বে বাইরে থেকে প্রুফ দেখানোর কাজটি করেন। সেক্ষেত্রে প্রকাশকের হাতে তুলে দেওয়া পাণ্ডুলিপি সরাসরি প্রেসে চলে যায়।
সম্পাদনা ও প্রুফের যথাযথ চর্চা না থাকার ফলে কোনও প্রকাশনা হাউসের নির্দিষ্ট ভাষা বা বানানরীতি খুব কম ক্ষেত্রেই তৈরি হতে দেখা যায়। আর বইমেলার বইগুলোতে অজস্র বানান ভুল থাকে বলেও স্বীকার করে নিয়েছেন প্রকাশকরা।
সম্পাদনার গুরুত্ব বিষয়ে লেখক ও গবেষক সাখাওয়াত টিপু বাংলা বলেন, ‘যথাযথ সম্পাদনার অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু সৃষ্টিশীল লেখা সম্পাদনার করার মতো পণ্ডিত লোকেরও অভাব আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সম্পাদনা একটি পেশাদারিত্বের বিষয়। কিন্তু আমাদের দেশে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পেশাদারিত্বের অভাব আছে। বইতে পুঁজির বিনিয়োগ হচ্ছে। কিন্তু পুঁজি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার গুণগত মানও রক্ষা করা দরকার। সার্বিকভাবে এই দায়িত্ব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের।’
দেশের বাইরের প্রকাশনার মান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সাখাওয়াত টিপু বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলোর প্রকাশনার মানের কথা বাদই দিলাম, আমাদের পাশের দেশগুলোর প্রকাশনার মানের দিকে তাকালেও এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে আমাদের প্রকাশনা কতটা নাজুক আর নিম্নমানের।’
সম্পাদনার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে শাকুর মজিদ বাংলা বলেন, ‘গড়পড়তা লেখকের বই ৩শ থেকে ৫শ কপি ছাপা হয়। এ কারণে সম্পাদনার জন্য প্রকাশকেরা বাড়তি টাকা খরচ করতে চায় না। আবার ভালো পাণ্ডুলিপি সম্পাদকের অভাব আরও প্রকট। তাছাড়া, বই প্রকাশে প্রকাশকেরা যতটা না আগ্রহী, লেখকেরা তার চেয়ে বেশি মরিয়া। যেনতেনভাবেও বই প্রকাশ হলেই তারা খুশি।’
শাকুর মজিদ আরও বলেন, ‘আমার জানামতে, এক-দুইটা প্রকাশক প্রকৃত প্রকাশক। তারা বইয়ের মান বিচার করে বই প্রকাশ করে, বইগুলো নিজ দায়িত্বে সম্পাদনাও করে। বাকিদের বেশিরভাগই পুস্তক মুদ্রক। তারা সম্পাদনার বিষয়টি মাথাতেই আনে না, সর্বোচ্চ প্রুফ রিডিংয়ে সীমাবদ্ধ থাকে। এদের অধিকাংশই আবার প্রুফের কাজটাও ঠিকমতো করে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সন্দেশ প্রকাশনার প্রকাশক লুৎফর রহমান চৌধুরী বাংলা বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। সমস্যাটা বিনিয়োগের। সম্পাদনা পরিষদ তৈরি দূরে থাক, কোনও একটি বই সম্পাদনার জন্য আলাদা বরাদ্দ দেওয়াও আমাদের জন্য কঠিন।’ তবে কোনও একটি বই সম্পাদনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করা হলে তার মান ভালো হতে বাধ্য বলেও স্বীকার করে নেন তিনি।
সিঁড়ি প্রকাশনীর প্রকাশক হাসিম মিলন বাংলা বলেন, ‘বইমেলায় বেশিরভাগ বইয়ের মান বজায় রাখা কঠিন। প্রচ্ছদটা যেন ভালো হয়, বানান ভুল যেন না থাকে, প্রচারটা যেন লেখক ঠিকমতো করতে পারেন— এসব দিকেই মনোযোগ থাকে আমাদের। বইটি প্রকাশযোগ্য কিনা, কোন জায়গায় পরিবর্তন-পরিমার্জন দরকার সেগুলো বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ আমরা তৈরি করতে পারিনি। এত ছোট পরিসরে, কম বিনিয়োগে এসব ভাবাই সম্ভব না।’
সংহতি প্রকাশনার পক্ষে ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘বেশিরভাগ পাণ্ডুলিপি আসে নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে। তখন নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকে না। আমরা সম্পাদার চেষ্টা করি। সব বইতে সম্ভব না হলেও আমাদের ৯৮ ভাগ বইতে সম্পাদনা হয়। আর আমার ধারণা সম্পাদনার মান বাড়ছে।’
ফিরোজ আহমেদ আরও বলেন, ‘সংহতি লেখকদের সঙ্গে চুক্তি করে এবং সাধারণত লেখকের বিনিয়োগে বই প্রকাশ করে না। তবে সারাবিশ্বেই ভালো বইয়ের একটা বড় অংশ প্রকাশিত হয় লেখকের স্বঅর্থায়নে। লেখক ভাবতেই পারেন তার বই সম্পাদনাযোগ্য নয়। প্রকাশকও ভাবতেই পারেন এই বই তিনি ছাপবেন না। তখন বইটি প্রকাশে লেখকের স্বঅর্থায়নের বিকল্প থাকে না। আর আমাদের বইয়ের বাজার এত ছোট যে, প্রকাশকরা হয়তো শ’খানেক লেখকের বই বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন।’ bangla tribune
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সায়েন্সল্যাব এলাকা থেকে সিটি কলেজ সরিয়ে নেওয়ার দাবি ঢাকা কলেজের
ঢাকার সায়েন্সল্যাব মোড় এলাকায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূস: আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে, এটি ত্রুটিপূর্ণ
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “মানুষ জন্মগতভাবে উদ্যোক্তা।বিস্তারিত পড়ুন
আইসিটি অধ্যাদেশ অনুমোদন, ধারণ করা যাবে বিচার প্রক্রিয়ার অডিও-ভিডিও
‘‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪’’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনবিস্তারিত পড়ুন