সম্ভাবনার দুয়ার প্রসারিত হলো সৌদি আরবে
সামান্য অপরাধে মারধর, পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া, মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে কর্মী নিয়োগের রাস্তা সংকুচিত হয়ে আসছে সৌদি আরবে। অপরদিকে, দেশটিতে বাংলাদেশের শ্রম বাজার ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে।
সম্প্রতি সৌদি আরব সরকার শ্রম আইনে সংশোধনী আনায় প্রবাসী শ্রমিকদের ভাগ্যান্বেষনের দুয়ার আরো প্রসারিত হয়েছে। আইনে শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য নিয়োগকর্তাদের উপর আরোপ করা হয়েছে কতিপয় শর্ত। ফলে হয়রানির শিকার হয়ে বছরে আর ৮৬ হাজার কমীকে সৌদি আরব থেকে বিদায় নিতে হবে না। শুক্রবার এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মালিকের অসদাচরণ, খেতে না দেওয়া ও ঠিকমতো বেতন না দেওয়ার কারণে গৃহকর্মীরা নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করছে। এর আগে ২৯ আগস্ট আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ১০ মাসে বিভিন্ন আদালতে নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে ৪৫০টি মামলা করেছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। বিশেষ করে চুক্তি অনুযায়ী বেতন-ভাতা না দেওয়া, সময়মত বেতন পরিশোধ না করা, চুক্তির বাইরে কাজ করিয়ে নেওয়াসহ নানা কারণে তারা এসব মামলা করেন।
তবে এবার শ্রম আইনে সংশোধন আনায় ২০০৮ সাল থেকে সৌদি আরবে বাংলাদেশের বন্ধ শ্রম বাজার নতুন সম্ভাবনার খরব দিচ্ছে। সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে পুনরায় সৌদি আরব পাড়ি দেওয়া শুরু করেছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। চলতি বছরের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে সৌদি রয়্যাল কোর্ট বাংলাদেশি শ্রমিকদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ফলে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এই তেলসমৃদ্ধ দেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকল না। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ’র মতে দেশটিতে বর্তমানে ২০ লাখ শ্রমিক কর্মরত।
সৌদিতে বসবাসরত প্রবাসীদের শুধু গুরুতর অপরাধের জন্যই কারাদণ্ড দেওয়া যাবে বলে মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর ছোট কোনো অপরাধের জন্য শুধু অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে। অপরাধের জন্য কোনো প্রবাসীকে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রয়োজন হলে তা একটি কমিটি নির্ধারণ করে দেবে। সৌদি আরবের পাসপোর্ট বিভাগের পরিচালক সুলাইমান আল-ইয়াহিয়ার বরাত দিয়ে গত মঙ্গলবার আরব নিউজে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
তিনি বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের ছোট-খাট অপরাধের জন্য দ্রুত জরিমানা আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশটির প্রবাসী প্রশাসনিক বিভাগের পরিচালকদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি জানান, কোনো ধরনের অপরাধের পর প্রবাসীদের আটক বা জরিমানা করা হবে কিনা- তা নির্ধারণ করতে একটি বিশেষ কমিটি করা হবে।
সুলাইমান আল-ইয়াহিয়া জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের লঘু অপরাধের জন্য ৭০০ থেকে ৯০০ প্রবাসীকে আটকের পর মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। আবাসিক অনুমতিপত্র নবায়নের খচর বহন করতে ব্যর্থ হওয়াকেও তাদের অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ধরনের অপরাধের জন্য আর্থিক জরিমানা দিতে হবে।
সৌদি আরবে প্রবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে পলায়নের মিথ্যা অভিযোগ করলে নিয়োগকারীদের শাস্তির বিধান রেখে গত জুলাই মাসে শ্রম গাইড সংশোধন করে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠান প্রবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করলে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য তার সেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
গত আগস্টে সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রবাসী শ্রমিকদের পাসপোর্ট জব্দ করা যাবে না। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ নিয়োগকারীদের জরিমানা গুণতে হবে।
(সৌদি আরবে বাংলাদেশি এক গৃহকর্মীকে নির্যাতন)
সম্প্রতি শ্রম আইনে আবারও সংশোধনী এনেছে সৌদি আরবের সরকার। নতুন শ্রম আইনে বলা হয়েছে, দেশটিতে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদের পাসপোর্ট তাদের কাছেই রাখতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের জন্য বিভিন্ন পরিমাণ জরিমানা দিতে হবে নিয়োগকর্তাকে। সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র সৌদি গেজেটের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নিয়োগকর্তা যদি কোনো অভিবাসী শ্রমিকের পাসপোর্ট আটক করে রাখে তাহলে তাকে ২০০০ সৌদি রিয়াল বা ৪২ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, কাজের চুক্তিনামার কপি শ্রমিককে না দিলে নিয়োগকর্তাকে ৫০০০ সৌদি রিয়াল বা ১ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিককে কাজ না দিলে বা চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত কাজ করালে ১৫০০০ সৌদি রিয়াল বা ৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। সংশোধিত আইনে আরও বলা হয়েছে, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যগত মানদণ্ড ভঙ্গ করলে এবং সৌদি নাগরিকের নামে বিদেশি নাগরিক নিয়োগ দেওয়া হলে উভয়ক্ষেত্রে পৃথকভাবে ২৫ হাজার সৌদি রিয়াল বা ৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে বাধ্য থাকবেন নিয়োগকর্তা। এছাড়া বিদেশিদের কাছে ভিসা বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেলে ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল বা সাড়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ভিসার মেয়াদ শেষ এমন কোনো শ্রমিককে কাজে নিয়োগ দেওয়া হলে ৪৫ হাজার সৌদি রিয়াল বা ৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত কোনো পোস্টে পুরুষ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হলে নিয়োগদাতাকে ১০ হাজার সৌদি রিয়াল বা ২ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শ্রমিকদের বেতন দিতে দেরি করলে, ছুটির দিনে বা গরমে বা খারাপ আবহওয়ায় শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হলেও নিয়োগকর্তাদের শাস্তির আওতায় নেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, সৌদি আরবে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার শ্রম আইনে সংশোধনী এনেছে সৌদি আরবের সরকার। নারী কর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়াতেও শ্রম আইনের সংশোধন করা হয়েছিল দেশটিতে।
রেমিট্যান্স ২০০৮ সাল থেকে সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রম বাজার বন্ধ থাকলেও রেমিট্যান্সে দিক থেকে সৌদি আরব এখনও এগিয়ে রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশীরা সেপ্টেম্বর মাসে ৭৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে পাঠানো হয়েছে মোট ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। মধ্যপ্রচ্যের বাইরের অন্যান্য দেশ থেকে ৫১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিটেন্স প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

যে কারনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সম্মেলন স্থগিত
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশক্রমে মাত্র এক সপ্তাহের নোটিশে যুক্তরাজ্য বিএনপিরবিস্তারিত পড়ুন

ইউরোপ থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে বাড়ছে চাপ !
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যভুক্ত বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে থাকা বাংলাদেশিদের ফিরিয়েবিস্তারিত পড়ুন

বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার শ্রমিক নেবে সৌদি আরব
চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পেশার প্রায় ৩ হাজারবিস্তারিত পড়ুন