সাংসদপুত্রর অস্ত্রের লাইসেন্সের ফাইল খুঁজে পাচ্ছে না
সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনি যে পিস্তল দিয়ে গুলি চালিয়ে ‘দুজনকে হত্যা করেন’ সেই অস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যুর ফাইল খুঁজে পাচ্ছে না ঢাকার জেলা প্রশাসন। রোববার ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে গেলে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফিরে আসতে হয়। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ওই ফাইলটি পুলিশও চেয়েছিল। পুলিশ সেটি নিয়ে গেছে কি না, তা তার জানা নেই।
তবে এই জোড়া খুনের মামলার তদারক কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত বিকালে বলেন, রনি যথাযথ নিয়ম মেনে অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছিলেন কি না, তা যাচাইয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিলেও রোববার পর্যন্ত কোনো জবাব পাননি তারা। রনির অস্ত্রের লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে দুপুরে ঢাকার জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন শাখার প্রধান শামসুল আলমের কাছে পাঠিয়ে দেন।
তার কাছে গেলে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বসিয়ে রেখে অস্ত্র লাইসেন্স সংক্রান্ত বিষয়ক সহকারী কমিশনার নির্বাহী হাকিম সারাহ সাদিয়া তাজনীনের কাছে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। নির্বাহী হাকিমের কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তিনি আবার শামসুল আলমের কাছে পাঠিয়ে দেন। শামসুল আলম অনেকক্ষণ ধরে খোঁজাখুঁজির পর কিছু না বলে আবার নির্বাহী হাকিম তাজনীনের কাছে যাওয়ার জন্য বলেন।
এরপরে তাজনীন বলেন, রনির অস্ত্রের লাইসেন্সের ফাইলটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। “ফাইলটি পুরনো বলে খুঁজে পেতে সময় দিতে হবে, অন্তত দুই থেকে তিন দিন।” বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী জেলা প্রশাসক ছোট-বড় সব ধরনের অস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করেন। পিস্তল ও রিভলবারের লাইসেন্স পেতে বছরে তিন লাখ এবং শটগানের জন্য এক লাখ টাকা আয়কর দেওয়ার শর্ত রয়েছে বলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান।
গত ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে জোড়া খুনের ঘটনার পর পুলিশ রনিকে গ্রেপ্তার এবং তার পিস্তলটি জব্দ করে। পরে নিহত একজনের শরীরে পাওয়া গুলি এবং রনির পিস্তল সিআইডির ব্যালাস্টিক পরীক্ষায় পাঠানো হলে তাতে হুবহু মিল পাওয়া যায় বলে পুলিশ জানায়। এ মামলায় রনির গাড়িচালক এবং এক বন্ধু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ওই রাতে ৪২ বছর বয়সী এই সাংসদপুত্রের গুলিবর্ষণের কথা জানিয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসাআই দীপক কুমার দাশ বলেন, রনি যে পিস্তল দিয়ে গুলি ছুড়েছিলেন সেটি লাইসেন্স করা এবং ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে ২০১০ সালে এই অস্ত্রের লাইসেন্স পান তিনি। মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ পিনু খানের ছেলে রনি ব্যবসায়ী হিসাবে অস্ত্রের লাইসেন্স পেলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে ১৮/১ নয়া পল্টনের ঠিকানায় ‘পিসি প্যান ইনস্ট্রাকশন কোম্পানি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে তার যাতায়াত ছিল বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
রনির স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিঅ্যান্ডএফ ও শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন সাংসদপুত্র রনি। তবে তার এসব ব্যবসা সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি কেউ। একটি সূত্র বলছে, কয়েক বছর আগে বনানীতে একটি রেস্তোরাঁ খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন রনি। এদিকে রনির নামে এই অস্ত্র কীভাবে ইস্যু হলো তার ব্যাখ্যা চেয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকার জেলা প্রশাসক ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে লিগ্যাল নোটিস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ।
“যতটুকু জানা গেছে রনি কোনো ব্যবসায়ী নন। পিস্তল বা রিভলবার নিতে হলে বছরে অন্তত দুই লাখ টাকা আয়কর দিতে হয়। অথচ রনি এ টাকা আয়কর দেন কি না সন্দেহ।” নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লিগ্যাল নোটিসের জবাব না পেলে রিট আবেদন করা হবে বলে জানান ইউনুস আলী আকন্দ। রনির মা পিনু খানও ছেলের ব্যবসা সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে। তিনি বলেন, “রনি যে অস্ত্র ব্যবহার করতো তার লাইসেন্স আছে। সেটি বৈধভাবেই ও পেয়েছিল ২০১০ সালে।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দীপক জানান, রনি নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সহসম্পাদক বলে দাবি করতেন। ২০১০ সালে ধানমণ্ডির একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা তার অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করেছিলেন অভিযোগ রয়েছে। রনির মা পিনু খান বলেন, “ধানমণ্ডি এলাকার সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস খুবই ভালবাসতো রনিকে এবং প্রায় সময় এই সংসদ সদস্যের সাথে তাকে দেখা যেত।”
তবে রনির অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য কোথাও কোনো সুপারিশ করেননি দাবি করে সাংসদ ফজলে নূর তাপস “রনি আমার এলাকার ছেলে। এক সময় আমার কাছে আসত। ২০০৮ সালে আমার হয়ে নির্বাচনে কাজ করেছিল। তখন ও ভালো ছিল। “ওর (রনি) মা সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে আমার কাছে আর আসে না।”
এদিকে ছেলের অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে তার কোনো ভূমিকা ছিল না দাবি করে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী পিনু খান বলেন, “আমার পরিবারের কেউ কখনোই কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কোনো অনৈতিক সুবিধা নেয়নি। “তাছাড়া ২০১০ সালে তো আমি এমপিও ছিলাম না। আমি ওর অস্ত্র নেবার ফর্মে কোনো সুপারিশও করিনি। অন্য কোনো সাংসদের প্রভাব রনি ব্যবহার করেছিল কি না সেটি তো আমি বলতে পারব না।”বখতিয়ার আলম রনির বন্ধু, পরিবার ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা যায়, নিউ মার্কেট থানার ১৮১ এলিফেন্ট রোডে এক সময় বাবা মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন রনি।
ছেলেবেলায় উদয়ন স্কুল ও আরব মিশন স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। ঢাকা কলেজের ছাত্র থাকাকালে একবার কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও প্রার্থী হয়েছিলেন। ঢাকা কলেজ থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন রনি। ২০০৩ সালে বিয়ের পর সাড়ে চার বছর পরিবারের সঙ্গে থেকে পরে স্ত্রীসহ ধানমন্ডিতে বসবাস করতে শুরু করেন। ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কের ২৫ নম্বর বাড়ির ৩/সি ফ্লাটে স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করছিলেন তিনি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সাময়িক বরখাস্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেবিস্তারিত পড়ুন
কমলা হ্যারিসের ভোটের প্রচারণায় বাজবে এ আর রহমানের গান
আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসেরবিস্তারিত পড়ুন
উপদেষ্টা আদিলুর: পূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না
দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেবিস্তারিত পড়ুন