সিঙ্গাপুরের চিঠি: বাংলাদেশি ‘টয় বয়’
ফেসবুকের হোমপেজে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটি খবর চোখে আটকে গেল। যার শিরোনামের বাংলা ভাবার্থ দাঁড়ায়- সিঙ্গাপুরের নারী ও বাংলাদেশি ‘টয় বয়’।
এর আগে ‘সেক্স টয়’ বা যৌন খেলনার নাম শুনেছিলাম। এখন শুনছি ‘টয় বয়’। তাও আবার আমার দেশের ছেলেদেরই কিনা ভাবা হচ্ছে সেই ‘টয় বয়’।
ফেসবুকে খবরটি শেয়ার করেছিলেন সিঙ্গাপুরে প্রবাসী এক বাংলাদেশি। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে পুরো খবরটা পড়া শুরু করলাম।
টাকার বিনিময়ে কোন পুরুষ যদি যৌনসঙ্গী বা কর্মী হিসেবে কাজ করেন তাদেরকেই পোশাকি ভাষায় ‘টয় বয়’ বলা হয়।
ফেসবুকের ওই লেখাটার পুরোটার সারমর্ম হচ্ছে বাংলাদেশের নির্মাণ শ্রমিকদের কেউ কেউ সিঙ্গাপুরে এসে যৌনকর্মী হিসেবেও কাজ করছে।
বাংলাদেশে যৌনকর্মী বলতে শুধু নারীদেরকেই বুঝানো হয়। কিন্তু সিঙ্গাপুরে এসে জানতে পারলাম টাকা পেলে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে পুরুষরাও পিছুপা হয় না।
সিঙ্গাপুর প্রেস হোল্ডিংসের পোর্টাল ‘এশিয়া ওয়ান’ তাদের দেওয়া ওই খবরে বলেছে, স্থানীয় নি:সঙ্গ নারীরা বিদেশি শ্রমিকদের যৌনসঙ্গী হিসেবে কাছে পেতে টাকা বা উপহার সামগ্রী থেকে শুরু করে যে কোনো কিছুই দিয়ে থাকে।
ওই খবরে আরও বলা হয়, কিছু কিছু বয়স্ক নারী সুদর্শন বাংলাদেশি পুরুষ দেখলেই তার কাছে যায়। নারী-পুরুষ দুজনই রাজি হয়ে গেলে, ওই নারী তার পুরুষ সঙ্গীটিকে টাকা দিয়ে থাকে। এছাড়া, তারা যখন বাইরে কোথাও যায় তখন ওই নারী সবকিছুর দাম মিটিয়ে থাকে।
খবরটি প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের মার্চ মাসে। কিন্তু ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত যে বাংলাদেশে খবরটা হয়তো আদৌ পৌঁছায়নি।
চার বছর পরও সিঙ্গাপুর প্রবাসী কিছু বাংলাদেশি শ্রমিক ‘টয় বয়’ হিসেবে সিঙ্গপুরের নারীদের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত কিনা তা জানার কৌতূহল হলো।
তাছাড়া ‘এশিয়া ওয়ান’- এর ওই খবরের সত্যতা নিয়েও সন্দেহ দূর হচ্ছিলো না।
কথা বললাম সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘বাংলার কণ্ঠ’ পত্রিকার সম্পাদক একেএম মোহসীনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “সিঙ্গাপুর প্রেস হোল্ডিংস হলো সিঙ্গাপুরের প্রথম বৃহত্তম মিডিয়া। আর এশিয়া ওয়ান নিউজ পোর্টাল হলো সিঙ্গাপুরের অন্যতম বড় একটি নিউজ পোর্টাল। কাজেই এমন একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অবহেলা করার উপায় নেই।”
তিনি বলেন, “এসব কাহিনির অনেকটাই সত্য। আমি নিজেও একসময় এসব শুনেছি। তবে এখন আর এই ঘটনাগুলো খুব একটা শোনা যায় না।”
এ ব্যাপারে সিঙ্গাপুরে বসবাসরত একজন কবির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “এগুলো এক ধরণের সৌখিন মানুষের শখ জাতীয় ব্যাপার। তারা আমাদের দেশের ছেলেপেলেদের নিয়ে ঘোরাফেরা করে সময় কাটায়।”
বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছিলো সিঙ্গাপুরে বসবাসরত একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনিও জানালেন, একটা সময় এদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজ করতে এসে এদেশে দীর্ঘদিন থেকে যাবার আশায় এদেশের বয়স্ক নারীদের সঙ্গে মেলামেশা করতো। কেউ কেউ বিয়েও করতো। তবে এখন এদেশের আইন বেশ কড়াকড়ি হয়েছে। এখন আর এসব করে খুব একটা সুবিধা পাওয়া যায় না।
আরও কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তারাও একই কথা জানান।
তবে এসব বিষয় মানুষ ভুলে যায়নি। এখনো এদেশে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এসব বিষয় উঠে আসে মানুষের আলাপচারিতায়, গল্প-কবিতায় অথবা ফেসবুকের হোমপেজে। এমনকি বিষয়গুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে কিনা তা নিয়েও নিশ্চিত নয় এখানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা।
ফিলিপিনো ও ইন্দোনেশিয়ান পরিচারিকাদের সঙ্গে বাংলাদেশি শ্রমিকদের শারীরিক সম্পর্কের কথা এখানে বসবাসরত প্রায় সবাই জানেন।
বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশি শ্রমিকরা নিজেদের বিনোদনের নামে এসব দেশের পরিচারিকাদের সঙ্গে মেলামেশা করছে এবং তাদের পেছনে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করছে।
এসব বাংলাদেশিদের কেউ কেউ বিবাহিত, কেউ আবার অবিবাহিত। বিবাহিতদের অনেকেই হয়তো দীর্ঘদিন দেশে যেতে না পারায় ছুটছেন এসব ফিলিপিনো বা ইন্দোনেশিয়ান পরিচারিকাদের কাছে।
জানা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বিশেষ করে রোববারে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা পাওয়া যায় এসব পরিচারিকার। সিঙ্গাপুর অরচার্ডের লাকি প্লাজায় গেলে দেখা পাওয়া যায় ফিলিপিনো পরিচারিকাদের।
আর সিঙ্গাপুরের পায়া লেবার এমআরটি থেকে ৫-১০ মিনিট হাঁটলেই সিটি প্লাজা। সপ্তাহের রোববারে সিটি প্লাজায় গেলেও ইন্দোনেশিয়ান পরিচারিকাদের দেখা পাওয়া যায়।
যেসব বাংলাদেশি শ্রমিক এদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান, তারা এসব পরিচরিকাদের ব্যাপারে বেশ উদার। জানা যায়, প্রেম করতে ইচ্ছুক পরিচারিকারা নানাভাবে তাদের প্রেমিকদের পকেট খালি করার চেষ্টায় থাকেন।
কারও কারও আবদার থাকে মোবাইলে টপ-আপ করে দিতে হবে। কেউ আবার জামা-কাপড় কিনে দিতে বলেন। আর প্রেম করার সময় নাস্তা-পানির চাহিদা তো থাকেই। অবসর সময় কাটানোর জন্য এসব প্রেমিক-প্রেমিকারা প্রায়ই ছুটে যান সিঙ্গাপুরের রেড লাইট এরিয়া খ্যাত গেল্যাং এলাকার বিভিন্ন হোটেলে।
এটাও সত্য যে, বেশিরভাগ বাংলাদেশি শ্রমিকই তাদের কাছেও ঘেষেন না। অনেকেই আবার বাংলাদেশে নিজের পরিবাবারের স্মৃতি বুকে আগলে রেখেই দিনের পর দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন প্রবাসে।
এসব সম্পর্কের মধ্যে যে সত্যিকারে প্রেম নেই, তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে এসব দেশের পরিচারিকাদের কারো কারো বিয়েও হচ্ছে অহরহ। এমন কী প্রেমের কারণে অনেকে জীবনও দিয়েছেন।
২০১২ সালেই মার্চ মাসেই গেল্যাং হোটেল রুমে বাইশ বছর বয়সী বাংলাদেশি মো. সুমন এবং ৩৩ বছর বয়সী ফিলিপাইনের নাগরিক রেজিলিন লোডিয়া ভিনেগাস এর মৃতদেহ পাওয়া যায়।
সিঙ্গাপুরের পত্রিকায় খবর আসে, “প্রেমিকাকে খুনের পর শ্রমিকের আত্মহত্যা”।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
যে কারনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সম্মেলন স্থগিত
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশক্রমে মাত্র এক সপ্তাহের নোটিশে যুক্তরাজ্য বিএনপিরবিস্তারিত পড়ুন
ইউরোপ থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে বাড়ছে চাপ !
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যভুক্ত বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে থাকা বাংলাদেশিদের ফিরিয়েবিস্তারিত পড়ুন
বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার শ্রমিক নেবে সৌদি আরব
চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পেশার প্রায় ৩ হাজারবিস্তারিত পড়ুন