সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত এলিজাবেথ-মিঠুন দম্পতি
বাংলাদেশের অজপাড়ার সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত মিঠুন-এলিজাবেথ দম্পতি। সমাজ, রাষ্ট্র ও সংস্কৃতির বাধা পেরিয়ে সুদূর আমেরিকা থেকে প্রেমের ডাকে সাড়া দিয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রাখালগাছি গ্রামে ছুটে আসেন মার্কিন তরুণী এলিজাবেথ (১৯)। সব প্রতিবন্ধকতা উতরে ঘর বেঁধেছেন ওই গ্রামের নির্মল বিশ্বাসের ছেলে মিঠুন বিশ্বাসের (২৪) সঙ্গে।
তাদের এ বিয়েতে খুশি মিঠুনের বাবা-মা। আর প্রথমে আপত্তি করলেও বিয়ের পর নবদম্পতিকে শুভকামনা জানিয়েছেন মিঠুনের শ্বশুর-শাশুড়ি রয় এসলিক ও সনিয়া এসলিক। প্রতিদিন রাখালগাছি গ্রামের সহজ-সরল মানুষের নির্মল ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন এলিজাবেথ। তিনি বলেন, নতুন অভিজ্ঞতাকে তিনি দারুণ উপভোগ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বড় হওয়া এলিজাবেথের সঙ্গে মিঠুনের যোগাযোগ ফেসবুকে। এরপর পরিচয়। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব, প্রেম। সেই নির্মোহ প্রেমকে চূড়ান্ত পরিণতি দিতে পরিবারের বাধা উপেক্ষা করে নিজে পরিশ্রম করে অর্থ জমিয়ে ছুটে আসেন বাংলাদেশে। তারপর পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে। মার্কিন নাগরিক এলিজাবেথ ও বাংলাদেশের তরুণ মিঠুনের প্রেম কাহিনী নিভৃত পল্লিতে আড়োলন সৃষ্টি করেছে।
সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে জড়িত কৃষকের ছেলে মিঠুনের বিশ্বাসের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্ককে ভালোভাবে নেয়নি এলিজাবেথের বাবা আমেরিকার ওয়াশিংটন সিটির রয় এসলিক। কিন্তু হতাশ হননি এলিজাবেথ। গ্রাজুয়েশন শেষ করে চাকরি করে অর্থ জমিয়ে বাবা ও মায়ের সিদ্ধান্তের বাইরে এসে প্রেমিককে বাস্তবে দেখতে চলে আসেন বাংলাদেশে।
মিঠুন বিশ্বাস খুলনা আজম খান কমার্স কলেজে বিবিএ পড়তেন। এর মধ্যে তিন বছর আগে সিংগাপুরের উদ্দেশে পাড়ি জমান। তিনি বাবা নির্মল বিশ্বাস ও মা মায়া বিশ্বাসের ছোট ছেলে। তারা তিন ভাই। বিদেশে থাকাকালীন ইংরেজিতে কথা বলায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি।
মিঠুন বিশ্বাস জানান, ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফেসবুকে এলিজাবেথের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। প্রথমে বন্ধুত্ব, পরে প্রেম। এভাবে প্রায় আড়াই বছর কাটে তাদের। এক পর্যায়ে উভয়ের পরিবারকে তাদের প্রেমের কথা জানান। এক সময় এলিজাবেথ বাংলাদেশ বলে কোনো দেশ আছে তা জানতেন না। এলিজাবেথের পরিবার বাংলাদেশকে উগ্রপন্থি মুসলিম দেশ বলে তার কাছে উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশে গেলে তাকে মেরে ফেলা হবে বলেও ভয় দেখান।
কিন্তু দমে যাননি এলিজাবেথ। ওয়ালমাট শপিং কমপ্লেক্সে ক্যাশিয়ার হিসেবে চাকরি নেন। বেশ কয়েক মাস সেখানে চাকরি করে অর্থ জমান। এরপর বাংলাদেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করে ভিসা নিয়ে গত ২ জানুয়ারি বাংলাদেশে আসেন।
মিঠুনসহ তার পরিবার ঢাকার বিমানন্দরে এলিজাবেথকে রিসিভ করেন। মাইক্রোবাসে করে তারা চলে আসেন কালীগঞ্জ উপজেলার রাখালগাছি গ্রামে।
এলিজাবেথ রাখালগাছি গ্রামে আসলে এলাকায় হৈ চৈ পড়ে যায়। প্রতিদিন অনেক মানুষ আসেন মিঠুনদের বাড়িতে এলিজাবেথের সঙ্গে আলাপ করতে। তাদের সঙ্গে এলিজাবেথের ভাব বিনিময় হয়। বিষয়টি দারুণ উপভোগ করেন তিনি। এরপর ৪ জানুয়ারি তাদের অ্যানগেজমেন্ট হয়। ৯ জানুয়ারি খুলনার শালক এজি চার্চে খ্রিস্টান ধর্মীয় মতে তাদের বিয়ে হয়।
মিঠুন বিশ্বাস অভিব্যক্তি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, এখন তারা সুখ-শান্তিতে সংসার করছেন।
এলিজাবেথের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এ দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। খাবার খেতেও সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন অনেক মানুষ তাদের কাছে আসছেন। কথা বলছেন। কিন্তু তিনি বাংলা বুঝতে না পারায় সমস্যা হয়। মিঠুন তাকে সব বুঝিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, ‘আমি মিঠুনকে পেয়ে খুব সুখী। ওকে নিয়ে আমেরিকায় ফিরে যেতে চাই। দুজনই চাকরি করব।’
বিয়ের পর এলিজাবেথ তার বাবা-মা এবং দুই ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। এখন তারাও খুশি। তারা নবদম্পতিকে শুভকামনা জানিয়েছেন।
মিঠুনের বাবা নির্মল বিশ্বাস ও মা মায়া বিশ্বাস বলেন, ‘মিঠুন একদিন এলিজাবেথের ছবি দেখিয়েছিল। আমাদের মনে দ্বিধা ছিল- বাংলাদেশের একজন দরিদ্র কৃষকের ছেলেকে মেয়েটি পছন্দ করতে পারে কি না? এখন তাদের নতুন জীবনের জন্য দোয়া করি। তারা যেন সুখে থাকে।’
সূত্র: রাইজিংবিডি
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ভরিতে এবার ১,৯৯৪ টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনবিস্তারিত পড়ুন
সংস্কার হলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত কমানো সম্ভব জানালো সিপিডি
মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কার হলে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ১১বিস্তারিত পড়ুন
রাজশাহীতে সমন্বয়ককে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় এক সমন্বয়ককে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগবিস্তারিত পড়ুন