সাগরে মহেশখালীর ১৫ জেলের সলিল সমাধি; জীবিত ফিরেছেন একজন!
গভীর সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের ১৬ জেলে সহ একটি মাছধরা নৌকা নিখোঁজের দুই সপ্তাহ পর জানা গেল হতভাগ্য জেলেদের ১৫ জন আর বেঁচে নেই। সাগর থেকে উদ্ধার হওয়া একমাত্র জীবিত জেলে নুরুল হুদা বান্ডু(২৬) আজ রবিবার মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার(ইউএনও) নিকট এসে জানিয়েছেন-তার চোখের সামনেই ১৫ জন সতীর্থের সলিল সমাধি ঘটেছে। এ নিয়ে জেলে পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
জানা গেছে, মহেশখালী দ্বীপের কুতুবজুম ইউনিয়নের খোন্দকার পাড়া গ্রামের হাজি ফজল করিমের পুত্র সাবেক ইউপি মেম্বার নুরুল কবির এর মালিকাধীন ‘এফবি আবছার-৪’ নামের ৩৭ অশ্বশক্তি সম্পন্ন ইঞ্জিনের একটি নৌকা সাগরে মাছ ধরতে যায়। নৌকাটির ১৬ জন জেলে সবাই মহেশখালীর দ্বীপের বাসিন্দা। সাগরের পানিতে ভাসা জাল নিয়েই মাছ শিকারের এই জেলেরা নৌকাটি নিয়ে রওয়ানা দেয় গত ১২ আগষ্ট।
নৌকাটির মালিক নুরুল কবির জানান, জেলেরা যখন সাগরে যাচ্ছিলেন তখন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ছিল। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতির আশায় জেলেরা পাড়ি দিয়েছিলেন সাগরে। কিন্তু জেলেরা সাগরে যাবার একদিন পর থেকেই আবহাওয়া পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। এমনকি ১৫ আগষ্ট ১৬ জন জেলে নিয়ে গভীর সাগরে বৈরী আবহাওয়ায় পড়ে নৌকাটি ডুবে যায়।
সেই নৌকায় ১৬ জেলের মধ্যে উদ্ধার হওয়া জেলে মহেশখালী দ্বীপের কুতুবজোম ইউনিয়নের মেহেরিয়া পাড়ার মৃত মোসতাক আহমদের পুত্র নুরুল হুদা বান্ডু জানান-“আমরা গত ১২ আগষ্ট সাগরে মাছ ধরতে যাবার ৩ দিন পর নৌকা সহ ডুবে যাই। যখন আমাদের নৌকাটি পানির ঢেউয়ের আঘাতে ডুবে যাচ্ছিল তখন ১০ জন জেলে ছিল ট্রলারের মাছ রাখার হিমঘরে, আমি সহ বাকি ৬ জন ছিলাম উপরে। প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে নৌকাটি ডুবে যাওয়ার পর আমরা একেক জন একেক দিকে ছিটকে পড়ি। আমার সামনেই ৫ জন পানিতে ডুবে গেছে।”
নুরুল হুদা আরো বলেন, “নৌকা ডুবে যাবার পর সঙ্গীদেরও হারিয়ে ফেলি। আমি কোন রকমে পরনের লুঙ্গিটি গলায় পেঁচিয়ে সাগরে ভাসতে থাকি। ক্রমশ আমি দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলাম। ভাসতে ভাসতে এক সময় আমি একটি বয়া হাতে পাই। একটি লম্বা রশি লাগানো সেই বয়া নিয়ে অথৈ সাগরে টানা ৫ দিন ভাসার পর অপর একটি মাছ ধরা নৌকার জেলেরা আমাকে উদ্ধার করে।” উদ্ধার হওয়া জেলে নুরুল হুদা বান্ডু গতকাল মহেশখালীর ইউএনওকে সাগরে ডুবে যাওয়ার এসব বিবরণ জানান। মহেশখালী উপজেলার ইউএনও মোহাম্মদ আবুল কালাম গতকাল সন্ধ্যায় কালের কন্ঠকে বলেন-“উদ্ধার হওয়া জেলে নুরুল হুদা বান্ডুর কথা শুনে আমি নিজেই হতবাক হয়ে পড়েছি। কি করে একজন মানুষ টানা ৫ দিন ধরে সাগরে ভেসে রইলো। যাকে বলা যায়-রাখে আল্লাহ মারে কে।”
মহেশখালীর ইউএনও আরো জানান, তিনি জানতে পেরেছেন দ্বীপের ধলঘাটা এলাকার শুক্কুর মাঝির মালিকানাধীন একটি মাছধরা নৌকার জেলেরা সাগরে ৫ দিন ধরে ভাসমান জেলে বান্ডুকে উদ্ধার করে উদ্ধার করেন। গত ২০ আগষ্ট সাগরে জেলে বান্ডুকে উদ্ধারের পর তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সেই নৌকায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। শুক্কুর মাঝির নৌকার জেলেরা বান্ডুকে নিয়ে আরো ৬দিন সাগরে অবস্থান নিয়ে মাছ শিকার করে। এর পর গত ২৬ আগষ্ট নৌকাটি মাছ নিয়ে চট্টগ্রাম উপকুলে ফিরে। সেখান থেকেই জেলে বান্ডুকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে নৌকার মালিক নুরুল কবির মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে উদ্ধার হওয়া জেলে নুরুল হুদা বান্ডুকে চিকিৎসা দিয়ে দ্বীপে ফিরিয়ে আনেন। এদিকে নৌকার হতভাগ্য অপর ১৫ জন জেলেরা হলেন যথাক্রমে আবদু শুক্কুর মাঝি, মোহাম্মদ হাসেম, মো: জোবাইর, সোনামিয়া, শাহজাহান, মো: আমান উল্লাহ, আলতাজ মিয়া, শাহ আলম, মিজান, শওকত ওসমান, ছৈয়দ করিম, আকতার কামাল, রাসেল, রুবেল, ও মোকারম। তারা সবাই মহেশখালীর উপজেলার কুতুবজুমের খোন্দকার পাড়া, কামিতার পাড়া, মেহেরিয়াপাড়ার বাসিন্দা। নিহতের তালিকায় নৌকার মালিকের আপন ভাই এবং ভগ্নিপতি রয়েছেন।
সাগরে একসঙ্গে ১৫ জন জেলের করুণ মৃত্যুর ঘটনায় মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সাংসদ আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক নিহতের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবুল কালাম জানান, “প্রাথমিক ভাবে নিহতদের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন