সালমান এফ রহমান এবার ফেঁসেই যাচ্ছেন
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবার ফেঁসেই যাচ্ছেন। বিলম্বে হলেও সোনালী ব্যাংকের কঠোর অবস্থানের কারণে জিএমজি এয়ারলাইন্সের খেলাপি ঋণের ২৬৬ কোটি টাকা দিতেই হচ্ছে। না হলে আইনি ব্যবস্থায় যাবে ব্যাংকটি।
ব্যাংক সূত্রে বৃহস্পতিবার এমন আভাস পাওয়া যায়। সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৫২৩তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সিদ্ধান্তের বিষয়টি ইতিমধ্যে জিএমজিকে জানানো হয়েছে। এর আগে ২৯ মার্চ সব সুদ মওকুফ চেয়ে ঋণটি পুনঃতফসিলের জন্য চিঠি দেয় জিএমজি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা বোর্ডসভায় গৃহীত হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি ঋণ পুনঃতফসিল ও সুদ মওকুফের আবেদন করেছিল। কিন্তু পরিচালনা পর্ষদ তা অনুমোদন করেনি। আইনি ব্যবস্থা নিতে বলেছে।’
সোনালী ব্যাংকের পরিচালক সাবেরা আক্তারী জামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ব্যাংকের নির্ভরযোগ্য সূত্র বলেছে, মামলার প্রস্তুতি চলছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে মামলা হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী যদি কেউ খেলাপি বা খেলাপি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক কিংবা মালিক হন, তবে তিনি কোনো ব্যাংকের পরিচালক বা চেয়ারম্যান হতে পারবেন না। এছাড়া উনি তো পুরনো খেলাপি। তার প্রশ্ন- একটি খেলাপি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কীভাবে একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে থাকেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়টি দেখা উচিত।
এ ব্যাপারে সালমান এফ রহমানের বক্তব্য নেয়ার জন্য বৃহস্পতিবার রাতে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি। পরবর্তীকালে তাকে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ী বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বর্তমানে আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি মামলার অন্যতম আসামি। এছাড়া এই জিএমজি কোম্পানির শেয়ার বাজারে বিক্রি করে তিনি ৩শ’ কোটি টাকা নিয়ে আটকে রেখেছেন। অথচ বিনিয়োগকারীদের টাকা পরিশোধ করছেন না।
সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে জিএমজি এয়ারলাইন্স সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় ঋণের জন্য আবেদন করে। এ জন্য ধানমণ্ডির ২ নম্বর সড়কের ১৭ নম্বর প্লটে (নতুন) ১ বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমি ও তার ওপরের ভবনসহ সব স্থাপনা ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা হয়। এ জমির মালিক বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। ওই বছরেই জিএমজিকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা ওভার ড্রাফট ঋণ সুবিধা প্রদান করে সোনালী ব্যাংক। পরে ধীরে ধীরে সুদসহ ঋণ দাঁড়ায় ২৬৬ কোটি ১০ লাখ টাকা।
২০১২ সালে জিএমজির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে ওই ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। এ সময় ঋণটি পুনঃতফসিল করে সোনালী ব্যাংক। এরপর আবারও খেলাপি হয়ে পড়লে ব্যাংকটি ঋণ পরিশোধের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালায়। এজন্য কয়েক দফায় চিঠি, উকিল নোটিশ, আলোচনা সবই করা হয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। অবশেষে অর্থ আদায়ে অর্থঋণ আদালত আইন-২০১৩ এর আশ্রয় নেয় ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে আইনের ১২(৩) ধারা অনুযায়ী বন্ধকি জমি নিলামে তুলতে গত বছরের ১২ জুলাই নিলাম দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেয় সোনালী ব্যাংক। বর্তমানে ওই জমিতে বেক্সিমকো গ্রুপের কার্যালয় এবং তাদের ফ্যাশন ব্র্যান্ড ইয়ালোর শোরুম রয়েছে।
তবে শেষ মুহূর্তে জিএমজি রিট দায়ের করলে নিলাম স্থগিত হয়। পরে আইনি প্রক্রিয়ার ওই রিটটি তাদের পক্ষে নিষ্পত্তি (ভ্যাকেট) করে সোনালী ব্যাংক। এরপরই ঋণটি পুনঃতফসিলের চেষ্টা শুরু করেছে জিএমজি।
অর্থঋণ আদালত আইন-২০১৩-এর ১২(৩) ধারা অনুযায়ী কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিবাদীর কাছ থেকে কোনো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে, আস্থাবর সম্পত্তি দায়বদ্ধ রেখে ঋণ প্রদান করলে এবং বন্ধক প্রদান বা দায়বদ্ধ রাখার সময় সম্পত্তি বিক্রির ক্ষমতা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করলে তা বিক্রি না করে, বিক্রির চেষ্টা করে ব্যর্থ না হয়ে, সমন্বয় না করে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে না।
ব্যাংকের নথিতে জিএমজির চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, পিতা-ফজলুর রহমান, মাতা-সৈয়দা ফাতিনা রহমান। ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাব সাত্তার, পিতা-আজিজ এইচ এ সাত্তার, মাতা-ভাজিহা আজিজ সাত্তার। পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী, পিতা-সাবের আহমেদ চৌধুরী, মাতা-হোসনে আরা বেগম।
জিএমজি ছিল ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের আগে অন্যতম আলোচিত একটি কোম্পানি। দীর্ঘদিনের লোকসানি এ কোম্পানিকে কারসাজির মাধ্যমে লাভজনক দেখিয়ে প্রথমে প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি করা হয়। এরপর প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে শেয়ারবাজার ধসের পর সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও জিএমজির কারসাজির বিষয়টি উঠে আসে। কমিটির প্রতিবেদনে সালমান এফ রহমানের বিষয়ে সতর্ক থাকতেও বলা হয়েছিল। ১৯৯৬-এর শেয়ারবাজার কেলেংকারিতেও তার নাম রয়েছে।
জানা যায়, সালমান এফ রহমান জিএমজির চেয়ারম্যান। খেলাপি এ প্রতিষ্ঠানের বেক্সিমকো গ্রুপের শেয়ারের পরিমাণ ৪৮ শতাংশ। জিএমজি এয়ারলাইন্স ২৯ মার্চ সোনালী ব্যাংকের কাছে ঋণটি পুনঃতফসিলের আবেদন করে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ চিঠি দেয় জিএমজি। ওই আবেদনে জিএমজি সব সুদ মওকুফ চায়। ৮ বছরে ৩২ কিস্তিতে আসল ঋণ পরিশোধের সুযোগ চায় জিএমজি। এ সময় তারা অগ্রিম (ডাউনপেমেন্ট) সাড়ে ১৬ কোটি টাকা জমাও দেয়।
এ প্রস্তাব ৫ জুন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় উত্থাপন করা হলে তা সর্বোসম্মতভাবে নাকচ হয়ে যায়। ঋণ আদায়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত দেয় পরিচালনা পর্ষদ।
এদিকে শুধু মুদ্রাবাজারে নয়, পুঁজিবাজারেও সংকট সৃষ্টি করেছে জিএমজি। আর্থিক প্রতিবেদন জালিয়াতি করে শেয়ারবাজার থেকে নেয়া ৩শ’ কোটি টাকা ৭ বছরেও ফেরত দেয়নি কোম্পানিটি। ২০০৯ সালে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে এই টাকা নেয়া হয়। পরে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে কোম্পানিকে বাজারে তালিকাভুক্ত করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কিন্তু টাকা আর ফেরত পায়নি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
জানা গেছে, আইপিওর (প্রাথমিক শেয়ার) আগে মূলধন বাড়াতে নির্দিষ্ট কিছু বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রি করতে পারে কোম্পানি। শেয়ারবাজারের পরিভাষায় একে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট বলা হয়। কিন্তু কোম্পানিটি শেষ পর্যন্ত বাজারে তালিকাভুক্তির সুযোগ না পেলে প্লেসমেন্টের টাকা ফেরত দিতে হয়। একই সঙ্গে যতদিন টাকা আটকে রাখা হল, বিনিয়োগকারীদের তার লভ্যাংশ দিতে হয়।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে জিএমজি। এতে ১০ টাকার প্রতিটি শেয়ার ৪০ টাকা প্রিমিয়ামসহ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা নেয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় বাজার থেকে ৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জিএমজি এয়ারলাইন্স। পরের বছর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করে। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা ৭ বছর প্রতিষ্ঠানটি লোকসানি ছিল। এ সময়ে মোট লোকসানের পরিমাণ ৪২ কোটি টাকা। ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে ১ কোটি টাকা মুনাফা দেখায়। কিন্তু ২০১০ সালে অলৌকিকভাবে বেড়ে যায় প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা। ওই বছরের প্রথম ৯ মাসে প্রতিষ্ঠানটি ৭৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মুনাফা দেখায়।
শেয়ারবাজারে কারসাজি নিয়ে গঠিত খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ২০০৮ সালের স্থিতিপত্রে হঠাৎ করে ৩৩ কোটি টাকার পুনর্মূল্যায়ন উদ্বৃত্ত দেখানো হয়। এর ব্যাখ্যায় জিএমজি বলেছে, তাদের দুটি বিমানের সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে। তবে বিমান দুটি বেশ পুরনো। স্বাভাবিক নিয়মে পুরনো বিমানের সম্পদের দাম আরও কমার কথা। কিন্তু আলাদিনের জাদুর চেরাগের মতো দাম বাড়িয়ে দেখিয়েছে জিএমজি। এভাবে ১৬৬ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ প্রতিষ্ঠানটি প্রিমিয়ামসহ আরও ৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহের আবেদন করে।
উৎসঃ jugantor
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন