সোনা ফলিয়ে যাওয়া এক জাদুকর মাশরাফি!
একটু পেছনে ফিরে তাকানো যাক। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ২৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে হারে ২২টিতেই! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি মাত্র টেস্টে ড্র আর নেপাল-আফগানিস্তানের মতো নিচু সারির দলের বিপক্ষে দুটো ওয়ানডে জয়- এই ছিল সর্বসাকুল্যে। ঘরে-বাইরে দারুণভাবে সমালোচিত হতে থাকা বাংলাদেশ এরপরই যেন প্রাণ ফিরে পায়।
কঠিন এক সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মুশফিকুর রহিমকে। তার স্থলে দায়িত্ব দেওয়া হয় এমন একজনকে, যিনি বারংবার ইনজুরির কালো থাবায় ভুগেছেন। হ্যাঁ, মাশরাফির কথাই বলা হচ্ছে। ¯্রষ্টার অসীম দয়ায় মাশরাফি নতুন করে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর বড় ধরনের কোনো ইনজুরিতে পড়েননি। আর তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরই যেন পরশ পাথরের ছোঁয়ায় পাল্টে যায় গোটা বাংলাদেশ দল।
হারতে হারতে ক্লান্ত-শ্রান্ত দলকে কোন জানুমন্ত্রবলে যেন উজ্জীবিত, আত্মবিশ্বাসী করে তুলেন ‘জাদুকর’ মাশরাফি। এরপর তো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিপক্ষের উপর মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ে টাইগার বাহিনী। তারপর রচিত হয়ে চলেছে সোনা ফলানো ইতিহাস! মাশরাফি যে ইতিহাস রচনা করে চলেছেন নিপুণ হাতের ছোঁয়ায়!
সংখ্যার হিসেবে ২০১৪ থেকে ২০১৫, এই এক বছরে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দেখেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। টাইগার বাহিনী ব্যর্থতার চোরাবালি থেকে সাফল্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে এই সময়েই। এর নেপথ্য মাশরাফি বিন মুর্তজা- ক’দিন আগেই যিনি মানুষের ভালোবাসার ভোটে সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকার পুরস্কার পেয়েছেন।
২০১৪ সালের অক্টোবরে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান মাশরাফি। প্রথম সিরিজটা ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। না, পা হড়কায়নি বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে ধবল-ধোলাই করে সাফল্যযাত্রার পথে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ। এরপর তো নতুন ইতিহাসই রচিত হয়েছে। ২০১৫ সালে একটি ওয়ানডে সিরিজও হারেনি বাংলাদেশ! জিম্বাবুয়ের পর পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এরপর আবার জিম্বাবুয়ে, সবাইকে নত হতে হয়েছে মাশরাফি-মুশফিকদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যের কাছে।
বছরের শুরুতে বিশ্বকাপের কথা তো না বললেই নয়! ইংল্যান্ডকে গুড়িয়ে দিয়ে, বিদায় করে দিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু সেখানে আম্পায়ারদের নির্লজ্জ, নিকৃষ্টতর পক্ষপাতিত্বে ‘হারতে’ হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু ওই হারে কলঙ্কের কালিটা ভারতের গায়েই লেগেছিল। বিপরীতে বিশ্ব ক্রিকেটের ভালোবাসায় স্নাত হয়েছে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা মাশরাফি বাহিনী।
জাতীয় দলের নেতৃত্বে মাশরাফি যেমন পটু, ঘরোয়া ক্রিকেটে সমানভাবে বিধ্বংসী, বিজয়ী এক বীর। যার সর্বশেষ প্রমাণ, কয়েকদিন আগে শেষ হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এর তৃতীয় আসরে হিসেবের বাইরে থাকা এক দলকে চ্যাম্পিয়নের বরমাল্য পরানো! টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যে দলকে কেউ গোণায় ধরেনি তেমনভাবে, সেই দলই চ্যাম্পিয়ন!
এ তো শুধু মাশরাফির পক্ষেই সম্ভব। মাশরাফির আরেক গৌরবের রেকর্ড হচ্ছে, বিপিএলের তিন আসরের বিজয়ী অধিনায়ক তিনি! এ স্রেফ অসাধারণ, অতুলনীয়। কিন্তু কতো বিনয়ী এই মাশরাফি। টানা তিন আসরের চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক হওয়ার পরও কোনো দম্ভোক্তি নেই, অহংকার নেই। ¯্রষ্টার কাছে শুকরিয়া আদায় করে স্রেফ এটুকু বলছেন, ‘আমি সৌভাগ্যবান ছিলাম’। বীররা, বিজয়ীরা এমনই হন!
২০১৫ সালে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স নিয়ে মাশরাফির মূল্যায়ন, ‘অনেক ভালো একটা বছর গেছে। তবে শুধু আমার না, পুরো বাংলাদেশ দলের। যতটুকু কঠোর পরিশ্রম করেছি, সে অনুযায়ী ফল পেয়েছি। সামনের দিনগুলোতে এর থেকে খুব ভালো চাই না। এভাবে চললেই আমি খুশি।’
নিজের অধিনায়কত্ব নিয়ে তাঁর মূল্যায়ন শুনলে যে কারোই বিস্ময়ে চোখ চানাবড়া হয়ে যাওয়ার কথা! মাশরাফিকে বলা হয়েছিল, নিজের অধিনায়কত্বে দশে কতো দেবেন? ‘পাগলা’ মাশরাফি সবাইকে হতবাক করে দিয়ে বললেন, ‘শূন্য’!
২০০১ সালের ৭ নভেম্বর। বাংলাদেশ তখন টেস্ট ক্রিকেটের সদ্যজাত শিশু। ওইদিন নিজেদের মাত্র ৬ষ্ঠ টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, হিথ স্ট্রিকদের শক্তিশালী জিম্বাবুয়ে। ওই টেস্টেই টগবগে উত্তাল তারুণ্যের প্রতিচ্ছবি মাশরাফি বিন মুর্তজার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। সেই থেকে আজ অবধি বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
এক অদম্য ক্রিকেটার, এক অতুলনীয় নেতা, এক অসাধারণ মানুষ। চৌদ্দ বছর আগে মাশরাফি দলের জন্য যতোটা অপরিহার্য ছিলেন, এখন তারচেয়ে অনেকগুণ বেশি অপরিহার্য। এখন বাংলাদেশ মানেই মাশরাফি অবধারিত! জাতীয় ক্রিকেট দল, ক্রিকেট বোর্ড কিংবা আমজনতা, সবার কাছে বিনা বাক্যে, বিনা প্রশ্নে মাশরাফি সমানভাবে তুমুল জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য। গোটা বাংলাদেশ দলকেই পাল্টে দিয়েছেন এই অসাধারণ নেতা। এমন শক্ত মানসিকতার, লড়াকু মানসিকতার, এমন অদম্য মানুষ ক্রিকেট বিশ্বে বিরল। ভালো কাটুক সামনের দিনগুলো তাঁর। মাশরাফির ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের ছোঁয়া আরো অনেক অনেক দিন পাক টাইগার বাহিনী, এমনটাই চায় গোটা বাংলাদেশ।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন