সেদিন পছন্দের বোয়াল আর সরপুঁটি কিনেছিলেন বিপ্লব
সেদিন বাজার থেকে পছন্দের বোয়াল আর সরপুঁটি মাছ কিনে এনেছিলেন বিপ্লব। দুপুরে কারখানা থেকে ফিরেই তাড়াহুড়ো করে খাবার দিতে বলেন। এক টুকরো বোয়াল আর সরপুঁটি মাছ খেয়ে ছোট মেয়েকে কোলে তুলে হঠাৎই বলেন, ‘আমি যদি আর না ফিরে আসি ওদেরকে দেখে রেখো। ওর কথাই সত্য হলো।’
আজ বৃহস্পতিবার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের চর কাঁচরন্দ গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বসে চোখে জল নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বিপ্লবের স্ত্রী বীথি রানী শীল।
গত সোমবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের কাশিমপুরে মালটিফ্যাবস লিমিটেড নামের পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে নিহত হন বিপ্লব কুমার শীল (৪১)। তিনিসহ এই দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৩ জন। ওই দিনই দুপুরে কারখানা থেকে বাড়ি ফিরে কথাগুলো বলেছিলেন বিপ্লব। কাশিমপুরে কারখানার কাছেই বিপ্লবের বাড়ি।
বীথি রানী শীল জানান, প্রায় ১০ বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁদের দুই মেয়ে। প্রথম সন্তান মিথিলা রানী বর্ষা (৭)। সে গাজীপুর সবুজ কলোনি স্কুল অ্যান্ড কলেজে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছোট উষা রানীর বয়স ৮ মাস।
বীথি আরও জানান, সাত বছর ধরে বিপ্লব ওই কারখানায় কর্মরত। বাসা থেকে কারখানার দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। সেদিনের কথা বলতে গিয়ে বীথি বারবার বলেন, ‘আমার এই মাসুম দুই শিশু সন্তান এতিম হয়ে গেল। কোনো অর্থকড়ি রেখে যায়নি। কীভাবে ধর্মীয় কাজগুলো করব?’
পাশে বসে থাকা বিপ্লবের বড় ভাই মন্টু কুমার শীল জানান, প্রায় চার বছর ধরে তিনি অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। আরেক ভাই মানসিক প্রতিবন্ধী। একমাত্র উপার্জনক্ষম বিপ্লব। গত বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সকাল ১০টার দিকে ফোনে গোয়ালন্দ থেকে ওর সঙ্গে শেষ কথা হয়। সেদিন বলেছিল, ‘দাদা, আমি বাড়িতে সুন্দর একটা ঘর তুলব। সেখানে সবাই একসঙ্গে থাকব।’
বিপ্লবের মেয়ে মিথিলা রানী বর্ষা বাবা হারানোর অনুভূতি এখনো পুরোপুরি বোঝে না। জানাল, বাবা ওই দিন দুপুরে সময় নেই বলে তাড়াহুড়ো করে খেয়েই বাসা থেকে বের হয়। যাওয়ার সময় শুধু বলে, রাতে অফিস থেকে বাসায় ফিরেই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটু ঘুরতে বের হবে।
পরিবারের লোকজন জানায়, গত সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে হাসপাতাল থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি প্রথমে বাড়িতে ফোনে জানায়, বিপ্লব খুব অসুস্থ। পরে এক আত্মীয়কে হাসপাতালে পাঠিয়ে তাঁরা জানতে পারেন বিপ্লব মারা গেছেন।
ছোটভাকলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন জানান, বিপ্লবের মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব সাহায্যের চেষ্টা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হাসান হাবিব সাংবাদিকদের জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ বি এম নুরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। উপজেলা পরিষদ পরিবারটিকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন