সেই অঙ্গীকারে এখনো আপোশহীন শেখ হাসিনা
৩৫ বছর আগের দিনটি ছিল রোববার। কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়ার দিন সেটি। ঘণ্টায় ৬৫ মাইল বেগে ঝড়-বৃষ্টি। সেই বৈরী আবহাওয়াও রোধ করতে পারেনি গণতন্ত্রকামী লাখো মানুষকে। সারাদেশের বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী প্রেমী মানুষ ছুটে এসেছিলেন রাজধানী ঢাকায়। সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী লাখো কণ্ঠের স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছিল গোটা রাজধানী।
লাখো জনতা একজনকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত প্রতীক্ষায় ছিল। তিনি আর কেউ নন, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৩৫ বছর আগে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন শেষে স্বদেশ ভূমিতে ফেরেন শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালের ১৭ মে, বঙ্গবন্ধুর কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৩৫ বছরপূর্তি দিবস। এবারের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটিতে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে বিদেশের মাটিতে কাটাবেন তিনি। রোববার বুলগেরিয়ায় অনুষ্ঠেয় গ্লোবাল উইমেন লিডারস ফোরামে যোগ দিতে ইউরোপে গেছেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে তিনি লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। লন্ডনে দুই দিন অবস্থানের পর বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ায় যাবেন। সেখানে বুধ থেকে শুক্রবার অনুষ্ঠেয় উইমেন লিডারস ফোরামে অংশ নেবেন। সফর শেষে শুক্রবার রাতে সোফিয়া থেকে রওনা হয়ে শনিবার সকালে ঢাকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে। নেত্রী বিদেশে থাকলেও তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। পরবাসে থাকাকালে ১৯৮১ সালের ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের নেতারা শেখ হাসিনাকে দলের সভানেত্রী নির্বাচিত করেন। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর নেতারা তার হাতে নেতৃত্ব তুলে দেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে বহুধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে টানা দ্বিতীয় বারের মতো সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করছে। এর আগেও একবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
সেদিন শেরেবাংলা নগরে গণমানুষের সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘…আমি সামান্য মেয়ে। সক্রিয় রাজনীতির দূরে থেকে আমি ঘর-সংসার করছিলাম। কিন্তু সবকিছু হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে জাতিরজনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এ জীবন দান করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাঁদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’
সেদিন অঙ্গীকার পূরণে ৩৫ বছর ধরে জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। সামরিকতন্ত্রের বেড়াজাল থেকে দেশের জনগণকে গণতন্ত্র উপহার দিতে নির্বাসিত জীবন ছেড়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন বলেই ব্রাকেটবন্দি আওয়ামী লীগ এখন বাংলাদেশের একক বৃহত্তম ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক দল। দেশে ফিরে গভীর ষড়যন্ত্র, বার বার প্রাণনাশের চেষ্টা, গ্রেপ্তার-নির্যাতনসহ বহু বাধা অতিক্রম করে জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে ১৫ বছরের মাথায় আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিতে সক্ষম হন শেখ হাসিনা। এরপর এক/এগারো পরবর্তী সামরিক নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও দীর্ঘদিন কারাবাসে থেকেও অপশক্তির কাছে মাথানত করেননি তিনি। ওই সময় ভয়-ভীতি ও ষড়যন্ত্রে অনেক নেতার পথভ্রষ্ট হওয়ার উপক্রম হলেও জেলে থেকে সফল দিক-নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের অটুট বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হন তিনি। অবিচল ও সাহসী নেতৃত্ব আর জনগণের প্রতি অগাধ বিশ্বাসের কারণে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে সক্ষম হন শেখ হাসিনা।
পাঁচটি বছর নিরলস প্রচেষ্টা এবং যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে গেলেও স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করা হয়। সেই ষড়যন্ত্রও সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হন শেখ হাসিনা। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র আর প্রতিকূল পরিবেশেও বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করতে সক্ষম হয়েছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছেন।
৩৫তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সাত দিনের কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। আলোচনা করবেন বরেণ্য নাগরিক ও জাতীয় নেতারা।
এরপর ১৮ মে কৃষক লীগ, ১৯ মে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ২০ মে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ২১ মে যুবলীগ, ২২ মে জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং ২৩ মে ছাত্রলীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
গত শনিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে যৌথ সভা শেষে এ সব কর্মসূচির কথা জানান দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ভরিতে এবার ১,৯৯৪ টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনবিস্তারিত পড়ুন
সংস্কার হলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত কমানো সম্ভব জানালো সিপিডি
মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কার হলে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ১১বিস্তারিত পড়ুন
রাজশাহীতে সমন্বয়ককে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় এক সমন্বয়ককে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগবিস্তারিত পড়ুন