স্বামীকে পাঞ্জাবি উপহার দিতে গিয়ে লাশ হলো অথৈ
ভালবেসে শিক্ষাজীবন শেষ করার আগেই ঘর বেঁধেছিলেন পিয়াস (২৬) ও অথৈ (১৬)। রাজধানীর উত্তরা হাউসবিল্ডিং এলাকায় সাজিয়েছিলেন স্বপ্নের সংসার। একরুমের সংসারে শাশুড়ি আসায় কিছুদিনের মোহাম্মদপুরে বাবার বাড়িতে যায় অথৈ। পরদিনই গত রবিবার স্বামীর জন্য পহেলা বৈশাখের পাঞ্জাবি কিনে দিতে গিয়ে আর বাবার বাড়িতে ফিরে আসা হয়নি মেয়েটির। চিরতরে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তাকে।
স্বামী পিয়াস (২৬) দাবি করেছেন, শিরিন আক্তার মীনা (অথৈ রানী) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আর অথৈ-এর বড় বোন লীজা ইসলাম শাহিনা অভিযোগ করেছেন, তাকে হত্যা করার পর ওড়না দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন হাউস বিল্ডিংয়ের ১৩ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডের একটি ভবনের পঞ্চম তলার বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
লীজা জানান, আড়াই বছর আগে যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় ঘুরতে গিয়ে অথৈয়ের সঙ্গে পিয়াসের পরিচয়। এক পর্যায়ে সম্পর্ক গাঢ় হলে গত বছরের ১ নভেম্বর উভয়ই কাউকে না জানিয়ে পরিণয়ে আবদ্ধ হয়। পিয়াস শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনটেরিয়র ফ্যাশন ডিজাইন বিষয়ে পড়ে। তার বাড়ি বগুড়া সদরের নিশিন্দারা মণ্ডল পাড়া। বাবার নাম আতাউর রহমান। উত্তরা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে এক রুমে পিয়াস থাকত আর বাকী দুই রুম অন্য বন্ধুদের ভাড়া দিয়েছে। সেখানে প্রায় সময়ই পিয়াসের মা আসতেন। যখন তার মা আসতেন তখন ওই রুমে মা ও ছেলে থাকতেন। আর অথৈকে রুমের বাইরে থাকতে বলা হতো।
পিয়াসের মা অথৈকে বলতেন, তুই তো রাস্তার মেয়ে। তুই আমার ছেলের জীবনটা শেষ করে দিয়েছিস। তুই একটা নর্তকী। তুই বাইরেই থাক। অথৈ তখন বারান্দায় কিংবা ছাদে ঘুমাত। পিয়াসের মা প্রায়ই যৌতুক দাবি করে বলতেন, অমুকের ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে, টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্রসহ নানা জিনিস পেয়েছে। আর তোমাকে বিয়ে করে কি পেয়েছে আমার ছেলে।” মাঝেমধ্যে মা-ছেলে দু’জনে মিলে অথৈকে মারধর করতো।
সর্বশেষ অথৈ গত শনিবার পিয়াসকে বলে, তোমার মা যতদিন এখানে থাকবে ততদিন আমি বাবার বাসায় থাকবো। তোমার মা চলে গেলে আমি আসবো। একথা বলে অথৈ মোহাম্মদপুরে রায়ের বাজার কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন বাবার বাসায় চলে আসেন।
লিজা জানান, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে একটি পাঞ্জাবি কিনে রবিবার সন্ধ্যার পর পিয়াসকে উপহার দিতে গিয়েছিল অথৈ। শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পাঞ্জাবি উপহার দিয়ে বাবার বাসায় ফেরার কথা ছিল। পাঞ্জাবি দেয়ার পর অথৈকে বাসায় নিয়ে যেতে চায় পিয়াস। সে যেতে না চাইলে পিয়াস তাকে (লীজা) ফোন করে বলে, আপু অথৈ তো আমার বাসায় যেতে চাচ্ছে না। কিন্তু মা তাকে নিয়ে যেতে বলেছেন। আপনি ওকে একটু বলে দেন তো, সে যেন আমার সঙ্গে বাসায় যায়।”
জবাবে লীজা বলেছে, ”ও তো ছোট মানুষ। তুমি স্বামী সুতরাং তাকে বুঝিয়ে নিয়ে যেতে পারলে যাও আর না পারলে তাকে জোর কোরো না, মোহাম্মদপুর পাঠিয়ে দাও।” এরপর লীজা ফোনে শুনতে পাচ্ছিলেন, অথৈকে মারধর করছে পিয়াস। তাকে জোর করে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
লীজা বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে পিয়াস ফোন করে বলে, অথৈ অচেতন হয়ে পড়েছে। এখন কি করব? এর কিছুক্ষণ পর রাত ১২টার দিকে পিয়াস আবার ফোন করে বলে, ”আপু অথৈ তো গ্রিলের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।”
লীজা আরো জানান, প্রথমে তাকে উত্তরায় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়।
পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে জানা যায়, অথৈয়ের গলার দুপাশে কালো দাগ রয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কামড়ানোর দাগসহ নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। আর ছোট ওড়না দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় জানালার গ্রিলের সঙ্গে অথৈ ঝুলে ছিল বলে জানিয়েছে পিয়াস।
এ ঘটনায় অথৈ রাণীর বাবা নুরুল আমীন বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
অথৈরা দুই বোন এক ভাই। সবার ছোট অথৈ। তাদের গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন উপজেলায়।
এ ব্যাপারে উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী হোসেন খান বলেন, ”অথৈ রাণীকে হত্যার অভিযোগ এনে পরিবারের দায়ের করা মামলায় (মামলা নম্বর-৯) স্বামী পিয়াস রহমান ও তার মা পারুল বেগমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। ময়না তদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে দেওয়া হয়েছে।”
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন