‘সহজে সাইট পেতে ট্রাকের হর্ণ লাগিয়েছি’
অধিকাংশ গাড়ির চালকরাই নিয়ম কানুন মানছেন না। যার যার ইচ্ছে মত গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করছেন। আর হর্নেরবিকট শব্দে অতিষ্ঠ রাজধানীর লাখ লাখ মানুষ। এ বিষয়ে কার্যকরি কোন প্রদক্ষেপও নিচ্ছে না প্রশাসন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমরান ধানমণ্ডি থেকে মিরপুর যাবে। রাস্তায় যানজট হওয়ায় মটর সাইকেলের হর্ন বাজিয়ে সামনেজায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করছিল, সামনে থেকে বুঝার উপায় ছিল না যে মটর সাইকেলেন হর্ন বাজানো হচ্ছে না ট্রাকের হর্নবাজানো হচ্ছে? তার সামনে থাকা বেশিরভাগ গাড়ি ট্রাক মনে করে তাকে সাইট দিচ্ছিল। কারণ তার মটর সাইকেলে ট্রাকের হর্নবজানো ছিল।
মটোরসাইকেলে কেন ট্রাকের হর্ণ লাগিয়েছে ইমরান, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন- ভাই ঢাকা শহরের রাস্তায় অনেক যানজট তাই ট্রাকের হর্ণ লাগিয়েছি যাতে সহজে সাইট পাওয়া যায়। এ হর্ণ শুনলে অনেকে সামনের যায়গা ফাঁকা করে দেয়।
ট্রাকের হাইড্রোলিক হর্ন সাধারণ মানুষের অনেক ক্ষতি হয় তাছাড়া এ হর্ণ ব্যবহার করা আইনত অপরাধ তার পরও আপনি কেন এ হর্ণ লাগিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অনেকে মটরসাইকেলে এ্যাম্বুলেন্সের হর্ন লাগায় আবার অনেকে মটোরসাইকেলে মিউজিক বাজায় তখন শব্দ দুষণ হয় না, আমার এটায় আপনার সমস্যা মনে হলো? পাল্টা প্রশ্ন রাখেন তিনি।
সায়মা রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন মিরপুর-১০ সংলগ্ন এলাকায়। ব্যস্ত এ ঢাকা শহরে পাখির ডাকে ভোরে তার ঘুম ভাঙবে এরকম প্রত্যাশা তিনি কখনো করেন না। কিন্তু যানবাহনের বিকট শব্দে ঘুম ভাঙার বিষয়টিকেও তিনি মেনে নিতে পারেন না। কান ঝালাপালা করা এই শব্দের কারণে তিনি অনিদ্রা ও মাথাব্যথার মতো অস্বস্তিকর সমস্যায় ভুগছেন।
তিনি বলেন, আমি ঘুমাই গাড়ির শব্দ শুনে, আবার ঘুম ভাঙ্গে গাড়ির বিকট শব্দ শনে। এখন আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এ এলাকা ছেড়ে গ্রামে যাওয়া ছাড়া উপায় দেখছি না, এটার সমাধান কি আমি জানি না।
আইন অনুযায়ি হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এসব জায়গায় মোটরগাড়ির হর্ন বাজানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
২০০৬ সালে বাংলাদেশ শব্দ দূষণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এই নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা হলো ৫৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। একইভাবে নীরব এলাকার জন্য এ শব্দসীমা যথাক্রমে সর্বোচ্চ ৫০ ও ৪০ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় ৬০ ও ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ও ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় ৭৫ ও ৭০ ডেসিবেল সর্বোচ্চ শব্দসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এর ওপরে শব্দ সৃষ্টি করাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
মটোরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর ১৩৯ এবং ১৪০ নাম্বার ধারায় নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহার ও আদেশ অমান্য করার শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, অপ্রয়োজনে হর্ন বাজালে মটোরযান অধ্যাদেশের আওতায় ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী কোনো এলাকায় ৬০ ডেসিবেল মাত্রার বেশি শব্দ হলে সেই এলাকা দূষণের আওতায় চিহ্নিত হবে। সংস্থার হিসাব অনুযায়ী অফিস কক্ষে ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবেল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবেল, হাসপাতালে ২০ থেকে ৩৫ ডেসিবেল, রেস্তোরাঁ ৪০ থেকে ৬০ ডেসিবেল শব্দ মাত্রা সহনীয়। ৬০ ডেসিবেল শব্দ মানুষের সাময়িক শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে এবং ১০০ ডেসিবেল শব্দে চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে।
এদিকে, যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারে সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছে না কেউ। বরং দেশের অধিকাংশ যানবাহনেই হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। সাধারণভাবে মানুষ ৪০-৪৫ ডেসিবল মাত্রার শব্দই ভালো শুনতে পায়। তার চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তিসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। অথচ দেশের ৮০ শতাংশ যানবাহনে এখনো ব্যবহার হচ্ছে হাইড্রোলিক হর্ন। যা ১০০ ডেসিবলেরও বেশি মাত্রার শব্দ সৃষ্টি করে থাকে। বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
বর্তমানে সারাদেশে ১ লাখ ১৪ হাজার ট্রাক, ৩৫ হাজার ৯৬৪টি বাস, ১৬ হাজার ৯২৭টি কাভার্ড ভ্যান, ২২ হাজার ৬৩০টি ডেলিভারি ভ্যান, ৫ হাজার ৯৮৭টি কার্গো ভ্যান, ২৬ হাজার ৮৯৬টি মিনিবাস ও ৪ হাজার ১৩০টি ট্যাংকার চলাচল করে। এসব পরিবহনের ৮০ শতাংশই হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করে বলে ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা যায়।
প্রতিটি যানই বছরে একাধিক হর্ন ব্যবহার করে থাকে। আর ওসব হর্নের প্রতিটির দাম ৪শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা পর্যন্ত। সে হিসাবে দেশে পণ্যটির কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার বাজার রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, রাজধানীর অধিকাংশ যানবাহনেই উচ্চমাত্রার, কর্কশ শব্দ সৃষ্টিকারী হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার হচ্ছে। আর ঢাকার বিভিন্ন স্থানের গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকানে ওসব হাইড্রোলিক হর্ন প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া জেলা শহর ও মহাসড়কগুলোতে চলাচলকারী যানবাহনেও ওই হর্ন প্রতিনিয়ত ব্যবহার হচ্ছে।
অথচ ১৯৮৩ সালের মোটর ভেহিকল অর্ডিন্যান্সে নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহার করলে জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়। আর ১৯৪০ সালের দ্য মোটর ভেহিকল বিধিমালায়ও হাইড্রোলিক হর্নকে নিষিদ্ধ করা হয়। অর্ডিন্যান্সের ১৩৯ ধারায় নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহারে ১০০ টাকা জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এমন হর্ন ব্যবহার করা যাবে না যার শব্দ কর্কশ, উগ্র ও উচ্চ। তবে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের গাড়ি ও কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমোদনপ্রাপ্ত পরিবহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে না। পাশাপাশি হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের বিরুদ্ধে জরিমানার বিধান থাকলেও যথাযথভাবে তা প্রয়োগ হচ্ছে না। বরং জরিমানা মাত্র ১০০ টাকা হওয়ায় গাড়ির চালকরাও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে না। তাছাড়া অনেক চালক আইনে হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধের বিষয়টি জানেও না।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ্যকশান নেওয়া হচ্ছে। তারা ফিটনেস, কালো ধোঁয়া, অবৈধ পার্কিং, শব্দদূষণ ও যাত্রী পরিবহনসহ বিভিন্ন অপরাধের আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা মনে করি সবার সহযোগিতা পেলে এসব বিষয়ে আমাদের ব্যবস্তা নিতে সহজ হবে।
হাইড্রোলিক হর্ন আমদানির বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, আমি মনে করি বর্তমানে আইনগতভাবে কোনো ক্ষতিকর জিনিসপত্র আমদানি হয়ে থাকে তাহলে তা বন্ধ করা হবে। আমরা হাইড্রোলিক হর্নের বিষয়টি গুরুত্বে সাথে দেখছি।
ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার মো: ইউসুফ আলী বলেন, হর্ণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ যায়গায় (স্কুল, কলেজ, মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায়) সতর্কতা সংঙ্কেত সম্বলিত সাইনবোর্ড দিয়েছি। এমনকি এর জন্য অপরাধ প্রমানিত হলে শাস্তির বিধান রয়েছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে স্বাগতিক ওয়েস্টবিস্তারিত পড়ুন
রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
যমুনা ফিউচার পার্কে মোবাইলের দোকানে চুরির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভবিস্তারিত পড়ুন
যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশি নাগরিকদেরবিস্তারিত পড়ুন