সাকিব আল হাসান কি ভাবে হলেন আজকের বিশ্বসেরা!
২০০৬ সালের ঠিক এই দিনে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে হারারেতে তাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেক। সেই শুরু, এরপর সবাই শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছেই। অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় তারকা হয়ে উঠলেন সাকিব আল হাসান।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার দুই দিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে মুঠোফোনে তারেক মাহমুদকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ার ছাড়াও তিনি কথা বলেছেন আরও অনেক কিছু নিয়েই।
* ৬ আগস্ট (আজ) আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনার ১০ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। বিষয়টা মাথায় আছে নিশ্চয়ই…
সাকিব: অনেকে আলোচনা করে, এ নিয়ে কথা বলে। তখন তো মনে আসেই।
* এই ১০ বছরে ক্রিকেটার হিসেবে যা পেয়েছেন, তাতে কতটা সন্তুষ্ট?
সাকিব: যা পেয়েছি, অনেক বেশি পেয়েছি…সব ক্ষেত্রেই। এতটা আশা করিনি। আমি যেখান থেকে এসেছি, কোনো দিন কি চিন্তাও করেছি কখনো এ রকম হব বা এই পর্যায়ে খেলব?
* এসব তো আপনি নিজের মেধা, চেষ্টা আর পরিশ্রম দিয়েই পেয়েছেন…
সাকিব: সেটা ঠিক আছে। চেষ্টা, মেধা এসব অনেকেরই থাকে। পরিশ্রমও করে মানুষ। আমার চেয়ে বেশিই করে। তাও তো সব পায় না!
* আপনার এই ১০ বছরের অর্জনে আর কিসের ভূমিকা বেশি?
সাকিব: ভাগ্যের একটা ব্যাপার তো থাকেই। সবকিছুতেই ভাগ্যের দরকার আছে। তবে এমন কিছু নেই যা আমাকে এগিয়ে যেতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে। নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। সবকিছু মিলেই হয়েছে। কষ্ট, চেষ্টা, ভাগ্য, পরিশ্রম, ত্যাগ—সব মিলিয়েই।
* ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে কি কোনো লক্ষ্য স্থির করেছিলেন যে, একটা পর্যায়ে এ রকম বা এর চেয়ে ভালো কোনো অবস্থানে থাকবেন?
সাকিব: (হাসি) ক্যারিয়ার শুরু হওয়ার পরও আসলে বুঝিনি, এটাই ক্যারিয়ার বা এটাই শুরু। কয়েক বছর খেলে ফেলার পর মনে হলো আমার একটা ক্যারিয়ার চলছে। তত দিনে আর এসব চিন্তা করার সময় ছিল না।
১০ বছর খেলে ফেলার পর এখন যদি জানতে চাই ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান, কী বলবেন?
সাকিব: আমার নিজের কাছে নিজের অত চাওয়া নেই। বাংলাদেশের হয়ে ট্রফি জিততে পারলেই খুশি। সেটা যেকোনো ট্রফি। ট্রফি জিততে থাকলেই হয়। টেস্টেও চাইব বাংলাদেশ ভালো একটা অবস্থানে থাকুক। তার আগে অবশ্য আমাদের নিয়মিত টেস্ট খেলতে
হবে।
* বিসিসিআই তো ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ-ভারত একমাত্র টেস্টের তারিখ ঘোষণা করে দিল। টেস্টটা তাহলে হচ্ছে!
সাকিব: ভালো খবর। তবে এটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। একটা টেস্ট খেলুড়ে দেশ আরেকটা টেস্ট খেলুড়ে দেশের সঙ্গে টেস্ট খেলবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।
* তবু ২০০০ সালে টেস্ট অভিষেকের পর এই প্রথম ভারতে টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ দল। একটা অপূর্ণতা তো ঘুচছে…
সাকিব: আমি ওভাবে চিন্তা করি না। আর আমি তো এখনো অস্ট্রেলিয়ায়ও টেস্ট খেলিনি। ওটা আরও বড় অপূর্ণতা। ভারতে টেস্ট খেলা হলে যাব, যদি দলে থাকি…এই তো! ওখানে টেস্ট খেলাটা এর বেশি কিছু নয় আমার জন্য।
* এবারের সিপিএল কেমন গেল?
সাকিব: ঠিকঠাকই গেছে মোটামুটি। সব ম্যাচে ব্যাটিংয়ের ও রকম সুযোগ হয়নি, বোলিংয়েও বেশি কিছু করার ছিল না। যখন করার সুযোগ ছিল করেছি। পরিস্থিতি অনুযায়ী দলের প্রয়োজন মিটিয়ে খেলতে পেরেছি। আমি সন্তুষ্ট।
* ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট তো প্রায় সবই খেললেন। সব দিক বিবেচনায় অন্য টুর্নামেন্টগুলোর তুলনায় সিপিএলকে কোথায় রাখবেন?
সাকিব: আলাদা কিছু তো দেখিনি। তুলনা করার কিছু নেই। তবে প্রথমবার এই টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে একটু সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম, সেটা মনে আছে (হাসি)।
* টি-টোয়েন্টি বিনোদনের ক্রিকেট। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মানুষ তো ক্রিকেট ও বিনোদন, দুটোরই পাগল। এই ক্রিকেট নিয়ে তাদের আগ্রহ কেমন?
সাকিব: এমনিতে যা-ই হোক, খেলা নিয়ে ওরা সিরিয়াস। তবে আমাদের দেশে দর্শকেরা যেমন খেলায় বেশি মনোযোগ দেয়, এখানে তারা মাঠে আসে মজা করতে। খেলাটা দেখাও ওদের জন্য একটা মজা। সময়টা ভালো কাটানো, উপভোগ করা—এগুলোই তাদের কাছে আসল।
* উসাইন বোল্টের দেশের দলের হয়ে খেলছেন। অলিম্পিকের মৌসুমে জ্যামাইকার মানুষের তো বোল্টের দিকেই বেশি চোখ থাকার কথা…
সাকিব: কই, আমি তো অলিম্পিক নিয়ে তাদের কোনো কৌতূহল দেখি না! আমার অবশ্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে সেভাবে মেশার সুযোগ হয়নি। তবে যাদের সঙ্গেই মিশছি, কাউকে এসব নিয়ে তেমন আলোচনা করতে দেখিনি। আর আমি নিজেও অলিম্পিক নিয়ে অতটা আগ্রহী নই।
* কোনো ইভেন্ট নিয়েই আগ্রহ নেই?
সাকিব: সুযোগ পেলে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট টিভিতে দেখব…এই আর কী। সামনে অন্য কোনো ইভেন্ট পড়ে গেলেও দেখতে পারি।
* অলিম্পিকের ১০০ মিটার স্প্রিন্ট কখনো সরাসরি দেখার ইচ্ছা আছে?
সাকিব: হ্যাঁ, আছে। কখনো সুযোগ পেলে ওটাই দেখব। ব্রাজিলে গিয়ে দেখতে পারলেই ভালো হতো।
* জ্যামাইকায় বোল্টের রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন। কেমন ছিল অভিজ্ঞতা?
সাকিব: বোল্টের রেস্টুরেন্ট আছে, ক্রিস গেইলেরও আছে। সবারগুলোতেই গিয়েছি। বোল্টের ট্র্যাক অ্যান্ড রেকর্ডস অনেকটা পাব জাতীয়। ছোট একটু ক্যাসিনোর মতো আছে। জামাকাপড়ও বিক্রি হয় দেখলাম। সময় পেলে বোল্টের সঙ্গে দেখা করতে চাইতাম।
* এবার যুক্তরাষ্ট্রেও দুটি ম্যাচ খেলেছেন। সেখানকার ক্রিকেট-সংস্কৃতি কেমন দেখলেন?
সাকিব: এশিয়ানরাই বেশি খেলা দেখতে আসে। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দর্শকও অনেক। তবে ওই দেশের মানুষ মাঠে তেমন একটা আসে না। অবশ্য ক্রিকেট নিয়ে যে খুব বেশি একটা আগ্রহ তাদের নেই, সেটা তো জানাই। তবে ওখানকার মাঠ, উইকেট—দুটোই খুব ভালো। আমার জন্য ভালো হয়েছে। এ সুযোগে মায়ামি ঘুরে এসেছি।
* বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রসঙ্গে আসি। অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ খেলার কথা আপনাদের। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে সিরিজটা নিয়ে সামান্য হলেও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি আপনি কীভাবে দেখছেন?
সাকিব: আমি চাই ওরা আসুক, আমাদের সঙ্গে খেলুক। এখন ইংল্যান্ডের মানুষ তো নিশ্চয়ই ফ্রান্সে যাওয়া বন্ধ করবে না। ওখানেও তো এসব হচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশে আসতে সমস্যা কী? অস্ট্রেলিয়া যে এল না, ওটা তো কোনো কারণ ছাড়াই। অন্তত আমরা জানতাম না ওরা কেন আসেনি। কিছু ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তারা আসেনি। এখন ইংল্যান্ড সিরিজের আগেও কিছু ঘটনা ঘটেছে। সেসবের ওপর ভিত্তি করে ওরা আসবে কি আসবে না, সেটাই বড় প্রশ্ন। তবে আমি অবশ্যই চাই ইংল্যান্ড আসুক।
* সিরিজটা হলেও আপনারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামবেন মোটামুটি লম্বা একটা বিরতির পর। এর কোনো প্রভাব কি পড়তে পারে খেলায়?
সাকিব: এটা বলা কঠিন। অসুবিধা একটু হতে পারে। তবে সবাই তো ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছে। খেলার মধ্যেই ছিল।-প্রথম আলো
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন