সিনেট কমিটি গুরুত্ব দিচ্ছে জয়ের অভিযোগকে
অভিযোগ রয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে তদন্ত থামাতে চেয়েছিল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের আর্থিক হিসাব নিয়ে হিলারি ক্লিনটনের সময়ে তদন্তের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
কখন ও কিভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছিল সে বিষয়ে বেশ গুরুত্ব দিয়েছে সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটি। জরুরি ভিত্তিতে পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদনও চাওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে লেখা সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর চাক গ্রাসলির চিঠির সূত্র ধরে পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে ওই দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের কর্মকাণ্ড যেৌক্তিক সন্দেহ জাগ্রত করেছে। তিনি পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন এবং দপ্তরের ন্যায়পরায়ণতার ব্যাপারে মানুষের আস্থা খর্ব করেছেন বলে গ্রাসলি তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেন।
সজীব ওয়াজেদ জয়কে উদ্ধৃত করে যুক্তরাষ্ট্রের ডেইলি কলার পত্রিকা বলেছে, ভার্জিনিয়ায় বসবাস করায় জয়ের সঙ্গে পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রায়ই দেখা-সাক্ষাৎ হতো। সাধারণত তাঁদের মধ্যে বাণিজ্য বা নিরাপত্তার মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো। তবে ২০১০ সালের পর দ্রুত প্রসঙ্গ বদলে যেতে থাকে। জয় বলেন, তখন তাঁরা কেবল একটা প্রসঙ্গই টেনে আনতেন, আর তা হলো ড. ইউনূস। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বাঁচাতে হবে, এটা তঁাদের অবসেশনে পরিণত হয়েছিল।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা একাধিকবার তাঁকে চাপ দেন, যাতে তিনি ইউনূসের বিষয়ে তদন্ত বন্ধ করার জন্য তাঁর মাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) রাজি করান।
২০১১ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে বিশ্বব্যাংক। ওই বছরেই বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ থেকে ড. ইউনূসকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েও হেরে যান তিনি। তাঁর ‘নানা তত্পরতার’ মধ্যে ২০১২ সালের জুনে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে অর্থায়ন বাতিল করে বিশ্বব্যাংক।
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ড. ইউনূসের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় থাকার বৈধতা এবং আর্থিক অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে ২০১২ সালের মে মাসে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ সরকার।
ওই তদন্ত ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে চাপ দেওয়া হয় বলে ডেইলি কলারের প্রতিবেদনে বলা হয়। ২০১৫ সালে হিলারির ফাঁস হওয়া ই-মেইলে ড. ইউনূসের জন্য তদবিরের বিষয়টি প্রকাশ পায়। ইউনূসকে সরানোর কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাপ আসার কথা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ড. ইউনূসের সঙ্গে ক্লিনটন পরিবারের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি বহুবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রিপাবলিকান পার্টিঘেঁষা ডেইলি কলারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় পদের প্রভাব খাটিয়ে ড. ইউনূসকে এক কোটি ৩০ লাখ ডলারের তহবিল জুগিয়েছিলেন। ড. ইউনূস এক লাখ থেকে তিন লাখ ডলার ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে দান করেছিলেন বলেও ডেইলি কলারের দাবি।
জয়কে উদ্ধৃত করে ডেইলি কলারের এবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি বৈধভাবে ১৭ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছেন, কখনো কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু ওই সময় (হিলারির সময়) পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা তাঁর বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ এনে তদন্ত শুরুর হুমকি দেন। জয়ের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘তাঁরা আমাকে বারবার বলেছেন, দেখ, ইউনূসের প্রভাবশালী বন্ধুবান্ধব আছে। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লিনটনের বিষয়টা তো সবাই জানেন। ’
ডেইলি কলার লিখেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি দুই দফা হিলারির সঙ্গে বৈঠক করেন। ডেইলি কলার নিউজ ফাউন্ডেশনকে তিনি তখন বলেছিলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে ড. ইউনূসের যোগ আছে বলেই অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়।
দীপু মনি বলেন, ‘অবশ্যই অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশ সরকারকে, বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে হেনস্তা করতে চেয়েছিলেন। তিনি জানতেন, আমাদের দেশের জন্য, সরকারের জন্য পদ্মা সেতু কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই তিনি সেটা কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। ’
ডেইলি কলার বলছে, এ বিষয়ে তারা গ্রামীণ আমেরিকা ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের বক্তব্য জানার চেষ্টা করলেও সাড়া পায়নি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
যে কারনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সম্মেলন স্থগিত
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশক্রমে মাত্র এক সপ্তাহের নোটিশে যুক্তরাজ্য বিএনপিরবিস্তারিত পড়ুন
ইউরোপ থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে বাড়ছে চাপ !
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যভুক্ত বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে থাকা বাংলাদেশিদের ফিরিয়েবিস্তারিত পড়ুন
বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার শ্রমিক নেবে সৌদি আরব
চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পেশার প্রায় ৩ হাজারবিস্তারিত পড়ুন