হাজারো মানুষ দেখলেও এগলো না কেউ, ৩ ঘণ্টা পথে পড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু
রাস্তায় বেরিয়ে হঠাৎ অসুস্থবোধ করলেন অজ্ঞাত ওই বৃদ্ধ। বসে পড়লেন সেতুর রেলিংয়ে হেলান দিয়ে। বন্ধ চোখ, ঘাড় হেলানো। ওই ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে হাজারো মানুষ। ইশারা দিয়ে অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এগিয়ে আসল না কেউ।
শেষ পর্যন্ত এভাবে তিন ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অমানবিক এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন ওই বৃদ্ধ। সোমবার ভারতের কলকাতার হাওড়া ব্রিজের অদূরে বঙ্কিম সেতুতে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। খবর আনন্দবাজার’র।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টা দিকে হাওড়া ব্রিজের দিক থেকে হেঁটে বঙ্কিম সেতুর দিকে আসছিলেন ওই বৃদ্ধ। সেতুর রেলিংয়ে হেলান দিয়ে প্রথমে বসে পড়েন তিনি। ঘণ্টা দুয়েক এভাবে বসে থাকার পরে শুয়ে পড়েন ফুটপাতেই।
এসময় তার আশপাশ দিয়ে যাতায়াত করছেন পথচারীরা। কেউ কেউ ভেবেছেন, গরমে সাময়িক অসুস্থতার কারণে বৃদ্ধ এভাবে শুয়ে আছেন। তাদের কেউ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু কেউ বৃদ্ধের মুখে সামান্য পানিও তুলে দেননি।
ওই ফুটপাথেই ডালা নিয়ে পেয়ারা বিক্রি করতে বসেছিলেন সাবিরুদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘ওই বৃদ্ধ যে অসুস্থ বুঝতে পারছিলাম। ওর মুখ দিয়ে গ্যাঁজলার মতো বেরোচ্ছিল। আমার গামছা দিয়ে মুখ মুছিয়ে গামছাটা কোমরে জড়িয়ে দিয়ে এসেছিলাম। আমি গরিব মানুষ বাবু, আর কী করতে পারি?’
সাবিরুদ্দিনের আফসোস- তখন বহু মানুষ ওই বৃদ্ধের পাশ দিয়ে হেঁটে গেছেন। তার কাছে যারা পেয়ারা কিনতে এসেছিলেন, তাদেও কয়েকজনকে তিনি সাহায্য করতেও বলেছিলেন। কিন্তু কেউই কিছু করেননি। ওই ফল বিক্রেতা জানান, প্রায় দু’ঘণ্টা বসে থাকার পর ফুটপাথে শুয়ে পড়েন ওই বৃদ্ধ। তারও প্রায় আধ ঘণ্টা পরে থানার একটি টহল ভ্যান আসে। অভিযোগ, ওই ভ্যানের পুলিশকর্মীরাই জানিয়ে দেন, ওই বৃদ্ধ মারা গেছেন। তাই ডাক্তার না ডেকে খবর দেওয়া হয় থানায়।
এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে ওই বৃদ্ধকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। গত বছর ছয়টি অত্যাধুনিক ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পেয়েছিল হাওড়া সিটি পুলিশ। উদ্দেশ্য ছিল, পথে-ঘাটে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষকে সাহায্য করা এবং দুর্ঘটনায় জখমদের যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নেওয়া।
এঘটনার পরে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্সের কার্যকারিতা কি তাহলে খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ? ওই বৃদ্ধ এভাবে পড়ে থাকলেও কেন পুলিশের ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল না? কেনই বা তিন ঘণ্টা পরে পুলিশ জানতে পারল?
হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শহরের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়িয়ে থাকে। আসলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বুঝতে পেরেছিল আগেই ওই বৃদ্ধ মারা গেছেন, তাই আর অ্যাম্বুল্যান্স ডাকা হয়নি। ’
হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) দেবব্রত দাস বলেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন