হঠাৎ আড়ালে প্রিন্স মুসা

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের আড়ালে চলে যাচ্ছেন। গত কয়েক বছর ধরে তার দেওয়া নতুন নতুন সম্পদের তথ্য খুঁজেছে দুদক। কিন্তু বর্তমানে দুদকের নতুন কমিশন এসে মুসাকে নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
এদিকে মুসার মত তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও আড়ালে চলে যাচ্ছেন। মুসার ছেলে ববি হাজ্জাজ ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচন করতে চাইলেও পরে সরে দাঁড়ান। এখন মুসা তো নয়ই তার পরিবারের সদস্যরাও মিডিয়ার সামনে তেমন আসতে চান না। বর্তমান রাজনীতিতে তাদের তেমন উপস্থিতিও নেই।
দুদক সূত্র জানায়, মুসার দেওয়া তথ্যের ৮০ শতাংশ মিথ্যা, অনুসন্ধান করতে গিয়ে মুসার তেমন সম্পদই পাচ্ছে না দুদক। তিনি ১ লাখ কোটি টাকার মালিক দাবি করলেও এখন পর্যন্ত দুদক তার ১ হাজার কোটি টাকার বৈধ সম্পদও পায়নি।
সূত্র জানায়, মূসা বিন শমসের তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে সুইস ব্যাংকে ১২শ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৭৮ টাকা হিসাবে) রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এই টাকা অর্জনের ব্যাপারে বৈধ কোনো উৎস দেখাতে পারেননি। এছাড়া ঔ সম্পদ বিবরণীতে গাজীপুর ও সাভার এলাকায় তার নামে প্রায় এক হাজার দুই শ’ বিঘা সম্পত্তির কথা উল্লেখ আছে, যা দুদকের অনুসন্ধানে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এজন্য তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ এবং সম্পদের মিথ্যা তথ্য দেয়ায় ২৬ (১) ও (২) ধারায় দুটি মামলা করা হয়। মুসার দেওয়া তথ্য যাচাই করতে দুদকের চাহিদা অনুযায়ী সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু চিঠির উত্তরে ব্যাংকটি জানিয়েছে, সেখানে ওই নামে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। তাই ওই ব্যক্তির নামে কোনো সম্পদও নেই।
মুসা দাবি করেছেন, ৪২ বছর বিদেশে বৈধভাবে ব্যবসার মাধ্যমেই তিনি ১২ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছেন। সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, মিসর, সিরিয়া ও পাকিস্তানসহ অনেক দেশের সরকারি প্রতিরক্ষা ক্রয় সংক্রান্ত পাওনা পরিশোধের অর্থ ওই সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সুইস ব্যাংকে তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। কিন্তু ঐ ব্যংকে ১ ডলারও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
কে এই মুসা?
জানা গেছে, ১৯৪৫ সালে ফরিদপুরে জন্ম গ্রহণ করেন মুসা। এখন তার নাম প্রিন্স ডঃ মুসা-বিন-শমসের হলেও সার্টিফিকেটে নাম এডিএম মুসা। মুসা-বিন-শমসের কিংবা এডিএম মুসা- কোন নামেই ফরিদপুরের মানুষ তাকে চেনে না। এক হাত খানিকটা বিকলাঙ্গ হওয়ায় তার ব্যাপক পরিচিতি ‘নুলা মুসা’ হিসেবেই। ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামটের পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার তথাকথিত পীর ‘সাম্যবাদী তাপস শমসের বাঙ্গালী’ ওরফে শমসের মোল্লার তৃতীয় পুত্র এই নুলা মুসা।
মুসা পরিবারের আদি নিবাস ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ফুলসুতি ইউনিয়নের কাজীকান্দা-হিয়াবলদী গ্রামে। ১৯৬৮ সালে শহরের ঈশান স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়েছিল মুসা। ১৯৮৬ সালে মুসার নামের আগে ‘ডক্টর’ সংযুক্ত হলেও রেকর্ডপত্রে নুলা মুসা ওরফে এডিএম মুসা ওরফে প্রিন্স ডঃ মুসা-বিন-শমসেরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশের কোন প্রমাণ মেলেনি কোথাও। আর তাই ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রিটাও তার মতো রহস্যেঘেরা। বাকপটু মুসার ছিল ইংরেজি ও উর্দু কথোপকথনে পারদর্শিতা। বয় স্কাউটের ডিস্ট্রিক্ট লিডার হিসেবে সে পাকিস্তানের করাচী থেকে একাধিক পুরস্কারও পেয়েছে।
সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পক্ষে মাইকিং কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখলেও মুসার ছিল পাকিস্তানি শক্ত কানেকশন। অভিযোগ আছে, একাত্তরের ২১ এপ্রিল পাকিস্তানি সৈন্যদের ফরিদপুরে ঢোকার ব্যাপারে মানচিত্র ও পথনির্দেশনা দিয়ে নেপথ্যে সহযোগিতা করেছে এই মুসা। তবে মুসাকে একত্তরে পাকিস্থানের সহযোগিতাকারি বলা হলেও তিনি বার বার বলে আসছেন তিনি বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত পাকিস্থানের পক্ষে কাজ করার মত তেমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি মুসার বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত, গত ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর দুদক প্রথম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ২০১৫ সালের ৭ জুন মুসা দুদকে তার সম্পদের হিসাব দেয়। পরবর্তিতে ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি মুসাকে তলব নোটিশ পাঠিয়ে ১৩ জানুয়ারি বুধবার মুসার সম্পদের হিসাব চায় দুদক। কিন্তু একদিন আগে মুসা অসুস্থতার কথা বলে দুই মাস সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে জানুয়ারির ২৮ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছিল দুদক।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদবিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকবির ম্যুরাল থেকে কালি মুছে দিল উপজেলা প্রশাসন
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরালে কালি দিয়ে মুখবিস্তারিত পড়ুন

ফখরুল: ইউনূস–মোদির বৈঠক আশার আলো দেখাচ্ছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন