সেলিম ওসমানের শাস্তি চাইলেন সারাদেশের শিক্ষকরা
ধর্ম অবমাননার মিথ্যে অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠবস করানোর জন্য সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের শাস্তির দাবি করেছেন সারা দেশের শিক্ষকরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ঘণ্টার মানববন্ধন ও সমাবেশে তারা এই দাবি জানান।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা বলেন, মানুষ গড়ার কারিগর হচ্ছেন শিক্ষকরা। আজ সেই শিক্ষককে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। একজন সম্মানিত শিক্ষককে এভাবে অপমান করা জঘন্য অপরাধ। এই অপমান ও লাঞ্ছনা শুধু শ্যামল কান্তি ভক্তের নয়। সমগ্র শিক্ষক সমাজের। শিক্ষকদের প্রতি এমন আচরণ কখনো মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষক লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সেলিম ওসমানকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় আগামীতে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
গত ১৩ মে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের একটি মসজিদ থেকে হঠাৎ করেই মাইকে ঘোষণা করা হয়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন। এ সময় সেখান থেকে এলাকাবাসীকে স্কুল মাঠে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই দলে দলে স্কুলে ঢোকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাঁরা স্কুলের দরজা ভেঙে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর করে এবং তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
পরে সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে ঘটনাস্থলে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। সংসদ সদস্য উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবস করার শাস্তি দেন।
কান ধরে ওঠবসের পর সমবেত জনতার কাছে করজোড়ে মাফ চাইতেও বাধ্য করা হয় ওই প্রধান শিক্ষককে। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে প্রধান শিক্ষককে পুলিশের হেফাজতে স্কুল থেকে বের করা হয়। এরপর পুলিশ চিকিৎসার জন্য তাঁকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে।
সমাবেশ ও মানববন্ধন সম্পর্কে বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
জাহিদুর রহমান : সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে শিক্ষকরা কালো ব্যাজ পরে মানববন্ধন করেন। এ সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বলেন, ‘শিক্ষককে যদি এভাবে লাঞ্ছিত করা হয়, তাহলে জাতির মেরুদণ্ড অচিরেই ভেঙে পড়বে। এভাবে সভ্য সমাজ তৈরি হতে পারে না। তাই দ্রুত এই হীনকাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার করতে হবে।’ শিক্ষকদের সঙ্গে একত্মতা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরাও মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধন শেষে উপাচার্যের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ে স্মারকলিপি দেন শিক্ষকরা।
মো. লুৎফর রহমান মিঠু, ঠাকুরগাঁও : দুপুর ১২টায় শহরের চৌরাস্তা মোড়ে সমাবেশ করে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শাখা। ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অংশ নেন। সমিতির জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল হকের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য দেন জেলা কমিটির সহসভাপতি সামসুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম লিটন, সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দীপেন্দ্র নাথ ঝাঁ, সহসভাপতি নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন কুমার সরকার প্রমুখ।
ফারুক হোসেন, দিনাজপুর : বেলা ১১টায় হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কে মানববন্ধন করেন। এ সময় বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমান, কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আনিস খান, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বলরাম রায়, শিক্ষক সমিতির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এ টি এম শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
মুহাম্মদ আবুতৈয়ব, খুলনা : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বরে বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আহমেদ আহসানুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ড. আর্নিবান মোস্তফা, ড.কাজী শাহনেয়াজ রিপন, ড. আফরোজা পারভিন প্রমুখ। সকাল ১০টায় খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে খুলনা সম্মিলিত নাগরিক সমাজ এক ঘণ্টা কান ধরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সম্মিলিত নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ড. কুদরাতে খুদার সভাপতিত্বে এই প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেখ সাদি ভূইয়া, মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, নারী নেত্রী রুসু আক্তার, রিজিয়া আক্তার, অরুপ কুমার মজুমদার, মহেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ। সভাপতি ড. কুদরাতে খুদা বলেন, ‘সেলিম ওসমান শুধু একজন শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করাননি, তিনি সমগ্র জাতিকে লজ্জা দিয়েছেন।’
কে এম সবুজ, ঝালকাঠি : সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়কে জেলা শিক্ষক সমিতি ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে অশংগ্রহকারী শিক্ষকরা কান ধরে লাঞ্ছিত প্রধান শিক্ষকের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন এবং এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। মানববন্ধন শেষে সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ঝালকাঠি জেলা শাখার সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার দাস, যুগ্ম সম্পাদক রিপন কুমার হালদার, উপজেলা শাখার সভাপতি লস্কর মোহাম্মদ মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক সুনিল বরণ দালদার ও সুকলা বিশ্বাস।
ভজন দাস, নেত্রকোন : শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে সকাল ১১টায় জনউদ্যোগ ও জেলা শিক্ষক সমিতি, মানবাধিকার নাট্য পরিষদ, উদীচীসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন হয়। এতে শিক্ষক, সাংবাদিক, সুশীলসমাজ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও জেলা শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি লুৎফুর হায়দার ফকির, শিক্ষক নেতা রতন পাল, জনউদ্যোগের ফেলো শ্যামলেন্দু পাল, মানবাধিকার নাট্য পরিষদের জেলা সভাপতি সালাউদ্দিন খান রুবেল প্রমুখ। বক্তারা শ্যামল কান্তি ভক্তের লাঞ্ছনাকারীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান। বিদ্যালয় কমিটি তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদও জানান বক্তারা।
রশিদ আল মুনান, পিরোজপুর : যুব সমাজের সংগঠন ই-পিরোজপুরের আয়োজনে সকাল ১০টায় শহরের টাউনক্লাব সড়কে মানববন্ধনে শিক্ষক, ছাত্র, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে। মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা প্রকাশ করে দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান। এ সময় সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় শিক্ষক নেতা আলমগীর হোসেন, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিককর্মী খালিদ আবু, পৌর কাউন্সিলর আব্দুস সালাম বাতেন।
মারুফ আহমেদ, সিলেট : সকাল থেকে শাহজলাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সিলেট সিটি কলেজের শিক্ষকরা মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধন শেষে সমাবেশে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শিক্ষক লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। শাহজলাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মানববন্ধনে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘এই ঘটনার প্রতিকার না হলে আমরা বর্বর জাতি হিসেবে পরিচিতি পাব। আমরা তা চাই না। আমি আশা করি সরকার এই ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।’
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডুর সঞ্চালনায় এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নূর হোসেন মিঞার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধন থেকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু বলেন, ‘শিক্ষককে যদি এভাবে লাঞ্ছিত করা হয়, তাহলে জাতির আর কী থাকে! এটি কোনো সমাজের জন্য কল্যাণ হতে পারে না। তাই দ্রুত এই হীনকাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার করতে হবে।’
এ ছাড়া নগরীর সিটি কলেজ ও মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে মানববন্ধন করে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ জানান ও সেলিম ওসমানের শাস্তির দাবি করেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ভরিতে এবার ১,৯৯৪ টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনবিস্তারিত পড়ুন
সংস্কার হলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত কমানো সম্ভব জানালো সিপিডি
মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কার হলে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ১১বিস্তারিত পড়ুন
রাজশাহীতে সমন্বয়ককে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় এক সমন্বয়ককে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগবিস্তারিত পড়ুন