স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে ডাকতেন ক্ষ্যাপা পাগলি, ঝাড়ফুঁক দিতেন, ভক্তও ছিল তাঁর
মিরপুরে সিটি কলোনির বস্তিঘরে একাই থাকতেন নূরজাহান বেগম (৭২)। স্বজন বলতে কেউ ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে ডাকতেন ক্ষ্যাপা পাগলি বলে। ঝাড়ফুঁক দিতেন। কিছু ভক্তও ছিল তাঁর। অনেকে পীরের মতোই শ্রদ্ধা করতেন ওই নারীকে।
গতকাল রোববার রাতে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পাশে সিটি কলোনির বস্তিঘর থেকে নূরজাহান বেগমের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নূরজাহানের লাশ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আছে। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে দারুস সালাম থানায় একটি মামলা করেছে। সিটি কলোনি বস্তির বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই চিনতেন নূরজাহান বেগমকে। কয়েকজন জানালেন, নূরজাহান বেগমের সামান্য মানসিক সমস্যা ছিল। তাই স্থানীয়রা তাঁকে ক্ষ্যাপা পাগলি বলে ডাকতেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বস্তির একটি ঘরে একাই থাকতেন নূরজাহান। কেউ তাঁর কাছ থেকে নিজের গ্রামের বাড়ি বা ব্যক্তিগত কিছুই কোনো দিন জানতে পারেনি। তিনি একসময় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ভিক্ষা করে বেড়াতেন। কিছুদিন আগে থেকে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় আর ভিক্ষা করতে বাইরে যাননি। িআশপাশের কয়েকজন মানুষ তাঁকে মাঝেমধ্যে খাবার দিয়ে আসতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বস্তির এক বাসিন্দা বলেন, ‘নূরজাহানের স্বামী বা কোনো সন্তান বা কেউ আছে কি না অনেকবার জানার চেষ্টা করেও জানা যায়নি। নানা সময় বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলতেন। তাই সব কথা সবাই বিশ্বাস করতাম না। তবে ক্ষ্যাপা পাগলির হয়তো কোনো কিছু জানা ছিল। কারণ তিনি মাঝেমধ্যে মানুষকে ঝাড়ফুঁক করতেন। তাঁর এই ঝাড়ফুঁকে অনেকে নাকি ভালো হতো শুনেছি। তাই তাঁর কাছে কিছু মানুষ আসত নানা প্রকার সমস্যা নিয়ে। তবে তাঁকে কী কারণে হত্যা করা হয়েছে, ওই বিষয়ে কেউই কিছু আন্দাজ করতে পারছে না।’
এলাকার আবুল হাসান নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি ক্ষ্যাপা পাগলিকে অনেক আগে থেকেই ভিক্ষা করতে দেখেন। তিনি ভিক্ষা করে নিজে একা বসবাস করতেন এই বস্তিতে। তাঁর মতো বৃদ্ধাকে কেন হত্যা করেছে এটা কেউই ভাবতে পারছেন না। কারণ তাঁর কোনো শত্রু ছিল না। সবাই তাঁর সঙ্গে অনেক ঠাট্টা-মশকরা করতেন। যেহেতু এই এলাকায় তিনি অনেক দিন ধরে ছিলেন, তাই অনেকে তাঁকে ডেকে চা, রুটি, ভাত খাওয়াতেন। ক্ষ্যাপা পাগলিকে খুনের উদ্দেশ্য কী হতে পারে তা ভাবার বিষয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক ব্যক্তি বলেন, ‘ক্ষ্যাপা পাগলি মানুষের নানা রকম সমস্যার সমাধান করে দিতেন। তিনি ঝাড়ফুঁক ছাড়াও অনেক আধ্যাত্মিক ধরনের কাজকর্ম করতেন। কেউ কেউ তাঁকে পাগল ভেবে এই সব কাজ পাত্তা দিতেন না। তবে যাঁরা তাঁকে বিশ্বাস করতেন, তাঁরা সব সময় তাঁকে পীরের মতোই বেশ ভক্তি-শ্রদ্ধা করতেন। বিভিন্ন উপায়ে তাঁর টাকা উপার্জন হতো। কিন্তু এই সব টাকা কোথায় রাখতেন ক্ষ্যাপা পাগলি, তা কেউ জানতেন না। তাঁর এই খুনের পর মনে হচ্ছে যার কাছে তিনি টাকাগুলো জমা রাখতেন তাঁর অনেক লাভ হয়েছে।’
এই ঘটনার বিষয়ে দারুস সালাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ফারুক আলম জানান, নূরজাহান বেগম হত্যার তদন্ত চলছে। কী কারণে কারা তাঁকে হত্যা করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে জানা যায়, তিনি পেশায় একজন ভিক্ষুক ছিলেন। প্রায় আট বছর ধরে সিটি কলোনি এলাকায় বাস করতেন। এখন পর্যন্ত তাঁর পরিবারের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁর গ্রামের বাড়ি কোথায় তা জানার চেষ্টা চলছে। আর এই ঘটনার পর বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
ক্ষ্যাপা পাগলিকে অনেকে পীর বা কবিরাজ মনে করতেন-এ প্রসঙ্গে ফারুক আলম জানান, এখন পর্যন্ত এমন কোনো মানুষকে পাইনি যে ক্ষ্যাপা পাগলির কাছ থেকে ভালো হয়েছে। তবে কিছু মানুষ এই পাগলিকে মাঝেমধ্যে ভালোবেসে বা দয়া করে খাওয়াতেন। আর যেসব প্রচলিত কথা আছে, তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন