স্রোতের মতো আসছে ভারতীয় গরু : হতাশ খামারিরা
ঢালাওভাবে ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ করছে। এ খবরে খামারিরা দারুণভাবে হতাশ। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে দেশের সব খামারি ও কৃষক সারা বছর ধরে পশু লালন-পালন করেন। একটু লাভের আশায় তাদের এ পরিশ্রম। কিন্তু আশায় গুড়ে বালি পড়ছে ভারতীয় গরু আসার খবরে।
কৃষকরা বলছেন, ঢালাওভাবে ভারতীয় গরু এলে আমাদেরই সর্বনাশ হবে। লাভের গুড় ভারতীয় গরুতে খেয়ে যাবে। গরুর ব্যবসায় এবারও লোকসান হলে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে।
ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আইনুল হক বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
দেশের কৃষক ও খামারিদের স্বার্থে ভারতীয় গরু যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি মহাপরিচালককেও বিষয়টি দেখার অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সীমান্তের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদেরও বিষয়টির প্রতি নজর দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় ভারতীয় পশু যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পক্ষ থেকে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। দেশটি থেকে গরু আসা অব্যাহত থাকলে কোরবানি পশুর দাম আরও কমবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।
অন্যদিকে ভারত থেকে গরু আসার কারণে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন জেলার খামার মালিকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার অহেদপুর ও রঘুনাথপুর সীমান্তের দুটি বিট বা খাটাল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার গরু আসছে। খাটাল ছাড়াও সীমান্তের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বন্যার পানিতে গরু ভাসিয়ে নিয়ে আসছে চোরাকারবারিরা।
জেলার সর্ববৃহৎ তর্তিপুর পশুহাটসহ মনাকষা পশুহাট, খাসেরহাট, সোনাইচন্ডি পশুহাট, বটতলা হাট, রামচন্দ্রপুর হাটসহ বিভিন্ন পশুহাটে দেশি গরুর পাশাপাশি ভারতীয় গরু বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় গরু থাকায় দেশি গরুর দাম এবার গতবারের চেয়ে অনেক কম বলেও মনে করছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের জুলাই ও আগস্ট- দুই মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে গরু এসেছিল প্রায় ১৩ হাজার। আর এ বছর শুধু জুলাই মাসে গরু এসেছে সাড়ে ৬৮ হাজার। জেলায় এ বছর কোরবানির জন্য যে সংখ্যক দেশি গরু রয়েছে; তা জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরে পাঠানো যাবে বলে খামার মালিকরা জানান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের খামার মালিক হাসানুল হক বান্না জানান, এ বছর ২৬টি গরু কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য মোটাতাজা করেছেন। গরুর দাম ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। গরুর খাবারের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর গরু লালন পালন খরচ বেশি হয়েছে।
জেলার রাজনগর, দেবীগঞ্জ উপজেলার ভাউলাগঞ্জ ও তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান হাটসহ জেলার প্রধান গরুর হাটগুলো এখন ভারতীয় গরুর দখলে। ভারতীয় বড় আকারের গরুর আগ্রাসনে দেশি গরুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষক ও খামার মালিকদের।
শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ নয়, দেশের অন্যান্য জেলায়ও ভারতীয় গরুর আধিক্যের কারণে স্থানীয় হাটগুলোতে বাইরে থেকে আসা বেপারিদের সংখ্যাও কম। উপযুক্ত দাম না পেয়ে ক্ষুব্ধ খামারি আর কৃষকরা গৃহপালিত গরু হাটে নিয়ে যাচ্ছেন না।
পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, জেলার রাজনগর, শালবাহান, ভাউলাগঞ্জসহ বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে অধিকসংখ্যক ভারতীয় গরুর অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়েছে। ফলে কমে গেছে দেশি গরুর দাম।
সদর উপজেলার ৩নং সদর ইউনিয়নের ডুডুমারি এলাকার কৃষক ফয়জুল ইসলাম বলেন, কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য দুটি গরু প্রায় দুই বছর ধরে লালন-পালন করেছি। ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা করে প্রতিটি গরুর দাম হওয়ার কথা। কিন্তু ক্রেতারা ৫০ হাজার টাকার ওপর দাম বলছেন না। এই দামে বিক্রি করলে গরুর পেছনের খরচও উঠবে না।
স্থানীয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- বিজিবির দাবি, পঞ্চগড়ে করিডোরের ব্যবস্থা না থাকায় ভারতীয় গরু কোনো সীমান্ত দিয়েই প্রবেশ করছে না। বিজিবি সদর দফতর থেকে গরু প্রবেশ ঠেকানো বন্ধে কোনো নির্দেশনাও তারা পাননি বলে পঞ্চগড় বিজিবি-১৮ সূ্ত্রে জানা যায়।
জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার কৃষক কামরুজ্জামান। কোরবানির জন্য প্রতি বছরই তিনি চার-পাঁচটি গরু মোটাতাজা করেন। এবারও পাঁচটি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন।
তিনি বলেন, এবার গরু পালনে খরচ অনেক বেশি পড়েছে। গরুর প্রধান খাবার ভূষির দাম অন্যান্য বারের তুলনায় এবার অনেক বেশি। সে হিসেবে গরু মোটাতাজা করতে খরচও অনেক বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ভারতীয় গরু বাজারে এলে আমাদের মতো ছোট খামারিদের সর্বনাশ হবে। লাভের গুড় ভারতীয় গরুতে খেয়ে যাবে। মাঝখানে সর্বস্ব হারাতে হবে আমাদের।
কুষ্টিয়ার কাজী খামারের মালিক কাজী শওকত কোরবানি ঈদ সামনে রেখে এবার ১০০টি গরু প্রস্তুত করেছেন। তিনি বলেন, কোরবানির চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদের দেশি গরুই যথেষ্ট। এ দেশে ভারতীয় গরুর কোনো প্রয়োজন নেই। দেশটি থেকে গরু আনা বন্ধে সরকারকেই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঢালাওভাবে ভারতীয় গরু এলে আমাদের খামারি ও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলেও জানান তিনি।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা ডা. আবদুল হালিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ভারতীয় গরু যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। আশা করছি তারা পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
তিনি আরও বলেন, কিছু ভারতীয় গরু এলেও দেশি গরুর চাহিদা কমবে না।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি গণ অধিকার পরিষদের
জাতীয় পার্টিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিষিদ্ধ করাসহ তিন দাবি জানিয়েছেবিস্তারিত পড়ুন
নুরুল হকের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিলেন খালেদা জিয়া
গণ অধিকার পরিষদের আহত সভাপতি নুরুল হকের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেনবিস্তারিত পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে বন্দুক হামলায় দুই শিশু নিহত, আহত ১৭
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে একটি ক্যাথলিক স্কুলে জানালা দিয়েবিস্তারিত পড়ুন













