সাভারে একটা বড় বিলবোর্ডে তাসকিনকে দেখে কেঁদে ফেলেছিলাম: তাসকিনের মা

বাংলাদেশের জাতীয় দলের পেসার তাসকিন আহমেদের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আইসিসি। তারপর অনেক দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারেননি তাসকিন। অবশেষে ফিরে এসে শ্রীলঙ্কায় করলেন হ্যাটট্রিক। মা সাবিনা ইয়াসমিন রুপা ছিলেন ছেলের সংগ্রামী দিনগুলোর সঙ্গী। মাহবুবর রহমান সুমনকে শুনিয়েছেন আরো অনেক কথা
মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডে ছয়তলা একটি ভবন। ভবনের সামনে একটি ল্যাম্পপোস্ট। তাসকিনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি ব্যানার ঝুলছে তাতে। ভবনের দোতলায় উঠে কলিংবেল চাপলাম। দরজা খুলে স্বাগত জানালেন তাসকিন আহমেদের বাবা মো. আব্দুর রশিদ। ড্রইংরুমে বসেছিলেন তাসকিনের নানা আর মা। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের খবর শুনছিলেন।
দুষ্টু-মিষ্টি শৈশব
মাঝেমধ্যে ঘরে তালা দিয়েও রাখতে হতো। নইলে তাসকিন রোদের মধ্যেই খেলতে চলে যেত। ঘরে থাকলে কিছুক্ষণ পরপরই ঘড়ি দেখত। কখন বাজবে ৪টা! ৪টা বাজলেই বল নিয়ে দে ছুট। তাসকিন তখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। রোদে খেলছিল বলে বাবা তাকে পেটাতে পেটাতে বাসায় নিয়ে আসেন। ছেলের কষ্ট মা সইতে না পেরে কেঁদে ফেলেন। তবে শতগুণ কষ্ট পেয়েছিলেন যেদিন তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আইসিসি। দূরে সরিয়ে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে।
ঠিক ওই দিনটির কথা
বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব। হল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা শেষ করে রাতে বাবাকে ফোন করেছিলেন তাসকিন। ছেলের গলা শুনেই বাবা বুঝেছিলেন ছেলের মন খারাপ। প্রথমে কিছু বলতে চাননি। পরে বললেন, ‘আমার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে আম্পায়ার সন্দেহ প্রকাশ করেছে। ’ বাবা আতঙ্কিত হলেও সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এই বলে, ‘তুমি ভেব না, প্রমাণ তো হয়নি, শুধুই সন্দেহ। ’ সারা রাত অস্থির ছিলেন বাবা। মা বারবার জানতে চেয়েও সদুত্তর পাননি। তবে সকালে আর বিষয়টি গোপন রাখতে পারেননি বাবা। বললেন, একটা খারাপ খবর আছে, সন্দেহ প্রকাশ করেছে আম্পায়ার। এবার পরীক্ষা দিতে হবে তাসকিনকে। ফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত খেলতে পারবে না তাসকিন। বাকরুদ্ধ হলেন রুপা। কান্নায় ভেঙে পড়লেন। বারবার তাসকিনের সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলেন। দুঃখের দিনের কথা বলতে বলতে সাবিনা
ইয়াসমিনের গলা ধরে এলো। কান্না চাপতেই বুঝি উঠে গেলেন। তবে ফিরে এলেন হাতে নাশতার প্লেট নিয়ে।
ফিরে এসো তাসকিন
ওই দিনের পর থেকে পরিবারের সবাই ছিল মনমরা। শুধু তাসকিন-পরিবার নয়, গোটা দেশেরই ছিল মন খারাপ। প্রেস বক্সে মাশরাফিও কেঁদে ফেলেছিলেন। তাসকিন দেশে ফিরে বেশ কয়েক দিন বাসায় মন খারাপ করে বসেছিলেন। কারোর সঙ্গেই বেশি কথা বলেননি। প্রচণ্ড রকম ভেঙে পড়েছিলেন তাসকিন। ‘তখন আমি আর ওর আব্বু ছেলেকে বোঝানো শুরু করি। বিসিবির ক্যাম্প শুরু হওয়ার পর আমি প্রতিদিন ওকে সকালে ডেকে দিতাম। তারপর নাশতা খাইয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিতাম। ফিরত সেই সন্ধ্যায়। ফিরে হাত-মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে দাঁড়িয়ে যেত আয়নার সামনে। কোচের পরামর্শমতো বোলিং অ্যাকশন অনুশীলন করত। আমরা নানা রকম গল্প শুনিয়ে ওকে হাসি-খুশি রাখার চেষ্টা করতাম। তাসকিন দিন দিন আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল। খেলায় ফেরার পণ করেছিল। ’
অনুশীলনের সুবিধার জন্য তাসকিনের বেডরুমে তখন বিছানার পাশেই ছয় ফুট দীর্ঘ একটি আয়না লাগানো হয়েছিল। ‘কোনো কোনো দিন গভীর রাতে ছেলের ঘরে আওয়াজ শুনে আমার ঘুম ভেঙে যেত। উঠে গিয়ে দেখতাম তাসকিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। বিছানায় শুয়েও সে বোলিং নিয়ে চিন্তাভাবনা করত। কোনো কোনো সময় অস্থির হয়ে উঠে পড়ত। আবার দাঁড়াত গিয়ে আয়নার সামনে। ’
কখনো কখনো লোকে বাজে মন্তব্য করেছে। তাসকিনের মন খারাপ হয়ে গেছে। মাকে এসে বলেছে সেসব কথা। ‘আমি বলতাম আসলে তোমার ভক্তরা চায় তুমি শিগগিরই ফিরে আসো। তাই তারা তোমার মধ্যে জেদ তৈরি করছে। ’ ওই দিনগুলোতে তাসকিনের মা বিয়ে-শাদি বা তেমন কোনো অনুষ্ঠানে গেলে লোকে নানা প্রশ্ন করত। তিনি জানাতেন, তাসকিন খুব পরিশ্রম করছে। আশা করা যায়, শিগগিরই ফিরে আসবে।
আমি পাস করেছি
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা শেষ হয়। ছেলে মাকে ফোন করে জানায়, সে আত্মবিশ্বাসী, পরীক্ষায় পাস করবে। তারপর ২৩ সেপ্টেম্বরের জন্য অপেক্ষা। সেটি ছিল শুক্রবার। তাসকিন ছিলেন মিরপুর মাঠে। সতীর্থদের কাছ থেকে ফলাফল জানতে পেরেছেন। ফোনে বাবাকে বললেন, ‘আমি পাস করেছি। ’ মা শুনে কেঁদে বুক ভাসালেন। ‘এত সুখে আর কখনোই কাঁদিনি। আমার মনে হচ্ছিল, সারা জাকির হোসেন রোড আনন্দে ভাসছে। ’
হ্যাটট্রিকের দিন
শ্রীলঙ্কা সিরিজ শেষ হয়েছে বেশি দিন হয়নি। অনেকেরই মনে আছে বিশ্বের ৪১তম বোলার আর বাংলাদেশের পঞ্চম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করে ইতিহাসে নাম তুলেছেন তাসকিন আহমেদ। ইতিহাসের সাক্ষী সেই উইকেটগুলো বাড়ি নিয়ে এসেছেন তাসকিন আহমেদ। একটি উইকেট হাতে নিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন রুপা বলতে থাকলেন, ‘আমি নামাজ পড়ে খেলা দেখতে বসি। আর খেলা দেখতে দেখতে দোয়া করতে থাকি। ’ সেদিনও এমনই হচ্ছিল। স্বামীর সঙ্গে রুপা সেদিন ড্রইংরুমে বসে খেলা দেখছিলেন। শেষ ওভারে পরপর দুই বলে তাসকিন দুটি উইকেট তুলে নিলে তাঁদের নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এক-দুই সেকেন্ডও তখন খুব বড় লাগছিল। তারপর তাসকিন দৌড় শুরু করল। ‘আমি দোয়া পড়ে যাচ্ছি। চোখ বন্ধ। প্রথমে ওর বাবার চিৎকার শুনলাম। তারপর আশপাশ থেকে আরো চিৎকার। আমি চোখ খুলে দেখি আমার তাসকিন ইতিহাসে নাম লিখে ফেলেছে। হ্যাটট্রিক করেছে আমার তাসকিন। ’ সাবিনা ইয়াসমিন সেদিন আবার সুখে কেঁদেছিলেন।
তাসকিন আমার মানিক
‘বাবা আব্দুর রশিদ তাসকিনকে আব্বু বলে ডাকেন। কিন্তু আমি ডাকি মানিক বলে। আমি মানিকের জোড়। আমরা দারুণ বন্ধু। ছেলে দেশের বাইরে, আমি ভিডিও কলে কথা বলতে পারি না। ওকে দেখলেই আমার কান্না চলে আসে। দেশের বাইরে থাকলে ও খেলা শুরুর আগে ফোন করে আমার দোয়া চায়। আর খেলা শেষ করে যখন ফোন করে তখন আমি প্রতিবারই বলি, মানিক তুমি ভালো খেলেছ। ভবিষ্যতে আরো ভালো করবে। ’ সাবিনা ইয়াসমিন ক্রিকেটের এখনো অনেক নিয়ম বুঝতে পারেন না। সকালে নাশতা খাওয়ার সময় তাসকিন কিছু কিছু নিয়ম বলে। টিভির সামনে বসে সেগুলো আবার ঝালিয়ে নেন সাবিনা ইয়াসমিন। ছেলেকে খেলার বাইরে মানে বিজ্ঞাপনচিত্রে বা বিলবোর্ডে দেখলে কেমন লাগে? তাসকিনের মা বললেন, ‘এখন বেশি কিছু লাগে না, তবে প্রথমদিকে একবার সাভারে একটা বড় বিলবোর্ডে তাসকিনকে দেখে কেঁদে ফেলেছিলাম। ’ সাবিনা ইয়াসমিন ছেলের বিয়ে দিতে চান যখন তাঁর (তাসকিনের) বয়স ২৮ হবে। মানে আর চার বছর পর। ধুমধামের সঙ্গে বিয়ে দেবেন। সবাইকে আগাম দাওয়াত।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেবিস্তারিত পড়ুন

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম ম্যাচে আজ ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।বিস্তারিত পড়ুন

বিপিএলে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন বরিশাল
বিপিএলের ফাইনালে শুরুতে ব্যাটিং করে রেকর্ড রান সংগ্রহ করে প্রথমবিস্তারিত পড়ুন