সীমান্তে বাঁধা মানবিকতার নাটকীয়তা
প্রিয়জনদের ছাড়া অনির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করা বেশ কষ্টসাধ্য। বেঁচে থাকা স্বত্ত্বেও যদি প্রিয় মানুষকে কাছে না পাওয়া যায় তার মত কষ্ট আর কি হতে পারে। একই ভূমিতে থেকে যদি বছরের পর বছর তাদের ছবির সঙ্গে কথা বলতে হয় কিংবা ছোটবেলায় শেষবারের মত দেখা এখন দেখতে কেমন হয়েছে তাই ভেবে কাটিয়ে দিতে হয়। তারচেয়ে বেদনাদায়ক আর কিছু নেই মানবসম্পর্কের ইতিহাসে। এমনি হৃদয়স্পর্শী ও বেদনাদায়ক কাহিনীর দেখা মিলবে কোরিয়াতে।
১৯৫০-এর দশকের প্রথম দিকে শুরু হয় কোরিয়ার আঞ্চলিক গৃহ যুদ্ধ। ওই যুদ্ধের ফলেই আনুষ্ঠানিকভাবে কোরিয়া দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি দক্ষিণ কোরিয়া আর একটি উত্তর কোরিয়া। কোরিয়দের এই যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ তাদের স্বজনদের হারিয়েছে। যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে অনেকে তাদের স্বজনদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তারা ভেবেছিল যুদ্ধ শেষে তারা আবার মিলিত হতে পারবেন। তবে যুদ্ধ শেষ হলো ঠিকই, কিন্তু ওপারে যাওয়া স্বজনরা আর ফিরে আসতে পারল না। এরপর অতিক্রম হয়ে গেছে যুগের পর যুগ। এবছরও রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় পুর্নমিলনের আয়োজন করা হয় দক্ষিণ কোরিয়াতে। এই পুর্নমিলনে ৬৫ হাজার মানুষ নাম লেখালেও সেখান থেকে ১০০ জনকে বেছে নেয়া হয়। যাদের মধ্যে ১০ জন মারা গেছেন, আবার কেউ কেউ এতই অসুস্থ যে তাদের ভ্রমনের সামর্থ্যই নেই। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে তাদের বাসে করে উত্তর কোরিয়ার একটি রিসোর্টে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানেই তারা তাদের সন্তান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন।
এমনই একটি পরিবার লী টাক গু, যিনি তার ছোট আদরের বোনকে যুদ্ধের সময় পালানোর জন্য নৌকায় উঠিয়ে দেয়। দেশভাগ হওয়ার পরে লী থেকে যায় উত্তর কোরিয়ায় আর বোন দক্ষিণ কোরিয়ায়। লী তখন যুবক ছিলেন আর তার বোন ছিল খুব ছোট। এখন লী ৮৯ বছরের একজন বৃদ্ধ আর তার বোন ২০ বছরের তরুণী। ভাইকে দেখতে এত বছর পর ছুটে এসেছে উত্তর কোরিয়াতে। এতদিন পর বোনকে দেখে কান্না থামিয়ে রাখতে পারলেন না লী। এ যেন খুশির কান্না।
চোই হাইয়ং জিং বয়স ৯৫ বছর। শেষ বয়সে কোথায় তার পরিবার পরিজন নিয়ে একসঙ্গে থাকার কথা, অথচ বর্তমানে তাকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে স্ত্রী সন্তানের স্মৃতি নিয়ে। ১৯৫১ সালে একই কারণে তিনিও তার পরিবারকে হারান। শেষবার দেখার সময় মেয়েকে দুই বছরের রেখে আসলেও, বর্তমানে মেয়ের বয়স হয়েছে ৬৪। চোইয়েরর ভাষ্যমতে ‘আমি ভেবেছিলাম এতদিন পর আমরা একে অপরকে দেখে চিনতে সক্ষম হব না। ছোটবেলায় সে কেমন ছিল আমার সেটা পর্যন্ত মনে নেই’। জিং লি এর মত ৮৭ বছরের কিম ভু জং ও ১৯৫১ সালে তার বোনকে হারিয়েছিলেন। বর্তমানে সে খুবই দরিদ্র একজন প্যারালাইসড রোগী।
এদের মত আরো অনেকে আছে যারা তাদের স্বজনদের হারিয়েছেন। একবারের জন্য হলেও প্রিয় মুখগুলোকে দেখার জন্য তারা বছরের পর বছর পথ চেয়ে বসে থাকেন। তবে এই পুর্নমিলনে রয়েছে আবার কিছু প্রতিবন্ধকতা। আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিন দিনের সময় বেধে দেয়া হয়। সাক্ষাৎকালীন সময়ে তারা রাজনৈতিক কোন বিষয় নিয়ে স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারবে না। তবে তারা রেড ক্রিসেন্ট থেকে উপহার হিসেবে টাকা, ঘড়ি, শীত বস্ত্র, টুথপেষ্ট, চিনি, ভিটামিন নিতে পারবে।
এদিকে দুই দেশের পুর্নমিলনকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক নাটকীয়তা হয় তা চাইলেও চোখ এড়ানো সম্ভব নয়। ২০০২ সালে দুই দেশের নেতাদের মাঝে পুর্নমিলন নিয়ে অনেকবার আলোচনা হলেও কোনবারই তারা একমত হতে পারেনি। কারণ পিয়ংইয়ং ও সিউল কোনভাবেই একে অপরের উপর নির্ভর নয়। এতকিছুর পরেও এযাবৎ দেশদুটিতে দুইবার পুর্নমিলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেষবার পুর্নমিলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। স্বজনরা দেখতে পেয়েছিল প্রিয়জনের মুখ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন