মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে হিলারি ক্লিনটনের জয়ের সম্ভাবনাকে ঘিরে উচ্ছ্বাস ছিল বিএনপিতে। বিএনপির কর্মী সমর্থক এমনকি শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা হিলারির জয়ের সম্ভাবনায় বাংলাদেশেও কিছু একটা ঘটার আশাবাদের কথা জানিয়েছিলেন।

কেবল কর্মী সমর্থকরা নয়, বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাউকে কাউকেও একই ধরনের উচ্ছ্বাস দেখাতে দেখা যায়। বিএনপির বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন তার ফেইসবুক পেইজে এমনও বলেন যে, ২০১৭ সাল হবে হিলারি ক্লিনটন ও খালেদা জিয়ার।

তবে নির্বাচনের ফলাফল হিলারির বিপক্ষে চলে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি সমর্থকদের উৎসাহে ভাটা পড়ে। হিলারির জয়ের আশায় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের যারা সরব ছিলেন তারা অনেকটা নিশ্চুপ।

হিলারির জন্মদিনে বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে দলের সহসভাপতি সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদের শুভেচ্ছা জানানো নিয়েও নানা কথা হয়েছে বিএনপি শিবিরে। এই ছবি প্রকাশের পরও হিলারির সঙ্গে বিএনপির সুসম্পর্কের গুঞ্জনে মাতেন দলটির কর্মী-সমর্থক আর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যেও যারা এক্ষেত্রে এগিয়ে ছিলেন তারাও সূর পাল্টে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন হয়েছে বলে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।

বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা জানিয়েছিলেন, গ্রামীণব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে হিলারির সুসম্পর্ক আছে বলে প্রচার আছে। আর ইউনুসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শীতল সম্পর্ক রয়েছে। হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে তাকে দিয়ে শেখ হাসিনার ওপর চাপ দেয়া যাবে বলেই ধারণা করে আসছিলেন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। আর হিলারির প্রচারের ভিডিওতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার দেখা হওয়ার ছবি ব্যবহার করা নিয়েও নানা জল্পনা-কল্পনায় মেতেছিলেন বিএনপির কর্মী-সমর্থক এমনকি শীর্ষস্থানীয় নেতারা। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খানও এই বিষয়টি নিয়ে ছিলেন উচ্ছ্বসিত।

২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিজেপির নরেন্দ্র মোদি নির্বাচিত হওয়ার পরও এমন উচ্ছ্বাস ছিলো বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে। এমনকি বিজেপির জয়ের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিষ্টি বিতরণও হয়েছিল।

ট্রাম্পের অভাবনীয় জয় সারা বিশ্বের মতো হতবাক করেছে বিএনপিকেও। সেই সঙ্গে করেছে হতাশ। তবে হিলারির জয়ের সম্ভাবনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির নেতা-কর্মী আর সমর্থকরা যেভাবে উচ্ছ্বাস দেখিয়েছিলেন, তার পরাজয়ের পর আর সেখাবে হতাশা দেখাননি তারা।

এখন বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বাংলাদেশ নিয়ে তাদের অবস্থানে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। কাজেই সেখানে কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলো, না হলো তাতে বিএনপির বা বাংলাদেশের কিছু যায় আসে না।

বুধবার দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।তারা ব্যক্তিগতভাবে ঢাকাটাইমসকে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বের শক্তিধর দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে সবার কৌতুহল ছিল। আমরাও সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম কে দেশটির নেতৃত্বে আসে দেখার জন্য। কিন্তু খুব লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো নির্বাচনে হেরে গেলেও ডেমোক্রেটিক দলের হিলারি ক্লিনটনকে সঙ্গে সঙ্গে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।এটাই কিন্তু গণতান্ত্রিক রাজনীতির ঐহিত্য। তবে অন্যদেশে কে ক্ষমতায় আসলো তাতে আসলে আমাদের লাভ ক্ষতির কিছু দেখছি না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ট্রাম্পের যোগ্য নেতৃত্বে আগামীতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরো জোরালো হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক সমস্যা চলছে তা কাটিয়ে উঠতে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ভুমিকা রাখবেন।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও মনে করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’

বাংলাদেশের সবশেষ সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তন হওয়ার কারণ নেই এমন দাবি করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্টের নির্বাচন থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা নেয়ার আছে। কারণ আমাদের দেশে তো নির্বাচন হয় না।’

আর বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘মার্কিন নির্বাচন দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিত। সেখানে গায়ের জোরের বিষয় নেই। শাসক নয়,জনগণই বড়। সেখানে জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে।’

হিলারির হারের আগে ও পরে আসাদুজ্জামান রিপনের বক্তব্য

গত দুইদিন আগে ফেইসবুকে হিলারি ও বেগম খালেদা জিয়ার করমর্দন করা একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন বিএনপির বিশেষ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ড. আসাদুজ্জামান রিপন। ছবিটির ক্যাপশনে তিনি লিখেছিলেন, ইনশাল্লাহ ২০১৭ সালে জাতি বেগম খালেদা জিয়া ও হিলারি ক্লিনটনের একই ঐতিহাসিক ছবি দেখবেন। শুরু হবে নতুন যুগের।‘

অবশ্য বুধবার তিনি স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। যেখানে ওবামা সরকার, প্রশাসন কোনো ধরণের হস্তক্ষেপ করেনি। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা রেখেছে। মোট কথা যুক্তরাষ্ট্রে জনগণের বিজয় হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা নাসিমের টিপ্পনী

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোটের আগে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ এবং হিলারির হারের পর চুপ হয়ে যাওয়া নিয়ে বিএনপিকে খোঁচা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির আশা ছিল হিলারি ক্লিনটন জিতবে। এখন ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর বিএনপি শুয়ে পড়েছে।’

নাসিমের এই বক্তব্যের অবশ্য জবাব দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, ‘ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ায় আমরা শুয়ে গেলে তারা কি দাঁড়িয়ে গেছেন?’।