সেলফি কি আপনার সম্পর্কের মাধুর্য নষ্ট করছে?
ছবি তোলার ক্ষেত্রে সেলফি এখন খুব জনপ্রিয়। আগে যেখানে বন্ধুদের আড্ডা মানেই ছিল গল্প করা, তর্ক-বিতর্ক, হাসি-ঠাট্টা এখন সেখানে জায়গা করে নিয়েছে সেলফি। ভাল একটা সেলফি তোলা না হলে মনটাই খারাপ হয়ে যায়। একসাথে হওয়ার উদ্দেশ্যই যেন সেলফি তোলা। সময়টা সব মিলিয়ে ভালোই কাটে। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন সামগ্রিকভাবে আপনার সম্পর্কগুলোর উপর কোন বিরূপ প্রভাব ফেলছে কিনা সেলফি?
সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে এমন অনেক কিছুই আমরা বেছে নিই যা আমাদের ঘনিষ্ঠতাকে নষ্ট করে। সম্পর্কের গভীরতা তৈরি করে না। হুজুগ একসময় শেষ হয়, কিন্তু তার সাথে যেন ছেড়ে দিতে হয় অনেকদিনের চেনাজানা ভালোবাসা, অবচেতন মনে। আসুন মিলিয়ে দেখি-
ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ঝুঁকি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা আগের তুলনায় অনেক বেশী ছবি দিই। সবার হাতে স্মার্টফোন হওয়ায় ঝটপট ছবি তোলা যায় আবার আপলোড হতেও সময় লাগে না। রেস্টুরেন্ট, শপিং মল সবই এখন ওয়াইফাই এর আওতায়। তাই সহজেই আমাদের ছোট্ট হ্যান্ডসেটটি থেকে ছবি পৌছে যায় ইন্টারনেটে। এইসব ছবি শুধু আপনার না, আপনার বন্ধুরও নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ায়। আপনার মোবাইলটি ছিনতাই হলে বা আপনার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হলে আপনার ছবির সাথে আপনার বন্ধুর ছবিও পৌঁছে যাবে অসৎ লোকের হাতে। হরহামেশাই সাইবার ক্রাইম ঘটছে এবং আপনার একান্ত সময়গুলো এভাবেই চলে যাচ্ছে অন্যের হাতে।
সেলফি যখন আপনার নেশা
সেলফি তোলা একটি শখ হতে পারে। কিন্তু এটা যদি আপনার নেশায় পরিণত হয় তাহলে তা অন্যদের বিরক্তির কারণ হতে পারে। আপনার বন্ধুরা যখন আপনার সাথে কিছু সময় কাটাতে চান তখন যদি আপনি নিজের ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকেন সেটা নিশ্চয়ই তাদের খারাপ লাগবে! বন্ধুরা সমপরিমাণ মনোযোগ এবং আন্তরিকতা দাবি করেন। তা নাহলে তৈরি হয় বিচ্ছিন্নতা। এছাড়াও অতিমাত্রায় সেলফি তোলা বিষন্নতাসহ নানান মানসিক রোগের জন্ম দেয়।
গভীরতা কমিয়ে দেয়
পুরোনো দিনের আড্ডার কথা মনে করে দেখুন। সে সময় একবার একত্রিত হওয়া ছিল ভীষণ আবেগের বিষয়। আড্ডা ভেঙে বাড়ি ফিরতে মন খারাপ হয়ে যেত সবার। আবার কবে দেখা হবে সেই আকুতি থাকত সবার মাঝে। খেয়াল করে দেখুন, এখনকার আড্ডাগুলো কেমন হয়! আমরা সবাই একসাথে হই, এনেকগুলো ছবি তুলি, কার ছবি কেমন এসেছে তাই নিয়ে আলোচনা করি, তারপর চলে যাই। পরে হয়ত খেয়াল করি, এতটা সময় একসাথে কাটালাম, কিন্তু জানা হল না কে কেমন আছে, সেই যে একটা ঝামেলা হয়েছিল প্রিয় বন্ধুটির, তার এখন কী অবস্থা! অগভীর এই আড্ডা আবার দেখা হওয়ার আগ্রহ তৈরি করে ঠিকই, কিন্তু তার আবেগটাও থাকে অগভীর। এডিনবার্গের হ্যারিয়ট-ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সেলফি সম্পর্কের আন্তরিকতার মাত্রা কমিয়ে দেয়, বাড়িয়ে দেয় দূরত্ব।
অঙ্গভঙ্গির প্রতি বেশী মনোযোগ
আপনি যখন একটি সাধারণ ছবি তোলেন আপনি সহজ সাধারণ ভাবে দাঁড়ান বা বসেন। কিন্তু কখনো কি খেয়াল করেছেন, সেলফি তোলার সময় শারীরিক ভঙ্গীর প্রতি বেশী মনোযোগী হই আমরা? ঠোঁট বাঁকানো, শরীরকে নানান ভাবে বাঁকানো, মুখের ভঙ্গী বদলানোসহ অনেক কিছুই আমরা করি। সেলফি তোলার সময় এসবে আমরা এতই মনোযোগী হয়ে যাই যে খেয়াল করি না, আমাদের আশপাশের মানুষ বিব্রত হচ্ছেন কিনা! কিন্তু তারা বিব্রত হোন, বিরক্ত হোন এবং তাদের চোখে আমাদের ব্যক্তিত্ব নেমে যায় অনেক নিচে। অতিরিক্ত আত্মকেন্দ্রিকতা এক সময় আমাদের নার্সিসিস্ট এ পরিণত করে। আমরা পরিণত হই অসামাজিক একজন মানুষে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
হোটেল ঘরে বিছানার চাদর সাদা হয় কেন ?
বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথম যে বিষয়টি নজরে আসে,বিস্তারিত পড়ুন
ধনিয়া পাতার উপকারি গুণ
চিকিৎসকদের মতে, ধনে বা ধনিয়া একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার অনেকবিস্তারিত পড়ুন