সাকিব-তামিম-মুশফিক, এবার
বাংলাদেশ-ভারত সবশেষ টেস্ট সিরিজ হয়েছে ২০১০ সালে। যথারীতি দুই টেস্টই হেরেছিল বাংলাদেশ। তবে সেই প্রথম ভারতের বিপক্ষে টেস্টে লড়াই করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। সেই লড়াইয়ের অগ্রযোদ্ধা ছিলেন দলের তিন তরুণ ক্রিকেটার, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। স্মৃতির আয়নায় ফিরে দেখা যাক তিন তরুণের বীরত্বকে!
সাকিব আল হাসান, ৫/৬২, চট্টগ্রাম
সিরিজের প্রথম দিনেই ভারতকে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ- প্রথমে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে; পরে প্রথম ইনিংসে ভারতকে ২৪৩ রানে গুটিয়ে দিয়ে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই সময়ের অধিনায়ক সাকিব।
৫১ বলে ৫২ রান করা বীরেন্দর শেবাগকে ফিরিয়ে ভেঙেছিলেন হুমকি হয়ে ওঠা উদ্বোধনী জুটি। পরে ফিরিয়েছিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ, যুবরাজ সিং, জহির খান ও শ্রীশান্তকে। ২৯.৫ ওভারে ১০ মেডেন, ৬২ রান দিয়ে ৫ উইকেট। অভিষেক টেস্টে নাঈমুর রহমানের ৬ উইকেটের পর ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা বোলিং।সাকিবের দেওয়া ওই ৬২ রানের ৪৫ রানই ছিল অপরাজিত সেঞ্চুরি করা শচীন টেন্ডুলকারের ব্যাটে। বাকি কাউকেই পাখা মেলতে দেননি সাকিব।
মুশফিকুর রহিম, ১০১, চট্টগ্রাম
২৪৩ রানে গুটিয়ে গিয়েও ভারত সেবার প্রথম ইনিংসে শেষ পর্যন্ত লিড পেয়েছিল ১ রানের। পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১৩ রান তুলে জয়ের জন্য বাংলাদেশকে দেয় ৪১৫ রানের লক্ষ্য। স্বাভাবিক ভাবেই পাহাড়সম রান টপকাতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ওই ব্যর্থ রান তাড়াই দারুণ স্মরণীয় হয়ে আছে মুশফিকের রহিমের জন্য। ওই ইনিংসেই মুশফিক পেয়েছিলেন বহু আরাধ্য প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি।
ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন ৭ নম্বরে। ১৩৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে বাংলাদেশ। উইকেটে যাওয়ার পরপর মুশফিক ফিরে যেতে দেখলেন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহকেও। নিজের করণীয়টাও বুঝি বুঝে নিলেন। পাল্টা আক্রমণে হতচকিত করে দিলেন ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে। লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে লড়াই করে বাংলাদেশের পরাজয়টাকে রূপ দিয়েছিলেন ভদ্রস্থ এক চেহারার। অষ্টম উইকেটে শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে মুশফিক গড়েছিলেন ৬০ রানের জুটি, শেষ উইকেটে রুবেল হোসেনের সঙ্গে ৪৩। ৭৫ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছিলেন মুশফিক, পরের পঞ্চাশ ছুঁতে লেগেছিল আর মাত্র ৩৭ বল। শেষ পর্যন্ত ১৭ চার ও ১ ছয়ে ১১৪ বলে ১০১!
তামিম ইকবাল, ১৫১, মিরপুর
ঘরের মাঠ চট্টগ্রামে দুই ইনিংসেই আউট হয়েছিলেন থিতু হয়ে (৫২ ও ৩১)। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে মিরপুরে আউট শূন্য রানেই। তামিমের কাছে তাই একটা বড় ইনিংস পাওনা ছিল দলের। তামিম নিজেও নিশ্চয়ই অনুভব করছিলেন তাগিদ। সেই উপলব্ধিই ফুটে উঠেছিল যেন ব্যাটিং বিস্ফোরণে।
৪৯ বলে ৭ চারে তামিম ছুঁয়েছিলেন অর্ধশত, ১৩ চার ও ২ ছক্কায় ১০১ বলে শতক। দ্বিতীয় উইকেটে জুনায়েদ সিদ্দিকের সঙ্গে গড়েছিলেন ২০০ রানের জুটি, টেস্টে যেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম দুইশ’ রানের জুটি। একদিকে তোপ দাগাচ্ছিলেন জহির খান। ভারতের বাঁহাতি পেসার নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। আরেকদিকে তামিমের ব্যাট থেকে ছুটছিল রানের ফোয়ারা। সেঞ্চুরি করেই থামেননি, ছুঁয়ে ফেলেন পরে দেড়শ’ও। শেষ পর্যন্ত ১৮ চার ও ৩ ছক্কায় ১৮৩ বলে ১৫১। ৭ উইকেট নেওয়া জহির খানের ৩৬ বলে নিয়েছিলেন ৩৬ রান, বাঁহাতি স্পিনার প্রজ্ঞান ওঝার ৩৪ বলে ৪০! ১৫১ রান করে তামিম যখন আউট হলেন, দলের রান তখন ২২২।
এবার ফতুল্লা
শুধু গত সিরিজেই নয়, ভারতের বিপক্ষে বরাবরই উজ্জ্বল এই তিনজন। ২০০৭ বিশ্বকাপের সেই ভারত-বধ মহাকাব্যের অন্যতম তিন নায়ক তারা। ২০১২ এশিয়া কাপে শচীন টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরির ম্যাচে ভারতকে হতাশায় ডোবানোর নায়কও তারা তিনজন। সাদা পোশাকে ভারতের বিপক্ষে তিনজনের ব্যক্তিগত সাফল্য এলেও দেখা মেলেনি দলীয় সাফল্যের। ফতুল্লায় সিরিজের একমাত্র টেস্টে সেই খরা ঘোচানোর সুযোগ এসেছে এবার।
ভারতের বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট সিরিজের সময় সাকিব আল হাসানের বয়স ছিল ২২, তখনই ছিলেন দলের অধিনায়ক। মুশফিকুর রহিমেরও বয়স ছিল ২২, তামিম ইকবালের ছিল ২০। সেবার থেকে এবার, শুধু বয়সই বাড়েনি তিনজনের, যোগ হয়েছে আরও ৫ বছরের ক্রিকেট অভিজ্ঞতা। তিন জনই এখন অনেক পরিণত। সময়ের পরিক্রমায় তিনজনই এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের তিন স্তম্ভ। এবার তাই শুধু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে আলো ছড়ানো নয়, সেই আলোয় দলকে আলোকিত করার পালা।
পাকিস্তান সিরিজে দুর্দান্ত পারফর্ম করা তামিমের জন্য সুযোগ নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার। ওই সিরিজটায় ম্লান থাকা সাকিব ও মুশফিকের জন্য সুযোগ আবার জ্বলে ওঠার। নিজ আঙিনায় যখন ভারত, জ্বলে ওঠার জন্য এর চেয়ে আদর্শ উপলক্ষ আর কী আছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন