সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে মানুষ
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীসহ করতোয়া, ফুলজোড়, হুড়াসাগর ও চলনবিলের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চল ও নিচু এলাকার মানুষ। ফলে নিজেদের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে মহাসংকটে পড়েছেন স্থানীয়রা। বন্যায় গবাদিপশুর চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়েছে জেলার প্রায় ৫০ হাজার গবাদিপশু। বন্যা দুর্গতরা এখন নিজেদের চেয়ে গবাদিপশুর খাদ্য জোগাড় করতে গিয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন।
পানিবন্দি এসব গবাদিপশুর জন্য সরকারিভাবে কোনো খাদ্য সরবরাহ না করায় এ সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্গতরা।
রবিবার সরেজমিন সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন, কাজিপুরের খাসরাজবাড়ি, শাহজাদপুরের পাঁচিল এলাকায় দেখা যায়, পানি বৃদ্ধির কারণে বানভাসি মানুষেরা উঁচু স্থানে খোলা আকাশের নিচে থাকলেও গবাদি পশুগুলোকে পলিথিনের ছাউনিতে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ গবাদিপশু নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন পার করছেন। চরের যে সকল জমিতে গরু-ছাগলের খাবার জুটত, সেগুলো ডুবে যাওয়ায় মহাসংকট তৈরি হয়েছে। অভাবের সংসারে কষ্টে পালন করা এসব পশু হারানোর ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫১ মিটার। গত ১২ ঘণ্টায় হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি না বাড়লেও বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অপরদিকে, কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৩৬ মিটার। গত ১২ ঘণ্টায় ৩ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শাহজাদপুর উপজেলার রেশমবাড়ি গ্রামের গো-খামারি জলিল শেখ জানান, বন্যার কারণে তারা গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ঘাসের জমিগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় তারা কোনো মতে খড় খাইয়ে পশুগুলি বাঁচিয়ে রেখেছেন। এছাড়া বন্যার সুযোগে খৈল ভুষিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে বিপাকে পড়েছে কৃষকেরা।
একই গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, চাহিদা অনুযায়ী গাভি গুলিকে খাবার দিতে না পারায় দিন দিন দুধের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ফলে তারা লোকসানের মুখে পড়ছেন। এ ব্যাপারে তারা মানুষের পাশাপাশি গরুর খাবার বিতরণের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। শুধু মাত্র ভুষির উপর নির্ভর করে এখন খামার টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কাজীপুরের শহীদ এম মনসুর আলী ইকোপার্কে আশ্রয় নেওয়া গবাদি পশুর মালিকেরা জানান, এক সপ্তাহ পার হলেও তারা কোনো গো-খাদ্য সহায়তা পাননি। উচ্চ মূল্যে খড় কিনে এক থেকে দুবেলা খাবার দিচ্ছেন। চারদিক পানিতে নিমজ্জিত থাকায় প্রাকৃতিক কোনো খাবার জোগাড় করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। নিজেরা দুবেলা খেতে না পারলেও গরুও খাবার জোগাড় করতে প্রতিদিন দূরের কোনো এলাকা থেকে কিছু ঘাস বা খড় জোগাড় করে নিয়ে আসতে হচ্ছে তাদের। অনেক সময় গরুগুলোকে বন্যার পানিতে সাঁতরিয়ে অন্য কোথাও উঁচু জমিতে নিয়ে যেতে হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বলেন, জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার গবাদিপশু ইতোমধ্যে পানিবন্দি। এ পরিস্থিতিতে গবাদিপশুর বিভিন্ন রোগব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য আমরা পাঁচটি মেডিকেল টিম গঠন করেছি। তারা নিয়মিত বানভাসি কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। আর গবাদি পশুর খাদ্য সরবরাহের জন্য আমাদের বিভাগে কোনো বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।
বন্যা পূর্ভাবাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে সিরাজগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরেই যমুনার পানি দ্রুতগতিতে বেড়েছে। গত ১২ ঘণ্টায় শহররক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি স্থিতিশীল থাকলেও কাজিপুর পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার কমেছে। আশা করছি দ্রুতই পানি কমে যাবে। এ মৌসুমে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর বলেন, ইতোমধ্যে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে জেলার ৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর ফসলি জমি। এসব জমির পাট, তিল, কলা ও মরিচ প্লাবিত হয়েছে। তবে এখনও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, জেলার ৫টি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের ৫ হাজার ৩৬২টি পরিবারের ২৩ হাজার ৮৩৬ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২৩ হাজার ৮৩৬ জন। তাদের মাঝে ইতিমধ্যে ৬০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে আরও ৪৪০ টন চাল, নগদ ১০ লাখ টাকা ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ রয়েছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
উপদেষ্টা মাহফুজ: সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন,“গণ-অভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থেবিস্তারিত পড়ুন
বড় ব্যবধানে অ্যান্টিগা টেস্টে হারলো বাংলাদেশ
চতুর্থ দিনেই অ্যান্টিগা টেস্টের ফল কোন দিকে গড়াচ্ছে, তা নির্ধারণবিস্তারিত পড়ুন
কিশোরগঞ্জে মা-বাবা ও ২ সন্তানের মরদেহ উদ্ধার
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় একই পরিবারের চার জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেবিস্তারিত পড়ুন