স্কুলছাত্রীকে রাস্তায় লাঞ্ছিত ঘটনায় কুলাঙ্গার রাহুল গ্রেফতার!
হবিগঞ্জে স্কুলছাত্রীকে রাস্তায় লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বখাটে রুহুল আমিন রাহুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে শহরতলির রিচি গ্রাম থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে স্কুলছাত্রীর বাবা মো. শাহজাহান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনার বিচার দাবিতে ফুঁসে উঠেছে সর্বস্তরের মানুষ। শুক্রবার মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়। বখাটের অপর সহযোগীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে আগামীকাল থেকে ফের আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়। হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীম আক্তার চৌধুরী শেলি এ ঘোষণা দেন। তিনি ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবুল লেইছ রাহুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, মেয়েদের স্কুলটি পাশাপাশি হওয়ায় অনেক সময়ই ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটে। রাহুল আমার স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। রোববার স্কুল খোলার পর শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেয়া হবে না। তিনিও তার শাস্তি দাবি করেন। সদর থানার ওসি নাজিম উদ্দিন বলেন, স্থানীয়দের সহায়তায় রাহুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
লাঞ্ছনার শিকার স্কুলছাত্রী জানায়, রাহুল তাকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানালে তারা রাহুলকে শাসিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে ২৬ আগস্ট তাকে রাস্তায় মারধর করে। সে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। যেন অন্য কোনো মেয়ে এ ধরনের ঘটনার শিকার না হয়। রাহুলের মামা ব্যবসায়ী মুরাদ আহমদ জানান, রাহুলরা চার ভাই। সে তৃতীয়। তিন ভাইকে নিয়ে মা-বাবা ঢাকায় থাকেন। বাবা ফজল মিয়ার সেখানে মুদি দোকান রয়েছে। রাহুল তাদের বাসায় থেকে পড়াশোনা করত। তার গ্রামের বাড়ি বানিয়াচং উপজেলার বড়ইউড়ি গ্রামে।
মুরাদ আহমদ আরও জানান, তিনি বৃহস্পতিবার ফেসবুকে বিষয়টি দেখতে পেয়ে বাসায় খবর নিয়ে জানেন সে পালিয়ে গেছে। শুক্রবার সদর উপজেলার লুকড়া গ্রামের কয়েকজন তাকে জানান, রাহুল সেখানে আছে। তিনি তাকে আটকে রাখার জন্য স্থানীয়দের বলেন। পরে নিজে গিয়ে তাকে এনে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। সদর থানায় আটক রাহুল বলে, আমি ফেসবুকে দেইনি। ঘটনার সময় আমার পেছনে অনেক মানুষ ছিল। তারা মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিও করেছে। আমার ভুলের কারণে আমি প্রায়শ্চিত্ত করছি। আমার কোনো ইচ্ছে ছিল না ভিডিও করি।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জেলা শহরের রাজনগর এলাকার এতিমখানা সড়কের বাসিন্দা মোবারক হোসেন ও ব্যবসায়ী মুরাদ আহমদের ভাগ্নে রাহুল কিছুদিন আগে পার্শ্ববর্তী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ওই ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ওই ছাত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে রাহুল স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি স্কুলছাত্রী তার পরিবারকে জানালে তারা রাহুলকে শাসিয়ে দেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬ আগস্ট স্কুল ছুটির পর ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায় চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে রাহুল। ঘটনার সময় কে বা কারা চড়-থাপ্পড়ের ৩১ সেকেন্ডের ভিডিও করে। এ ভিডিওটি বৃহস্পতিবার ফেসবুকে আপলোড করা হয়। এরপরই দেশ-বিদেশে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
শুক্রবার দুপুরে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে সাইফুর রহমান টাউন হলের সামনে ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়। এতে রাজনীতিবিদ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার কয়েকশ’ মানুষ অংশ নেন। তোফাজ্জল সোহেলের পরিচালনায় এতে বক্তৃতা করেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীম আক্তার চৌধুরী শেলি, তাহমিনা বেগম গিনি, অ্যাডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন, আহমেদ কবির আজাদ, শোয়েব চৌধুরী, ডা. এসএস আল আমিন সুমন প্রমুখ। বক্তারা বলেন, সমাজের অনেকেই আপসের জন্য এগিয়ে আসে। অনেকেই বিভিন্ন রকম প্রভাব খাটান। কিন্তু এ ঘটনায় যেন কেউ এখন আপসের জন্য না যায়। তার যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
বানিয়াচং উপজেলায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে, ৩ জনে মৃত্যু
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রেবিস্তারিত পড়ুন
হবিগঞ্জে ট্রাক-প্রাইভেটকার সংঘর্ষে ৫ জন নিহত
হবিগঞ্জের মাধবপুরের হরিতলা বাদশা গেইট এলাকায় ট্রাক ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন
‘ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে’ গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ‘ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে’ এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করাবিস্তারিত পড়ুন