সার্চ কমিটি গঠনে জনমতের প্রতিফলন চায় বিএনপি
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি বা অন্য কোনো কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ‘জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে’ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, জনমতের বাইরে কোনো কমিটি গঠন হলে জনগণ তা মেনে নেবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নবম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর বিএনপি।
১১ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দিবস হলেও ঈদুল আজহার কারণে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে সার্চ কমিটি গঠনের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই। তবে সেটি গণতান্ত্রিক উপায়ে এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে হতে হবে। গৃহপালিত ইসির অধীনে নয়।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নিজের মতো করে সবকিছু সাজিয়ে নেবেন, তা হবে না। সার্চ কমিটি করেন, আর যে কমিটিই করেন, জনমতের বাইরে গিয়ে কোনো কমিটি এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না।’
বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণের জন্য এক-এগারোতে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, এ দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সেই ধারাবাহিকতায় এখন একটি দল দেশে বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
‘ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সকল কৌশল নিয়ে বাংলাদেশকে রাজনীতিমুক্ত করতে চাচ্ছে। সেজন্য খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র হচ্ছে’, বলেন তিনি।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য খালেদা জিয়া সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, এ দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘উপমহাদেশে যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারো চেয়ে কম ত্যাগ স্বীকার করেননি। আপোশহীন মনোভাবের কারণে তাকে আজকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার সুপরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে। ভিন্ন মোড়কে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হচ্ছে। মামলা বিচারের পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যতই মামলা দেওয়া হোক না কেন, এ দেশের মানুষ কখনো দমননীতি মেনে নেবে না।’
সরকার জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছে, এ অভিযোগ করে বিএনপি মাহসিচব বলেন, ‘সরকার সন্ত্রাস দমনের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে কমিটি করেছে। এই কমিটিগুলো এখন তালিকা তৈরি করছে। তারা বিএনপি নেতাদের বলছে, এতো টাকা দাও, না হলে তোমাদের নাম জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়ানো হবে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চায় না, দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তারা জানে, সুষ্ঠু ভোট হলে জনগণের ভোট পাবে না। সবকিছুই তারা করছে চিরদিন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। তবে ইতিহাস বলে, এভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় না। দমননীতি নিয়ে যারা ক্ষমতায় থাকতে চায়, একদিন জনগণের সামনে তাদের জবাবদিহি করতে হয়।’
আলোচনা সভায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ২০১৪ সালের চেয়ে নিকৃষ্ট নির্বাচন করার জন্য সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠনের নামে মুলা ঝোলানো হয়েছে। শেখ হাসিনা বা রাষ্ট্রপতির অধীনে কোনো নিরপেক্ষ কমিশন গঠন হতে পারে না।
সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সার্চ কমিটি গঠনের জন্য সকল রাজনৈতিক দল থেকে পাঁচজন প্রতিনিধি নিয়ে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা তখনই নির্বাচন দেবে, যখন তাকে বাধ্য করা যাবে।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে আন্দোলন চলছে এবং ভবিষ্যতে হবে, তাতে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে শরিক হতে হবে।
দলের অন্যতম নীতিনির্ধারক আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে ভয়ভীতি সৃষ্টি করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা আকড়ে রাখতে শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, সাধারণ মা্নুষের মধ্যেও ভয়-ভীতি সৃষ্টি করেছে। উন্নয়নের দোহাই দিয়ে তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে।’
সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে যাদেরকে ইসির নেতৃত্বে আনা হয়েছিল, তাদের দিয়ে কী নির্বাচন হয়েছে তা মানুষ দেখেছে। সার্চ কমিটির নাটকের পরিচালক আওয়ামী লীগ। এই নাটক দেশের মানুষ দেখে না।
‘আবার সেই সার্চ কমিটির কথা বলা হচ্ছে, দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করার জন্য। বাংলাদেশের মানুষ এই সার্চ কমিটি আর গ্রহণ করবে না। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে। তা না হলে গঠিত নির্বাচন কমিশন দিয়ে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচন মানুষ কখনো গ্রহণ করবে না’, বলেন আমির খসরু।
সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন না হলে তা প্রতিহত করতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নাল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, মহিলা দলের সভাপতি নুরে আরা সাফা প্রমুখ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন