সিরাজগঞ্জে ১৫ পুলিশ হত্যায় মামলা, আ.লীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ আসামি ৬ হাজার
সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র ও গুলি লুট এবং পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহত ১৫ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ১৩ জন ৪ আগস্টে মারা যান এবং বাকি দুজন পরের দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
সোমবার রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে। এনায়েতপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক বাদী হয়ে গত রবিবার রাতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুল্লুক চাঁন, বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূইয়ার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।’
মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু বিভিন্ন সময়ে অবৈধ দাবি নিয়ে থানায় আসতেন। দাবি মেনে না নেওয়ায় এনায়েতপুর থানার পুলিশের ওপর তার ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারকৃত এক আসামিকে তার দাবি মতো ছেড়ে না দেওয়ায় এবং ওই আসামির বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ায় তার নেতৃত্বে ৪৫০-৫০০ জন অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারী থানা ঘেরাও করে এবং ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাকের অপসারণের দাবি করে। তা মেনে না নেওয়ায় তিনি এনায়েতপুর থানা-পুলিশের ক্ষতি করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, এ অবস্থায় গত ৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা এনায়েতপুর থানার সামনে সমবেত হন। এ সময় থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক হ্যান্ড মাইক দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাড়া-জনতার উদ্দেশে বলেন, এই থানা আপনাদের সাধারণ জনগণের। আপনারা থানার কোনো ক্ষয়ক্ষতি করবেন না। ওসির কথায় ছাত্র-জনতা চলে যায়। পরে ১ নম্বর আসামি এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে এজাহারনামীয় আসামিসহ ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার জন দুষ্কৃতকারী দলবদ্ধ হয়ে হাঁসুয়া, দা, লোহার রড, লাঠি, পেট্রলবোমা ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে থানায় হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষায় টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে তারা পুলিশের কোয়ার্টার ও ওসির বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন দেখে পুলিশ সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে আসামিরা থানা কম্পাউন্ডে এসআই তহছেনুজ্জামান, এএসআই ওবায়দুর রহমান, কনস্টেবল আরিফুল আজম, রবিউল আলম শাহ, হাফিজুল ইসলাম, শাহিন, রিয়াজুল ইসলামকে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
একপর্যায়ে আসামিরা থানা ভবন ধ্বংস ও জীবিত পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দশ্যে থানা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে ইস্যুকৃত অস্ত্র, গুলি এবং জনসাধারণের জমাকৃত বেসরকারি অস্ত্র-গুলি লুট করে। তারপর লুণ্ঠিত অস্ত্র-গুলি এবং আসামিদের সঙ্গে থাকা বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে থানার ভেতরে ও বাইরে থাকা অফিসার ও ফোর্সকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে।
অভিযোগপত্র অনুসারে, এ সময় থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক, এসআই আনিছুর রহমান, রহিজ উদ্দিন খান, প্রণবেশ কুমার বিশ্বাস, কনস্টেবল আব্দুল সালেক, হানিফ আলী থানার পাশে বাবু মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নিলে আসামিরা সেখানে গিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে তাদের। অন্য পুলিশ সদস্যরা আত্মরক্ষায় পার্শ্ববর্তী বাড়িতে আশ্রয় নেন। এদের মধ্যে হামলায় আহত আরও দুই পুলিশ সদস্য এসআই নাজমুল হোসাইন ও কনস্টেবল হুমায়ুন কবির রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন অর্থাৎ ৫ আগস্ট মারা যান। এদিকে হামলার সময় এক নারী কনস্টেবলকে মারধর, টানা-হ্যাঁচড়া ও শ্লীলতাহানি করা হয়। পরে বিকালে সেনাবাহিনীর একটি দল থানা এলাকায় পৌঁছে নিহত পুলিশ সদস্যদের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
এজাহারে থানার যেসব অস্ত্র লুট ও সম্পদ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তারও তালিকা দেওয়া হয়। সবকিছু মিলিয়ে এনায়েতপুর থানায় ৪ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন